রোহিঙ্গা শরণার্থীদের কারণে উভয় দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে বলে মেনে নিল ভারত ও বাংলাদেশ সরকার।
রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে আলোচনা করতে গত কাল বাংলাদেশের বিদেশসচিব শাহিদুল হক দিল্লিতে ভারতের বিদেশসচিব এস জয়শঙ্কর ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভালের সঙ্গে বৈঠক করেন। হক আজ বলেন, ‘‘রোহিঙ্গা সমস্যা গোটা উপমাহদেশের ভারসাম্য নষ্ট করে দেওয়ার শক্তি রাখে।’’ তাই উভয় দেশের নিরাপত্তা বাহিনী রোহিঙ্গা-জঙ্গি যোগাযোগের বিষয়টি নিয়ে যেমন একজোট হয়ে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়েছে, তেমনই মায়ানমার সরকার যাতে রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে বাধ্য হয়, সে জন্য সু চি সরকারের উপর চাপ বাড়াতে নয়াদিল্লিকে অনুরোধ করেছে ঢাকা।
এর আগে ১৯৭৮ ও ১৯৯২-৯৩ সালেও রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ঢল নেমেছিল বাংলাদেশে। কিন্তু সে বারের সঙ্গে এ বারে কিছু পার্থক্য রয়েছে বলেই মনে করছে ঢাকা। শাহিদুল হকের দাবি, ‘‘এ বার রোহিঙ্গাদের বাড়ি-ঘর খেতের ফসল জ্বালিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে ওই শরণার্থীরা কোথায় ফিরবে তা খুব স্পষ্ট নয়।’’ অনেকে বলছেন, কক্সবাজার সংলগ্ন রাখাইন প্রদেশে বিশেষ শিল্প তালুক গড়ার জন্যই এ ভাবে ধনে-প্রাণে উচ্ছেদ করা হচ্ছে রোহিঙ্গাদের। ফলে সু চি সরকার শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার আশ্বাস দিলেও, বাস্তবে তা কতটা ফলপ্রসু হবে— তা নিয়ে সন্দিগ্ধ হাসিনা সরকার।
বাংলাদেশ থেকে শরণার্থীদের মায়ানমারে ফেরত যাওয়ার প্রক্রিয়া তদারকির জন্য ইতিমধ্যেই একটি যৌথ কর্মগোষ্ঠী গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দু’দেশ। কিন্তু বিষয়টির সঙ্গে যে হেতু কয়েক লক্ষ মানুষের জীবন জড়িত, তাই বাংলাদেশ চাইছে আন্তর্জাতিক মহলের নজরদারিতে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফেরানো হোক। আর সেই কাজে উপমহাদেশের অন্যতম শক্তিধর রাষ্ট্র ভারতের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করছে বাংলাদেশ।
তবে নিরাপত্তার বিষয়ে ঢাকা উদ্বিগ্ন। শহিদুলের কথায়, ‘‘যেখানে এত বড় সংখ্যায় মানুষের স্থানান্তরের প্রশেন, সেখানে মৌলবাদী তৎপরতা বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত নিরাপত্তায় কোনও ঢিলে দেয়নি।’’ মানবিক কারণে শরণার্থীদের জায়গা দেওয়া হলেও, বাংলাদেশের মাটিকে রোহিঙ্গা জঙ্গিরা যাতে সন্ত্রাসের কাজে ব্যবহার না করতে পারে, সে দিকে কড়া নজর রাখছে হাসিনা প্রশাসন। কিন্তু পরিস্থিতি আশু পরিবর্তন না হলে আগামী দিনে জঙ্গি তৎপরতা বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করেছে উভয় দেশই। আর তাই রোহিঙ্গা সন্ত্রাস রুখতে তথ্য আদান-প্রদানেও নীতিগত ভাবে সম্মত হয়েছে দু’দেশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy