Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিদেশি রামে বিপাকে পড়তে পারে হিন্দুত্ববাদ

ওয়াকিবহাল শিবির বলছে, ‘আশঙ্কা’ অন্য জায়গায়। যে রামকে সামনে রেখে গোবলয়ে হিন্দুত্বের প্রসার ঘটানো হয়েছে, সেই রাম চরিত্রে না কালির ছিটে লাগে!

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ০২:৩৫
Share: Save:

খাস ‘রাম জন্মভূমি’-তেই কি রামের গায়ে ছিটে লাগতে চলেছে ?

কেন্দ্রীয় সরকারি সংস্থা ‘ইন্ডিয়ান কাউন্সিল ফর কালচারাল রিলেশন’ (আইসিসিআর) এর উদ্যোগে আগামী ১৭ তারিখে দেশজুড়ে শুরু হচ্ছে আন্তর্জাতিক রামায়ণ উৎসব। উদ্বোধন করবেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ, যিনি বিজেপির সভাপতিও। আইসিসিআর জানাচ্ছে, বেশ কিছু বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে সাংস্কৃতিক কূটনীতি গড়তে রামায়ণকেই সেরা মাধ্যম বলে মনে করছে কেন্দ্র। তাদের দেশজ রামায়ণের ঝুলি নিয়ে আসছে তাইল্যান্ড, কাম্বোডিয়া, মালয়েশিয়া, ফিজি, বাংলাদেশ ও মরিশাসের মতো দেশ। রামায়ণের বিভিন্ন অংশ থেকে গান, নৃত্যনাট্যের প্রদর্শনী হবে দিল্লি, লখনউ, পুণের পাশাপাশি অযোধ্যাতেও।

ওয়াকিবহাল শিবির বলছে, ‘আশঙ্কা’ অন্য জায়গায়। যে রামকে সামনে রেখে গোবলয়ে হিন্দুত্বের প্রসার ঘটানো হয়েছে, সেই রাম চরিত্রে না কালির ছিটে লাগে! কারণ এই রাম একান্ত ভাবেই হিন্দুত্বের প্রধান পুরুষ, ন্যায়ের প্রতীক। বিশেষজ্ঞদের মতে, সেই রাম আসলে বাল্মিকীর রাম, যে চরিত্র মনুসংহিতার সঙ্গে ছত্রে ছত্রে মিলে যায়। সাক্ষাৎ বিষ্ণুর অবতার এই রাম। নিছক রাজনৈতিক স্বার্থে কেন তিনি নির্দোষ বালিকে অপ্রস্তুত অবস্থায় পিছন থেকে হত্যা করেছিলেন, কেনই বা স্ত্রী সীতাকে অগ্নিপরীক্ষার মধ্যে ফেললেন– এই সব অস্বস্তিকর প্রশ্নের উত্তর সেখানে মেলে না।

কিন্তু ইন্দোনেশিয়া, কাম্বোডিয়া, তাইল্যান্ড, মায়নমারের রাম চরিত্র দেশ কালের ভিন্নতায় অনেকখানিই আলাদা। রামে আরোপিত দেবত্ব সেখানে অনেক ক্ষেত্রেই খাটো। প্রশ্ন উঁকি দিচ্ছে, এমন একটি মুক্ত আন্তর্জাতিক মঞ্চে রামায়ণ আদানপ্রদান কি গোঁড়া হিন্দুত্ববাদীদের কাছে কিছুটা বিপজ্জনক নয়? আইসিসিআর-এর প্রেসিডেন্ট বিনয় সহস্রবুদ্ধে যদিও এই প্রশ্নের উত্তরে বলছেন, ‘‘রামচন্দ্র এমন এক পুরুষ, যাঁর মহিমা গোটা বিশ্ব স্বীকার করে। অন্য দেশে এর সামান্য প্রকারভেদ হয়তো রয়েছে, কিন্তু তাতে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।’’

কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে ‘সামান্য’ নয়, বাল্মিকীর থেকে অন্য দেশের রাম অনেকটাই পৃথক। বিশেষজ্ঞদের মতে, শুধু তো সংস্কৃতি বা লোককথা নয়। ধর্মের সঙ্গেও বিস্তর বদলেছে বাল্মিকীর রামায়ণ। দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার মূল ভূখণ্ড যখন বৌদ্ধধর্মের শরণ নেয়, রামই তখন হয়ে যান বোধিসত্ত্ব। বুদ্ধের যাবতীয় গুণাবলী আরোপিত হয় রামে। বীরত্বের নিরিখে অনেক বেশি গুরুত্ব পেতে থাকেন হনুমান। আবার মালয় দ্বীপের মুসলিম রাজসভাগুলির সাহিত্যচর্চায় আরবি হরফে খোঁজা হয়েছে হিন্দু-বৌদ্ধ শিকড়কে। ১৩ থেকে ১৫ দশকের মাঝে রচিত হয় সেখানকার রামায়ণ যার নাম ‘হিকায়ৎ সেরি রামা’।

মালয়ের সেই প্রাচীনতম পাণ্ডুলিপিটি এখন রাখা রয়েছে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে। বাল্মিকীর রামায়ণের সঙ্গে তার কোনও মিল নেই। দক্ষিণ ভারতের জনপ্রিয় লোককথাগুলির সংমিশ্রণে তৈরি এই ‘হিকায়ৎ সেরি নামা’-য় লক্ষ্মণের সাহস এবং বীরত্বকে রামের তুলনায় অনেক বেশি গৌরবান্বিত করা হয়েছে। আবার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মায়নমারের কিছু অংশে জৈন সংস্করণে রাম অহিংসার পূজারি। লক্ষ্মণকেই অগত্যা রাবণ বধ করতে হয়। লক্ষ্মণ আর রাবণের স্থান হয় নরকে। রাম হয়ে যান জৈন সাধু এবং শেষ পর্যন্ত মোক্ষ লাভ করেন তিনি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE