Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

রাতারাতি জেলে ‘ছোটে সরকার’, হাঙ্গামা বিহারে

বাহুবলী ‘ছোটে সরকার’ তথা মোকামার জেডিইউ বিধায়ক অনন্ত সিংহ জেলে ঢুকতেই দক্ষিণ বিহার জুড়ে শুরু অঘোষিত হরতাল। পাশাপাশি, বেউর জেলে হাঙ্গামার শঙ্কায় সেখানে নিরাপত্তাও জোরদার করা হল। রাতারাতি বদলি করা হল বেউরের বর্তমান জেলারকেও।

গ্রেফতারের পর ‘বাহুবলী’ অনন্ত সিংহ। বুধবার। ছবি: শ্যামলী দে।

গ্রেফতারের পর ‘বাহুবলী’ অনন্ত সিংহ। বুধবার। ছবি: শ্যামলী দে।

দিবাকর রায়
পটনা শেষ আপডেট: ২৬ জুন ২০১৫ ০৪:১৫
Share: Save:

বাহুবলী ‘ছোটে সরকার’ তথা মোকামার জেডিইউ বিধায়ক অনন্ত সিংহ জেলে ঢুকতেই দক্ষিণ বিহার জুড়ে শুরু অঘোষিত হরতাল। পাশাপাশি, বেউর জেলে হাঙ্গামার শঙ্কায় সেখানে নিরাপত্তাও জোরদার করা হল। রাতারাতি বদলি করা হল বেউরের বর্তমান জেলারকেও।

অনন্ত সিংহকে গত রাতে গ্রেফতার করেছে পটনা পুলিশ। হাঙ্গামা এড়াতে রাতে তোলা হয় দানাপুর এসিজেএমের আদালতে। বিচারক তাঁকে ১৪ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন। আদালত থেকে অনন্ত সিংহকে বেউর জেলে নিয়ে যাওয়ার জন্য হাজির ছিলেন জেলার আনন্দদেব সিংহ। আজ দুপুরে আনন্দদেবকে বদলি করে ঔরঙ্গাবাদের জেলে পাঠানো হয়েছে। তাঁর বদলে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে সহকারী জেলার শামসের খানকে। প্রশাসন ও জেল কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা, জেলে হামলা চালাতে পারে অনন্তের অনুগামীরা। সেই কারণে বেউর জেলে অতিরিক্ত পুলিশ ও আধা-সামরিক বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে।

‘ছোটে সরকার’-এর গ্রেফতারির খবর ছড়িয়ে পড়তেই অনন্তের অনুগামীরা রেল এবং সড়ক অবরোধ করে। রেল অবরোধের জেরে দিল্লি বা হাওড়া থেকে বিহারের উপর দিয়ে যাওয়া-আসা করা ট্রেন আটকে পড়ে। পটনা-ঝাঁঝা রেল লাইনের ট্রেন আটকে যায়। কয়েক জায়গায় বাহুবলী-সমর্থকেরা ট্রেনে আগুন লাগানোর চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ। রেল লাইনের ক্লিপ খুলে দেওয়া হয়। লক্ষাধিক যাত্রী আটকে পড়েন। বাঢ় ও মোকামা স্টেশনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ৩১ নম্বর জাতীয় সড়কের বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ করা হয়। সেখানেও বিশেষ নিরাপত্তা বাহিনী মোতায়েন আছে।

অনন্ত সিংহের গ্রেফতারি নিয়ে রাজ্য-রাজনীতিতে শোরগোল শুরু হয়। যাদব নেতা লালুপ্রসাদের চাপে এই ভূমিহার নেতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অনন্তের অনুগামীরা। চাপের কথা অস্বীকার করেননি লালুপ্রসাদ। তিনি বলেন, ‘‘কারও বাচ্চাকে খুন করা হবে, সাংবাদিকদের মারধর করা হবে, এ সব মেনে নেওয়া হবে না।’’ একটি অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার বলেন, ‘‘কোনও ভাবেই বিহারে জঙ্গলরাজ কায়েম হতে দেব না। বিহারে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করেছি। আইনের শাসনই থাকবে।’’

যে মামলায় অনন্ত সিংহকে ধরা হয়েছে তা নিয়ে কিছু প্রশ্ন উঠেছে। বিট্‌হা এলাকার এক ঠিকাদারকে অপহরণের অভিযোগে গত নভেম্বর মাসেই গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয় অনন্তের নামে। প্রায় আট মাস ধরে সেই মামলায় তাঁকে কেন গ্রেফতার করা হয়নি—প্রশ্ন তা নিয়েও। দিন কয়েক আগে পটনার তখনকার এসএসপি জিতেন্দ্র রানা অনন্তের গ্রেফতারি পরোয়ানার বিষয়টি প্রকাশ্যে আনেন। এর পরেই তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তাঁর জায়গায় দায়িত্ব দেওয়া হয় এনআইএ-র ডেপুটেশন থেকে ফেরা বিশাল বৈভবকে। গ্রেফতার করার আগে অনন্ত সিংহের সরকারি নিবাস, ১ নম্বর মল রোডে বৈভব তল্লাশি চালান। বিরোধীদের বক্তব্য, নীতীশ কুমারের মদতেই এতদিন রাজত্ব চালিয়েছেন এই ‘ছোটে সরকার’।

দক্ষিণ বিহারের ভূমিহার সম্প্রদায়ের নেতা অনন্ত সিংহের প্রভাব রয়েছে। কিছু দিন আগে পবন যাদব ওরফে পুটুস নামে এক যুবককে খুনের অভিযোগ ওঠে অনন্তের বিরুদ্ধে। দীর্ঘদিন ধরে ওই এলাকায় ভূমিহারদের সঙ্গে যাদবদের লড়াই চলছে। লালুপ্রসাদের সঙ্গে জোটের পরে সেই লড়াই অন্য মাত্রা পায়। লড়াইয়ের প্রথম রাউন্ডেই জেডিইউ বিধায়ক অনন্তকে গ্রেফতারের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। প্রথমত, যাদব সম্প্রদায়ের আস্থা যাতে লালুপ্রসাদ তথা জনতা জোটের উপরে থাকে এবং দ্বিতীয়ত, রাজ্যের সাধারণ মানুষের কাছে সরকারের ভাবমূর্তি ফেরানো যায়। অনন্ত সিংহের গ্রেফতারের পরে রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝি বলেন, ‘‘আমাকে খুন করার হুমকি দিয়েছিল অনন্ত। ওকে আগেই গ্রেফতার করা উচিত ছিল।’’

এই পরিস্থিতিতেই লালুপ্রসাদের সঙ্গে নীতীশ কুমারের জোটের প্রতিবাদে জেডিইউ ছাড়লেন প্রাক্তন সাংসদ রঞ্জন যাদব। একদা লালুর অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ রঞ্জন লালুর সঙ্গে মতান্তরের জেরেই আরজেডি ছেড়ে জেডিইউয়ে যোগ দেন। সাংসদও হন। দল ছাড়ার কথা ঘোষণা করে তিনি জানান, ‘‘দু’দিন আগে পদত্যাগ পত্র নীতীশ কুমারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি।’’ তাঁর কথায়, ‘‘লালুপ্রসাদের জঙ্গলরাজ ফিরে আসুক, বিহারের মানুষ তা চায় না। এই জোট করে বিহারের মানুষকে ধোঁকা দিয়েছেন নীতীশ কুমার।’’ রঞ্জনের বিজেপিতে যোগ দেওয়া নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Bihar JD-U Anant Singh kidnapping
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE