Advertisement
০২ মে ২০২৪

‘প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও বাঁচিয়েছিলাম পড়ুয়াদের’

জেএনইউ। ফাইল চিত্র।

জেএনইউ। ফাইল চিত্র।

দীপাঞ্জন চক্রবর্তী
শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০২০ ১১:০০
Share: Save:

ভোরের আলো ফুটব ফুটব করছে। কিন্তু চার দিক তখনও অন্ধকার। আমি দৌড়চ্ছি প্রাণপণে, সঙ্গে জেএনইউয়ের সিকিয়রিটির জনা পাঁচেক লোক। এক বিরাট সংগঠিত ভিড় শেয়াল-খোঁজার মতো খুঁজে বেড়াচ্ছে জেএনইউয়ের ছাত্র সংসদের (জেএনইউএসইউ) পদাধিকারীদের। মুখে ‘জয় শ্রীরাম’ ধ্বনি আর সঙ্গে হুমকি, ‘‘আজ জেএনইউকো ইন্দোনেশিয়া বানানা হ্যায়। বামপন্থীদের রক্তে স্নান করাব জেএনইউকে।’’

সেটা ১৯৯৯ সালের এপ্রিল। সদ্য সদ্য এনএসজি-র ডেপুটেশন কাটিয়ে যোগ দিয়েছি ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিশ্ববিদ্যালয়ে, তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী লালকৃষ্ণ আডবাণীর অনুরোধে। আগের দীর্ঘ দু’দশকে সর্বোচ্চ স্তরের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোয় কাজ করার সুবাদে অভিজ্ঞতা হয়েছে হিংসাত্মক ভিড় সামলানোর। কাজ করেছি অযোধ্যায়। দেখেছি ৬ ডিসেম্বরে ধর্মান্ধ গুন্ডাদের উন্মাদনা। কিন্তু ১৯৯৯-এর সেই ভোররাতে রক্তপিপাসু ছাত্র ও উন্মত্ত বহিরাগতদের দেখে চিন্তিত হয়ে পড়েছিলাম জেএনইউএসইউ-এর ছেলেমেয়েদের জন্য। কোনও মতে প্রাণে বাঁচাই তাঁদের। নিজে গুরুতর আহত হয়েছিলাম এবং দিন দশেক ভর্তি ছিলাম নার্সিংহোমে।

সে দিন নিজেদের প্রাণের ঝুঁকি নিয়েও জেএনইউয়ের সম্মানহানি হতে দিইনি। কিন্তু আজ সব জায়গা থেকেই আমরা শুনতে পাচ্ছি, জেএনইউয়ের নিরাপত্তা কর্মীরাও নাকি হাত লাগিয়েছিল গত কালের ঘৃণ্য হামলায় মুখোশধারী গুন্ডাদের সঙ্গে।

একটা কথা না বললে অন্যায় হবে, আমার সময়কালে (১৯৯৯-২০০৪) আমি কিন্তু একটিও ফোন পাইনি নর্থ ব্লক অর্থাৎ তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আডবাণীর অফিস থেকে। আর আজ শুনতে পাচ্ছি, অমিত শাহ নাকি নিয়ন্ত্রণ করছেন জেএনইউকে। এটা কি আত্মবিশ্বাসের অভাব নাকি প্রতিবাদের আওয়াজকে ভয় পাওয়া? না হলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কী কাজ ওখানে? আমি নিজে এক জন প্রাক্তন সশস্ত্র বাহিনীর আধিকারিক হয়ে জানি, নিরন্তর কী নির্লজ্জ চেষ্টা চলছে ভারতের নিরাপত্তা ব্যবস্থার রাজনীতিকরণের। বেশ কিছুটা সফলও হয়েছে গেরুয়া শিবির। তার নিদর্শন প্রতিবাদ-আন্দোলন নিয়ে বিপিন রাওয়তের সাম্প্রতিক বক্তব্য।

যে দিন শুনেছিলাম, বর্তমান উপাচার্য বিশ্ববিদ্যালয় পরিসরে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্ক বসাতে চাইছেন দেশপ্রেম শেখানোর জন্য, সে দিনই বুঝেছিলাম এই যুদ্ধবাজ মনোভাবের দাম দিতে হবে জেএনইউকে। কিন্তু আমার দৃঢ় বিশ্বাস, যুদ্ধবাজ মনোভাব শেষ কথা বলবে না, বলতে পারে না। আতঙ্ক ছড়িয়ে ছাত্রসমাজকে দমিয়ে রাখা যায় না। শাসক এ বার ভয় পেতে শুরু করেছে। তার উদাহরণ এই নির্লজ্জ আক্রমণ!

(লেখক: জেএনইউ উপাচার্যের প্রাক্তন নিরাপত্তা উপদেষ্টা)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

JNU JNU Violence
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE