মনদীপ সিংহ
ছুটি নিয়ে দীপাবলিতেই বাড়ি আসার কথা ছিল ছেলের। দীপাবলিতেই বাড়ি ফিরলেন তিনি। তবে কফিনবন্দি হয়ে।
দীপাবলিতেই গৃহপ্রবেশের কথা ছিল তাঁর। সেই ইচ্ছেও পূর্ণ হল। কিন্তু কফিনবন্দি হয়ে।
রবিবার গোটা দেশ মেতে উঠেছে আলোর উৎসবে। কিন্তু সেই আলোর ছটা পৌঁছয়নি হরিয়ানার কুরুক্ষেত্র জেলার গ্রাম আন্থেরিতে। কারণ শুক্রবার এই গ্রামেরই ছেলে জওয়ান মনদীপ সিংহ (ভুল করে প্রথমে যাঁকে মনজিৎ সিংহ বলে শনাক্ত করেছিলেন এক সেনা অফিসার) কাশ্মীরের কুপওয়ারা জেলার মাচিল সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখার কাছে প্রাণ দিয়েছেন পাক মদতে পুষ্ট জঙ্গিদের গুলিতে। ফিরে যাওয়ার সময় যাঁর মাথা কেটে দেয় জঙ্গিরা। রবিবার গ্রামে এসে পৌঁছয় মনদীপের দেহ। গ্রামবাসীরা জানিয়ে দিয়েছেন, শহিদ জওয়ানের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এ বছর দীপাবলি পালিত হবে না গ্রামে। শুধু মাত্র মনদীপের স্মরণে গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে জ্বলবে একটি করে প্রদীপ।
আজ পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় শেষকৃত্য সম্পন্ন হয় ১৭ শিখ লাইট ইনফ্র্যান্টি বাহিনীর নিহত জওয়ান মনদীপ সিংহের। কয়েকশো গ্রামবাসী হাজির ছিলেন তাঁর শেষকাজে। তাঁরা স্লোগান তোলেন, ‘শহিদ মনদীপ অমর রহে’। শোনা যায় পাক বিরোধী স্লোগানও।
এই ভাবে এক জন জওয়ানকে খুন এবং তাঁর মাথা কেটে নেওয়ার ঘটনায় ক্ষোভে ফুটছেন মনদীপের পরিবার এবং গ্রামবাসীরা। তাঁদের দাবি, কেন্দ্র এর বদলা নিক এবং পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দিক। মনদীপের বাবা ফুল সিংহ বলেন, ‘‘ছেলের এই আত্মত্যাগে আমরা গর্বিত। কিন্তু মনদীপের মাথা কেটে নেওয়ার মতো অমানবিক আচরণের জন্য পাকিস্তানকে শিক্ষা দিতেই হবে।’’ এ দিন মনদীপের গ্রামে আসেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খট্টর, কয়েক জন সেনা-কর্তা এবং স্থানীয় প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। মনদীপের পরিবারকে সহানুভূতি জানিয়ে খট্টর বলেন, ‘‘আমরা অবশ্যই এর বদলা নেব। পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়া হবে।’’ মনদীপের পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা ক্ষতিপূরণ এবং তাঁর পরিবারের এক জনকে চাকরি দেওয়ার কথাও ঘোষণা করেন হরিয়ানার মুখ্যমন্ত্রী।
ফুল সিংহের তিন ছেলের মধ্যে সব চেয়ে ছোট মনদীপ। ২০১৪ সালে ৩০ বছরের মনদীপের বিয়ে হয় প্রেরণার সঙ্গে। প্রেরণা হরিয়ানা পুলিশের কনস্টেবল। এ দিন কান্নায় ভেঙে পড়ে সদ্য বিধবা বলেন, ‘‘এই ভাবে প্রতিদিন আমরা সেনাদের মরতে দেখতে পারব না।’’ ছেলের মুখে যখন আগুন দিচ্ছেন বাবা ফুল সিংহ, তখন জ্ঞান হারান প্রেরণা। কয়েক জন সেনা জওয়ান তাঁকে ধরে ফেলেন।
এ দিন মনদীপই ঘুরেফিরে এসেছে পড়শি, আপনজনদের কথায়। প্রতিবেশীরা জানান, মনদীপের মুখে হাসি লেগেই থাকত। দাদা সন্দীপ সিংহ বলেন, ‘‘গত বছরই নতুন বাড়ি তৈরির কাজ শুরু করেছিলেন ভাই। ঠিক ছিল দীপাবলিতে এসে গৃহপ্রবেশ করবেন।’’ সেই ইচ্ছেটা অবশ্য পূরণ হয়েছে মনদীপের। আজ অম্বালা ক্যান্টনমেন্ট থেকে মনদীপের দেহ নিয়ে হেলিকপ্টারে এসে নামে কুরুক্ষেত্র বিশ্ববিদ্যালয়ে চত্বরের হেলিপ্যাডে। সেখান থেকে তাঁর দেহ নিয়ে আসা হয় তাঁর নতুন বাড়িতেই। সেই নতুন বাড়ি থেকেই শেষ যাত্রায় বেরিয়ে পড়লেন মনদীপ।
‘গৃহপ্রবেশ’ হলেও যেখানে থাকা হল না জওয়ানের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy