Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National news

মাছ-ভাতে ভাল থাকার ভিড় সর্বত্র

নির্মাণ শিল্পে কেরল বরাবরই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। অতীতে এ রাজ্যে এসে প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত নির্মাণ শ্রমিকদের ছাউনিতে তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

সন্দীপন চক্রবর্তী
কোচি শেষ আপডেট: ২০ এপ্রিল ২০১৯ ০৫:২৬
Share: Save:

ভোটের খবর নিতে এসেছেন! কলকাতায় থাকেন?

মালাবার উপকূল ধরে উত্তর থেকে মধ্য কেরল হয়ে দক্ষিণের দিকে এগোতে গেলে প্রতি আস্তানায় কানে আসছে এই প্রশ্ন। প্রশ্নটার মধ্যে কোনও চাঞ্চল্য নেই। কিন্তু এই পরভূমে মাতৃভাষায় প্রশ্ন আসছে এত মুখ থেকে, বিস্ময়ের ঘোরটা সেখানেই!

নির্মাণ শিল্পে কেরল বরাবরই বাংলার পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ গন্তব্য। অতীতে এ রাজ্যে এসে প্রকল্পের কাজে নিযুক্ত নির্মাণ শ্রমিকদের ছাউনিতে তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতার অভিজ্ঞতা হয়েছে। এ বার মালুম হচ্ছে, কোঝিকোড়, কোচি, কোল্লম বা তিরুঅনন্তপুরম— মাঝারি থেকে বড় হোটেল মানেই তাতে বাঙালি কর্মী প্রায় অবধারিত!

নির্মাণ শ্রমিকদের আনাগোনাও অবশ্য বন্ধ হয়নি। কোঝিকোড় থেকে ওয়েনাড যাওয়ার পথে দু’দিন আগেই খবর এসেছিল মলপ্পুরমে সড়ক দুর্ঘটনার। পুলিশ জানিয়েছিল, দুর্ঘটনায় নিহত তিন শ্রমিকেরই সাকিন বাংলা। চুক্তির ভিত্তিতে নির্মাণ শিল্প থেকে হোটেলে কাজ এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে আরও কিছু, এ ভাবেই আরব সাগরের পাড়ের রাজ্যে বঙ্গোপসাগরের তীরবর্তী নানা জেলার ভাগ্যসন্ধানী মানুষের ভিড় বাড়ছে।

রানাঘাটের বিনয় সরকার যেমন। হোটেলে কাজ করেন, বছরে বারদুয়েক বাড়ি যাওয়ার সুযোগ পান। বলছিলেন, ‘‘হোটেলে কাজ করলে খাওয়া আর থাকার খরচ লাগে না। বাড়িতে টাকা পাঠানো যায়। এখানে যে টাকা পাচ্ছি, বাংলায় এর তিন ভাগের এক ভাগ রোজগার করতে পারতাম না। চলে এসেছি ৮ বছর হল।’’ মোবাইলে এঁরা নিজের রাজ্যের খবর রাখেন। কাঁথির সৌমেন মাইতির মন্তব্য, ‘‘বাংলায় তো স্কুলে পড়ানোর চাকরি পেতে লোককে এখন অনশন করতে হয়!’’

বাংলা আর কেরলের পাকশালার প্রণালী কোনও ভাবেই মেলে না। এখানে এসে হোটেল-কর্মীরা তাই দক্ষিণী কায়দার রান্না আয়ত্ত করেন। খদ্দেরদের অর্ডার সামলানো হয়ে গেলে বেশি রাতের দিকে নিপাট বাঙালি কায়দায় দু’টো মাছ-ভাত করে নেন। সোনারপুরের রতন নস্করের কথায়, ‘‘এখানে খুব বেশি টাকা পাই না। তবু বাংলায় তো চাকরির বাজারই নেই।’’

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

ভিন্ রাজ্য থেকে এসে কেন কাজ নিয়ে চলে যাচ্ছেন, এমন কোনও স্থানীয় প্রতিরোধের মুখে এখনও কেরলে কাউকে পড়তে হয়নি। ভোট দিতে বাড়ি যাওয়ার উৎসাহও বিশেষ কারও দেখা যাচ্ছে না।

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুযোগ-সুবিধার বিষয়টিকে বামেরা নির্বাচনে অস্ত্র করেছে। কেরলের অর্থমন্ত্রী এবং সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য টমাস আইজ্যাকের বক্তব্য, ‘‘পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য আমাদের সরকার ‘আওয়াজ’ নামে স্বাস্থ্য প্রকল্প চালু করেছে। তাতে এখনও পর্যন্ত নথিভুক্ত শ্রমিকের সংখ্যা তিন লক্ষ ৮০ হাজার। তার বাইরেও আরও অনেকে আছেন। আমরা চাই, দেশের সর্বত্র পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য বিশেষ সামাজিক সুরক্ষার সহায়তা চালু হোক।’’

কেরলের সাম্প্রতিক বন্যার সময়ে আটকে পড়ে বাংলায় সরকারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেছিলেন অনেক শ্রমিক। সেই উদাহরণ মনে রেখেই তৃণমূলের জাতীয় মুখপাত্র তাঁদের সামাজিক সুরক্ষা দেওয়ার কথা বলছেন। উত্তর মালদহের তৃণমূল প্রার্থী মৌসম বেনজির নূরও জানাচ্ছেন, তাঁদের জেলা থেকে ভিন্ রাজ্যে কাজে যাওয়া শ্রমিকের সংখ্যা বেশি বলে বাড়তি সর্তক থাকেন তাঁরা।

প্রকাশ্যে মন্তব্য না করলেও বাংলার প্রশাসনের এক শীর্ষস্থানীয় কর্তার মতে, একটি সংস্থার সাহায্যে করা সমীক্ষা অনুযায়ী সে রাজ্যে উপার্জনক্ষম পরিবারগুলির মধ্যে মাসে ১৫ হাজার টাকার বেশি আয় মাত্রই ১৫%-এর। ভিন্ রাজ্যে ভাগ্য খুঁজে নেওয়া তাই

অনেকেরই ভবিতব্য।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE