Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চৌকিদার! নামের সঙ্গে চৌকিদার জোড়ার ধুম নেতা-মন্ত্রীদের

ওই  টুইটার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে থাকেন।

টুইটার অ্যাকাউন্টে জুড়ল ‘চৌকিদার’ নাম।

টুইটার অ্যাকাউন্টে জুড়ল ‘চৌকিদার’ নাম।

নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ মার্চ ২০১৯ ০৪:২৭
Share: Save:

ভারতের প্রধানমন্ত্রীর নাম কী? শুধু নরেন্দ্র মোদী নয়! আজ থেকে তাঁর নাম ‘চৌকিদার নরেন্দ্র মোদী’। দুপুরে তিনি টুইটারে নিজের নাম এ ভাবেই ‘পরিবর্তন’ করেছেন। ওই টুইটার অ্যাকাউন্টে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানেরাও ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে ট্যাগ করে থাকেন।

শুধু নিজের নাম নয়, দলের ছোট-বড় নেতা, সমর্থকদেরও নামের আগে টুইটারে ‘চৌকিদার’ শব্দটি যোগ করতে বলেছেন মোদী। ফলে নিমেষের মধ্যে ‘হাজার হাজার ডাক্তার হাজরা’র মতো টুইটার ছেয়ে গিয়েছে চৌকিদার-এ। অমিত শাহ থেকে পীযূষ গয়াল, শিবরাজ সিংহ চৌহান থেকে প্রকাশ জাভড়েকড়, বাংলায় মুকুল রায়রাও নিজের নামের আগে ‘চৌকিদার’ শব্দ জুড়ে দিয়েছেন টুইটারে। গোড়ার দিকে এ সব করতে চাননি নিতিন গডকড়ী, রাজনাথ সিংহ, অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজেরা। পরে তাঁরাও মোদীকে ‘ফলো’ করেন।

গত কালই টুইটারে একটি ভিডিয়ো দিয়ে মোদী ঘোষণা করেছিলেন, চৌকিদার তিনি একা নন, দেশের সব নাগরিকই চৌকিদার। বিজেপি নেতারা অস্বীকার করছেন না, রাহুল গাঁধী যে ভাবে ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানকে জনপ্রিয় করেছেন, তার থেকে মুক্তির একটাই উপায় ছিল— মোদীর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ সবার মধ্যে ভাগ করে নেওয়া। সম্প্রতি দিল্লির রামলীলা ময়দানে মোদী ঘোষণা করেন, একার জোরে নয়, দল এখন সামগ্রিক নেতৃত্বে যাবে। অর্থাৎ, জেতার দায় তাঁর একার নয়, সকলের। বিরোধীরা মনে করেছে, মোদী এ বার তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগও ভাগাভাগি করে নিতে চাইলেন।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

পুলওয়ামা কাণ্ডের পরে পাকিস্তানে অভিযান হয়েছিল। তার পরে জাতীয়তাবাদের হাওয়াকে তুঙ্গে নিয়ে গিয়েছিলেন মোদী ও তাঁর সেনাপতিরা। কিন্তু বিজেপির একটি সূত্রের মতে, ক’দিন ‘যুদ্ধ বিরতি’র পরে রাহুল যখন ফের রাফাল থেকে শুরু করে বেকারত্বের মতো বিষয়গুলি সামনে নিয়ে এলেন, তখনই মোদী বুঝতে পারলেন, শুধু জাতীয়তাবাদের কথা বলে ভোটে যাওয়া সম্ভব নয়। ‘চৌকিদার চোর হ্যায়’ স্লোগানেরও মোকাবিলা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর ‘নাম বদল’-এর পরে প্রথমে যখন কয়েকজন শীর্ষ নেতা সাড়া দিচ্ছিলেন না, তখন বিরোধীরা হইচই শুরু করে দেয়। সোশ্যাল মিডিয়ায় কংগ্রেস ছড়াতে শুরু করে, মোদীর পাশে দাঁড়াতে চাইছেন না তাঁর দলেরই নেতারা। কেউ কেউ মিম তৈরি করে ফেলেন— অনিল অম্বানীর চৌকিদার মোদী, জয় শাহের চৌকিদার অমিত শাহ ইত্যাদি। এ সব দেখে বিজেপির ওই নেতাদের কাছে টেলিফোন যায়, তাঁরা কেন ‘চৌকিদার’ শব্দটি যোগ করেননি। তখন কার্যত চাপের মুখে জেটলি, গডকড়ী, রাজনাথরা নিজেদের নামের পাশে ‘চৌকিদার’ শব্দটি জুড়লেন বা জুড়তে বাধ্য হন বলে দলীয় সূত্রেই খবর। বিদেশমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ এখন মলদ্বীপে। তিনিও প্রথমে নামের আগে ‘চৌকিদার’ শব্দটি যোগ করেননি। এরই মধ্যে টুইট করে বসেন রাহুল। লেখেন, ‘‘মোদীজি চেষ্টা করে যান। তবে সত্যিকে চাপা দেওয়া যাবে না। সব ভারতীয় এ কথাই বলছে।’’ এর সঙ্গেই তাঁর কটাক্ষ, ‘‘প্লিজ, সুষমা স্বরাজকেও চৌকিদার শব্দটা যোগ করতে বলুন! এটা খুবই খারাপ দেখাচ্ছে!’’ বিজেপি সূত্র জানাচ্ছে, তখনই ফোন গেল সুষমার কাছেও। তিনি বিদেশে বসেই নামের সঙ্গে জুড়লেন ‘চৌকিদার’।

কিন্তু এ সব করেও কি শেষ রক্ষা হবে? প্রশ্ন বিরোধী নেতাদের। মোদী অবশ্য বিষয়টিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চাইছেন। একে সামনে রেখেই হাফ ডজন টুইট করেছেন। দেশের মানুষের উদ্দেশে লিখেছেন, ‘‘মোদী ভি চৌকিদার কথাটা সকলের মধ্যে চৌকিদার সত্তাকে যে ভাবে জাগিয়ে তুলেছে, তাতে আমি খুশি।..সব চৌকিদারকে শুভেচ্ছা।’’

মোদীকে দেখে মিটু-র জেরে পদত্যাগী প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী এম জে আকবর লেখেন, তিনিও চৌকিদার। তা নিয়ে যথেষ্ট ট্রোলের মুখে পড়তে হয় তাঁকে। অভিনেত্রী রেণুকা সহানে কটাক্ষ করেন, ‘‘আপনি যদি চৌকিদার হন, দেশের মেয়েরা তবে একেবারেই সুরক্ষিত নন!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE