Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
general-election-2019-national

রাজধানীতে শীলার প্রত্যাবর্তনে কাঁটা সেই ভোট-ভাগ

বিজেপি বলছে, জনপ্রিয়তার কারণে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে পরপর দু’বার প্রার্থী করা হয়েছে মনোজকে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

অনমিত্র সেনগুপ্ত
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১১ মে ২০১৯ ০৩:৩০
Share: Save:

দিল্লি সংলগ্ন বুরারির ত্যাগী মার্কেট বাস স্ট্যান্ডের কাছেই বিজেপির প্রচার মঞ্চ। তীব্র স্বরে চলছে ভোজপুরী ফিল্মের গায়ক-নায়ক তথা উত্তর-পূর্ব দিল্লির সাংসদ মনোজ তিওয়ারির হিট গান। রাত সাড়ে আটটার ভিড় কিঞ্চিৎ বেসামালও বটে। ৮টায় বলে পৌনে ৯টায় পৌঁছলেন মনোজ। আধ ঘণ্টা গান শেষে দশ মিনিটের ভাষণ। তার পরেই গাড়িতে প্রস্থান।

বিজেপি বলছে, জনপ্রিয়তার কারণে উত্তর-পূর্ব দিল্লি থেকে পরপর দু’বার প্রার্থী করা হয়েছে মনোজকে। রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি সতীশ উপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘গত দু’দশকে দিল্লির জনসংখ্যার বিন্যাস অনেকটাই পাল্টে গিয়েছে। দিল্লির ওই অংশে পূর্বাঞ্চলীদের (বিহারের পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্ব উত্তরপ্রদেশের বাসিন্দা যারা মূলত ভোজপুরীতে কথা বলেন) বাস বেশি। তাঁদের ভোট টানতেই ফের প্রার্থী করা হয়েছে বিজেপির প্রদেশ সভাপতি মনোজকে।’’ কিন্তু উন্নয়ন? উত্তর নেই প্রচারসভায় বসে থাকা বিট্টুপ্রসাদ, মনোজ কুমারদের মুখে। নায়ককে সামনাসামনি দেখেছেন, তাতেই খুশি তাঁরা।

গত বার প্রায় দেড় লক্ষ ভোটে আপের প্রার্থীকে হারিয়েছিলেন মনোজ। সে বার ছিল মোদী হাওয়া। এ বার লড়াই কিছুটা কঠিন। বিপক্ষে কংগ্রেসের শীলা দীক্ষিত এবং আম আদমি পার্টির প্রার্থী দিলীপ পাণ্ডে। গত বিধানসভায় ৭০টির মধ্যে ৬৭টি আসন আপকে জেতাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল প্রাক্তন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ারের। শাসক শিবির আশাবাদী, বিজেপি বিরোধী ভোট আপ এবং কংগ্রেসের মধ্যে ভাগ হওয়ার ফায়দা পাবেন মনোজ।

দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯

মনোজ যখন জয় ধরে রাখতে লড়ছেন, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি শীলার কাছে এ হল সম্মান পুনরুদ্ধারের লড়াই। তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী শীলার সম্ভবত এটাই শেষ ভোট-লড়াই। গত বিধানসভায় অরবিন্দ কেজরীবালের কাছে হেরে যাওয়ার পরে রাজনীতি থেকে কার্যত সন্ন্যাস নিয়েছিলেন শীলা। প্রদেশ সভাপতির দায়িত্ব পান অজয় মাকেন। পরে উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে কংগ্রেস মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে তাঁকে তুলে ধরলেও সপা’র সঙ্গে জোটের স্বার্থে সরে আসেন শীলা। লোকসভার আগে তাঁর হাতেই দিল্লির দায়িত্ব দেন রাহুল। মূলত তাঁর আপত্তিতেই দিল্লিতে কেজরীবালদের সঙ্গে জোট করেনি কংগ্রেস। তাই নিজের জয়ের পাশাপাশি দলকে জয়ী করাও শীলার কাছে বড় চ্যালেঞ্জ।

শের শাহের তৈরি জিটি রোড দু’ভাগে ভাগ করে দিয়েছে পূর্ব দিল্লি ও উত্তর-পূর্ব দিল্লি লোকসভা কেন্দ্রকে। কমনওয়েলথ গেমসের কল্যাণে পূর্ব দিল্লি কেন্দ্র উন্নয়নে এগিয়ে গেলেও, উত্তর-পূর্ব কেন্দ্র রয়েছে একই জায়গায়। আসলে সীমাপুরী, কারওয়ালনগর, গোকুলপুর, বুরারি কিংবা মৌজপুরের বিস্তীর্ণ অংশ এখনও বস্তিরই নামান্তর। মাথার ওপর বা পাশ দিয়ে চলে গিয়েছে মেট্রোর পিলার। চুরি-ছিনতাই নিত্যদিনের সমস্যা। মনোজের দাবি, ‘‘সুরক্ষার প্রশ্নে গত পাঁচ বছরে কেন্দ্রে কয়েক কোটি টাকার সিসি ক্যামেরা এবং এলইডি লাইট লাগিয়েছি।’’ তাতেও স্বজনপোষণের অভিযোগ এনেছেন বিরোধীরা।

তাই গত পাঁচ বছরে বিজেপি ও আপের শাসনে এলাকার অনুন্নয়নকেই হাতিয়ার করেছেন শীলা। কংগ্রেসের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন যে ভাবে দিল্লির উন্নতি ঘটিয়েছিলেন ‘বিকাশ কি দেবী’ শীলা, তেমনি জিতলে গোটা কেন্দ্রকে ‘স্মার্ট সিটি’ হিসাবে গড়ে তুলবেন তিনি। দলের বর্ষীয়ান নেত্রীকে জেতাতে একাধিক রোড শো, জনসভায় উপস্থিত থেকেছেন রাহুল ও প্রিয়ঙ্কাও।

তবে কংগ্রেসের প্রধান দুশ্চিন্তা, আপের সঙ্গে ভোট ভাগাভাগির সম্ভাবনা। গত পাঁচ বছরে সেলিমপুরী, জাফরাবাদ বা সীমাপুরীর মতো মুসলিম প্রধান এলাকায় আপের পক্ষেই সরব সমর্থন। সীমাপুরী এলাকার বাসিন্দা কৌসর বানুর কথায়, ‘‘আপ সরকার আসায় বিদ্যুতের দাম কমেছে। জলের ট্যাঙ্কার ঘরে আসে। স্কুলও ভাল হয়েছে।’’ একই যুক্তি ইউসুফদের। আপ ফের জিতলে কলোনি সরকারি ছাড়পত্র পাবে ওই আশাতেই বুক বাঁধছেন তাঁরা। ফলে আপের কাছে চলে যাওয়া ভোটব্যাঙ্ক কী ভাবে পুনরুদ্ধার করা যায়, তার উপরে অনেকটাই নির্ভর করছে শীলার জয়। কংগ্রেস নেতাদের অবশ্য হিসাব, তিমারপুর, মালকাগঞ্জ, দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন মধ্যবিত্ত এলাকার ভোট পাবেন শীলা।

আপের দিলীপ পাণ্ডে কিন্তু খুব নিশ্চিত। তাঁর কথায়, ‘‘লোকসভা কেন্দ্রের অধীনে থাকা দশটির মধ্যে ৯টিতে আপের বিধায়ক জিতেছেন। সেই ভোট ধরে রাখতে পারলেই হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE