Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

পুলিশের বন্দুক কেড়ে গুলির ঝড় মনোরোগীর

মানসিক রোগীর হাতে পুলিশের রাইফেল। মাঝে মাঝেই সে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে এলোপাথাড়ি। তাড়া করে নাজেহাল পুলিশ। চার ঘণ্টায় আততায়ীকে নিরস্ত্র করার অনেক চেষ্টা করেও লাভ হল না।

সংবাদ সংস্থা
বেঙ্গালুরু শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৫ ০২:৫১
Share: Save:

মানসিক রোগীর হাতে পুলিশের রাইফেল। মাঝে মাঝেই সে গুলি চালিয়ে দিচ্ছে এলোপাথাড়ি। তাড়া করে নাজেহাল পুলিশ। চার ঘণ্টায় আততায়ীকে নিরস্ত্র করার অনেক চেষ্টা করেও লাভ হল না। পুলিশের হিসেবে অন্তত ২৯ রাউন্ড গুলি ছুড়েছে সে। শেষ পর্যন্ত পাল্টা গুলিতে ধরাশায়ী করে নাটক শেষ করল পুলিশ।

ঘটনাস্থল বেঙ্গালুরুর ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেলথ অ্যান্ড নিউরোসায়েন্সেস (নিমহ্যান্স)। রবিবার বিকেল ৩টে নাগাদ পুলিশি পাহারায় অন্যত্র নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল মানসিক রোগী বিশ্বনাথকে। আচমকাই সে পুলিশের ওপরে চড়াও হয়ে রাইফেলটি কেড়ে নেয়। তার পরে সকলকে অবাক করে দিয়ে গুলি চালাতে শুরু করে। আশপাশের লোক তখন প্রাণ বাঁচাতে ছুটছেন আড়ালের খোঁজে। বিশ্বনাথও রাইফেল বাগিয়ে ধরে হাসপাতালের এ ঘর-ও ঘর ঘুরে বেড়াতে থাকে। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানাচ্ছেন, বছর বাইশের এই মানসিক রোগীর আক্রোশের মূল কেন্দ্র যেন ছিল নার্সদের বিশ্রামকক্ষটি। ঘুরে ফিরে সেই ঘর লক্ষ করেই গুলি চালাচ্ছিল সে। প্রাণ বাঁচাতে সেই ঘরেই গা-ঢাকা দিয়ে ছিলেন এক জন চিকিৎসক এবং তিন জন নার্স। গুলি থেকে বাঁচতে টানা চার ঘণ্টা টান-টান হয়ে মেঝেতে শুয়ে ছিলেন তাঁরা।

আচমকা এই ঘটনায় হইহই শুরু হয়ে যায় নিমহ্যান্স জুড়ে। খবর পেয়ে পুলিশের বিশাল বাহিনী এসে হাসপাতাল চত্বর ঘিরে ফেলে। সাধারণ মানুষ ও হাসপাতালের কর্মীদের আশপাশ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। চলে এসেছেন কর্নাটকের সন্ত্রাসদমন শাখার অফিসার ও জওয়ানরাও। হাসপাতালে পৌঁছে যান খোদ পুলিশ কমিশনারও।

পুলিশ প্রথমে বিশ্বনাথের সঙ্গে কথা বলতে চেষ্টা করে। মাইকে তাকে শান্ত হতে বলে পুলিশ। হাত থেকে বন্দুক ফেলে দিলে কেউ কোনও ক্ষতি করবে না বলেও আশ্বাস দেওয়া হয়। কিন্তু সব চেষ্টা বিফলে যায়।

একটা সময়ে নিরাপত্তা বলয় ছোট করতে করতে পুলিশ বিশ্বনাথকে প্রায় ঘিরে ফেলে। গুলি ছুড়তে ছুড়তেই সে ঢুকে পড়ে ‘ক্রিমিনাল ওয়ার্ড’-এর একটি ফাঁকা ঘরে। সঙ্গে সঙ্গেই ঘরটির দরজায় বাইরে থেকে ছিটকিনি আটকে দেয় পুলিশ। তখনও মাইকে বলা হতে থাকে— বন্দুক ফেলে দাও। কিন্তু বিশ্বনাথ শান্ত তো হয়ইনি বরং ওই ঘরের জানলা দিয়ে পুলিশের দিকে অবিরাম গুলি চালাতে থাকে সে। তত ক্ষণে কেটে গিয়েছে চার-চারটি ঘণ্টা।

পুলিশ অফিসারেরা আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেন, প্রাণহানি আটকাতে মানসিক অসুস্থ আততায়ীকে গুলি করেই নিরস্ত্র করতে হবে। সেই অনুযায়ী বিশ্বনাথকে লক্ষ্য করে জানলা দিয়ে গুলি চালান সন্ত্রাসদমন শাখার কমান্ডোরাও। তার হাত থেকে রাইফেল ছিটকে পড়ে। সে নিজেও জ্ঞান হারায়। পুলিশ তখন ঘরে ঢুকে রক্তাক্ত বিশ্বনাথকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানকার ডাক্তাররা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।

বেঙ্গালুরুর পুলিশ কমিশনার এন এস মেঘারিক জানান, মানসিক অসুস্থ আততায়ীর কোনও ক্ষতি না-করে তাকে নিরস্ত্র করার সব রকম চেষ্টা করেছিল পুলিশ। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাওয়ার উপক্রম হওয়ায় তাকে গুলি করা ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE