নিঃশব্দে সংস্কার।
শিল্প সংস্থাগুলিকে মরসুমি চাহিদা মতো কর্মী নিয়োগের সুযোগ করে দিয়ে চুপচাপ শ্রম আইনের সংস্কার করতে চাইছে নরেন্দ্র মোদী সরকার। সপ্তাহ খানেক আগেই বস্ত্র ও পোশাক শিল্পের জন্য কেন্দ্র বিশেষ প্যাকেজ ঘোষণা করেছিল। কর ছাড়, উৎসাহ ভাতা, ভর্তুকির পাশাপাশি সেই প্যাকেজেই ঘোষণা হয়ে গিয়েছিল, বস্ত্র শিল্পে সারা বছরের জন্য কর্মী নিয়োগ না করে নির্দিষ্ট কয়েক মাসের জন্য কর্মী নিয়োগ করা যাবে। অর্থাৎ, স্থায়ী নিয়োগ নয়। আবার ঠিকা বা চুক্তি অনুযায়ী নিয়োগও নয়। শিল্পের চাহিদা মেনে বছরে নির্দিষ্ট কয়েক মাসের জন্য শ্রমিক বা কর্মী নিয়োগের বন্দোবস্ত।
বহু দিন ধরে শিল্পমহল এই দাবিই জানিয়ে আসছিল। বস্ত্র শিল্পের জন্য প্যাকেজের মোড়কে সেই দাবি মেনে নিয়েছে মোদী সরকার। এ বার অন্যান্য ক্ষেত্রেও তা চালু করার চেষ্টা হবে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, বস্ত্র শিল্পের ক্ষেত্রে শুধুমাত্র পোশাক তৈরির কারখানাগুলিতে এই সুযোগ দেওয়া হয়েছে। যেখানে অনেক বেশি শ্রমিক নিয়োগ হয়। অনেকেই মনে করছেন, এর মাধ্যমে জল মাপা হচ্ছে। ইতিবাচক ফল মিললে অন্যান্য ক্ষেত্রেও ধাপে ধাপে শ্রম আইন শিথিল করা হবে।
এই সাবধানে পা ফেলার কারণ হল, ঘরে-বাইরে বিরোধিতার আশঙ্কা। সঙ্ঘ পরিবারের শ্রমিক সংগঠন বিএমএস-কে নিয়েই সরকারের চিন্তা বেশি। মোদী সরকার যতই চুপচাপ এই সংস্কারের কাজ সেরে ফেলার চেষ্টা করুক না কেন, বিএমএস জানিয়ে দিয়েছে, তারা এর বিরুদ্ধে। গত সপ্তাহেই নাগপুরে দু’দিন ধরে বিএমএস-এর পদাধিকারীদের জাতীয় বৈঠক হয়েছে। তার পরে বিএমএসের সাধারণ সম্পাদক ব্রিজেশ উপাধ্যায় জানিয়ে দিয়েছেন, এই সিদ্ধান্ত শ্রমিকের স্বার্থবিরোধী। তাঁরা এর বিরোধিতা করবেন।
শিল্প সংস্থাগুলির যুক্তি, কেন্দ্রীয় সরকার যে একশো দিনের কাজ বা জাতীয় গ্রামীণ রোজগার নিশ্চয়তা প্রকল্প (এমএনআরইজিএ) চালাচ্ছে, সেখানেও তো সারা বছরের জন্য রোজগারের নিশ্চয়তা নেই। ১২ মাসের মধ্যে মাত্র চার মাস কাজ দেওয়া হচ্ছে। তা হলে শিল্প সংস্থাতেই বা এই ব্যবস্থা চালু করা যাবে না কেন? বিশেষত বস্ত্র শিল্পে শীতকাল বা উৎসবের মরসুমের আগে উৎপাদন বেশি হয়। তখন শ্রমিকদের চাহিদা বাড়ে। বছরের অন্য সময়ে ওই শ্রমিকদের জন্য কাজ থাকে না। ফলে তখন তাঁদের বসিয়ে রেখে বেতন দিতে হলে সমস্যা। আবার এক বার শ্রমিক নিয়োগ করে ফেললে পরে ছাঁটাই করতে সমস্যা হবে, ইউনিয়নগুলির তোপের মুখে পড়তে হবে, এই ভয়ে শিল্প সংস্থাগুলি নিয়োগও করতে চায় না। ফলে সংগঠিত ক্ষেত্রে শ্রমিকদের মাত্র ৮ শতাংশ কাজ পাচ্ছে।
বণিকসভা সিআইআই-কর্তা তথা ওয়েলস্পান গোষ্ঠীর চেয়ারম্যান বি কে গোয়েন্কার মতে, ‘‘শ্রম আইন শিথিল করার প্রস্তাবে পোশাক শিল্পে উৎপাদন বাড়বে।’’ তাঁর মতে, পোশাক শিল্পের মতো ক্ষেত্রে যেখানে বহু শ্রমিক নিয়োগ করতে হয়, সেখানে এই ধরনের সংস্কার খুবই জরুরি। কারণ, আমাদের দেশের বস্ত্রশিল্পকে এখন অন্য দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নামতে হচ্ছে। কেন্দ্রের আশা, সংস্কারের এই পদক্ষেপে বস্ত্র শিল্পে প্রায় পৌনে দু’লক্ষ নতুন কর্মসংস্থান হবে।
মোদী সরকারের জন্য সব থেকে স্বস্তির কথা হল, শিল্পমহলকে এই সুবিধা দিতে শ্রম আইনে কোনও বদল করতে হবে না। কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের বক্তব্য. এ ক্ষেত্রে কারখানায় কর্মী নিয়োগের নিয়মে কিছু ছাড় দিলেই চলবে। তার জন্য প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তি জারি করে দিলেই চলবে। আইন বদল করতে হলে ফের সংসদে বিরোধিতার মুখে পড়তে হতো মোদী সরকারকে। কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিইউসি-র সভাপতি জি সঞ্জীব রেড্ডির যুক্তি, শ্রমিকদের যেমন খুশি শোষণ করার জন্য মালিকদের সুযোগ করে দিচ্ছে মোদী সরকার।
শিল্পমহলের যুক্তি, সীমিত সময়ের জন্য নিয়োগ ইউরোপের বহু দেশেই চালু রয়েছে। ঠিকা বা চুক্তিতে নিয়োগের থেকে এ ক্ষেত্রে সুবিধা হল, কর্মীরা সীমিত সময়ের জন্য হলেও স্থায়ী কর্মীদের মতোই সুযোগসুবিধা, সামাজিক সুরক্ষা পাবেন। তা সে কয়েক মাসের জন্যই নিয়োগ হোক বা কয়েক বছরের জন্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy