Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

মোদীর চিন্তা কৃষি, ঘাটতি নিয়েও চাপ

নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২২-এ তিনি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেখাবেন। প্রশ্ন উঠেছে, এত কম বৃদ্ধি নিয়ে কী ভাবে তা সম্ভব হবে?

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ জানুয়ারি ২০১৮ ০৩:৪৬
Share: Save:

গুজরাতে গ্রামের কৃষকদের ভোট না মেলায় নরেন্দ্র মোদীর কপালে চিন্তার ভাঁজ ছিলই। এ বার আর্থিক বৃদ্ধির পূর্বাভাসে কৃষিতে বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশে নেমে আসার আশঙ্কা কার্যত ঘুম কেড়ে নিয়েছে মোদী সরকারের।

নরেন্দ্র মোদী প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, ২০২২-এ তিনি কৃষকদের আয় দ্বিগুণ করে দেখাবেন। প্রশ্ন উঠেছে, এত কম বৃদ্ধি নিয়ে কী ভাবে তা সম্ভব হবে?

গুজরাতের ভোটের পরেই প্রধানমন্ত্রীর দফতর থেকে অর্থ মন্ত্রকে স্পষ্ট নির্দেশ গিয়েছিল, বাজেটে কৃষির হাল ফেরানোর দাওয়াই চাই। কৃষিতে বৃদ্ধির হার যে ভাবে কমছে, তার পরে বাজেটে কৃষি ক্ষেত্রের জন্য দরাজ হওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় নেই অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলির সামনে।

কৃষকেরা বহু দিন ধরেই ফসলের নায্য দামের দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাই পরিকল্পনা চলছিল, বাজারে ফসলের দাম সরকার-ঘেষিত ন্যূনতম সহায়ক মূল্য (এমএসপি)-এর থেকেও পড়ে গেলে, সেই ফারাকটুকু ভর্তুকি দেওয়ার কথা বাজেটে ঘোষণা করা হবে। কৃষিতে সঙ্কট জেটলিকে এই খাতে টাকা ঢালতে বাধ্য করবে বলেই মনে করছেন অর্থনীতিবিদেরা।

আরও পড়ুন: জেলযাত্রা শুনেই নমস্কার, মাথা নিচু লালুর

কিন্তু সেখানেও মুশকিল। কারণ, বৃদ্ধির হার নেমে আসায় অর্থমন্ত্রীর বাজেটের হিসেবনিকেশও গুলিয়ে গিয়েছে। অঙ্ক অনুযায়ী, এখন তাঁকে রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশে ধরে রাখতে হলে প্রায় ১৫ হাজার কোটি টাকা খরচ ছাঁটাই করতে হবে। কারণ, বাজেটে হিসেব ছিল, জিডিপি-র পরিমাণ হবে ১৬৮.৫ লক্ষ কোটি টাকা। তার ৩.২ শতাংশ হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়ানোর কথা ৫.৪৭ লক্ষ কোটি টাকা। কিন্তু এখন পূর্বাভাস বলছে, জিডিপি-র পরিমাণ হবে ১৬৬.৩ লক্ষ কোটি টাকা। সেই হিসেবে ঘাটতির পরিমাণ নেমে যাবে ৫.৩২ লক্ষ কোটি টাকায়। এ দিকে সরকার ইতিমধ্যেই বাড়তি ৫০ হাজার কোটি টাকা ধার নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের বক্তব্য, ‘‘রাজকোষ ঘাটতি ৩.২ শতাংশ ছাপিয়ে যাবে।’’

প্রণব সেনের মতো অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজকোষ ঘাটতি বাড়বে বলে কৃষির সঙ্কট থেকে মুখ ফিরিয়ে নেওয়ার কোনও উপায় নেই। গত অর্থ বছরে কৃষিতে বৃদ্ধির হার ছিল ৪ শতাংশের বেশি। সরকারি পূর্বাভাসই বলছে, সেই তুলনায় এ বছর বৃদ্ধির হার ২.১ শতাংশে নেমে আসবে। এ বছর না হয়েছে খরা, না অতিবৃষ্টি। অথচ সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, জুলাই-অগস্টে খারিফ মরসুমে খাদ্য শস্যের উৎপাদন ২.৮ শতাংশ কমেছে। গম চাষও হয়েছে প্রায় ৫ শতাংশ কম জমিতে। অর্থনীতিবিদেরা বলছেন, এ থেকেই স্পষ্ট, সমস্যাটা আরও গভীরে।

কারখানার উৎপাদনের জন্য জেটলির যুক্তি, জিএসটি চালুর সমস্যা। কৃষিতে সমস্যার জন্য একই ভাবে নোট বাতিলকে দায়ী করছেন কৃষি মন্ত্রকের কর্তারা। তাঁদের যুক্তি, গ্রামে নগদের অভাব ছিল বলেই চাষিরা সার, বীজ কিনতে সমস্যায় পড়েছিলেন। ফসলের দাম মেলেনি। সেই কারণে উৎপাদনও কমেছে। কিন্তু এক বছর পরেও তার রেশ থেকে যাবে, তা বোধ হয় নরেন্দ্র মোদীও আঁচ করতে পারেননি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE