হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রাজিনদারি দেবী। ছবি :ফেসবুক।
বৃদ্ধার ডান চোখের নীচে কালশিটের কালো দাগ স্পষ্ট। সাদা শাড়ির বেশির ভাগ অংশেই রক্তের ছিটে লেগে রয়েছে। টাকা না মেলায় বেপরোয়া মারধর করে রাস্তায় এই ভাবেই ফেলে দিয়ে গিয়েছে তাঁর ছেলে। সারা রাত রক্তাক্ত অবস্থায় রাস্তাতেই পড়েছিলেন ৭০ বছরের রাজিনদারি দেবী। এই মর্মান্তিক দৃশ্য দেখেও কেউ ওই বৃদ্ধাকে সাহায্য করতে এগিয়ে এলেন না। এমনকী, পুলিশি হেনস্থা থেকে বাঁচতে থানাতেও খবর দিলেন না কেউ। এক মানবাধিকারকর্মীর তৎপরতায় অবশেষে উদ্ধার হন ওই বৃদ্ধা। গ্রেফতার করা হয়েছে তাঁর ছেলেকে।
পশ্চিম দিল্লির সাহদরার সুভাষ পার্ক এলাকায় বহু বছর ধরেই রাজিনদারি দেবী বসবাস করেন। স্বামী মারা গিয়েছেন অনেক বছর আগে। এক মাত্র ছেলে নন্দকিশোরকে অনেক যত্নে মানুষ করেন তিনি। কিন্তু বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ক্রমে অবাধ্য হয়ে ওঠে ছেলে নন্দ। টাকাপয়সার জন্য মারধর করতে শুরু করে তাঁকে। এ দিনও তাই হয়। রাতে বাড়ি ফিরে টাকা চায় রজিনদারি দেবীর কাছে। দিতে রাজি না হলে বেধড়ক মারধর করতে শুরু করে। চলতে থাকে উদ্যম গালিও। পরে গিয়ে মাথায় চোট পান তিনি। চোখের নীচে অনেকটা অংশ জুড়ে কালশিটে পড়ে যায়। তার পর গায়ের জোরে ঠেলে রাস্তায় ফেলে দেওয়া হয় তাঁকে। রাস্তায় ফেলে দেয় তাঁকে। সারা রাত এই ভাবে রাস্তাতেই পড়ে ছিলেন রাজিনদারি দেবী। একটা কম্বল মুখে চেপে সারা রাত অঝোরে কেঁদেছেন। পথচলতি কেউ ফিরে দেখলেন তো কেউ দেখলেন না। কিন্তু সাহায্যের জন্য কেউই এগিয়ে এলেন না।
শুক্রবার সকালে রাজিনদারির এক প্রতিবেশীর কাছ থেকে খবর পান কুন্দন শ্রীবাস্তব নামে এক মানবাধিকারকর্মী। ঘটনাস্থলে গিয়ে ওই বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলেন। পুরো কথোপকথনটার ভিডিও করে রাখেন। তিনি যখন বৃদ্ধার সঙ্গে কথা বলছিলেন, সে সময় ঘটনাস্থলে চলে আসে তাঁর ছেলে নন্দ। রাস্তা ভর্তি লোকের সামনেই মাকে ধমকাতে শুরু করে সে। রাজিনদারি দেবীর পাশে বসেই তাঁকে মিথ্যাবাদী তকমা দিতে থাকে ছেলে নন্দ। হুমকি দেয় ওই মানবাধিকার কর্মীকেও।
রাজিনদারি দেবী বলেন, ‘‘রোজ আমাকে মারধর করে ও। এই বাড়িভাড়ার টাকা আমি দিই। সে টাকার জন্যও রোজ আমাকে মারে।’’ পুরো ঘটনা ক্যামেরাবন্দি করার পর ওই বৃদ্ধাকে নিয়ে থানায় অভিযোগ দায়ের করানো হয়। পুলিশ গ্রেফতার করেছে তাঁর ছেলেকে। ওই বৃদ্ধা এখন স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
দেখুন ভিডিও:
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy