ওমর আবদুল্লা।
কাশ্মীর সমস্যা মেটাতে গেলে পাকিস্তানকেও ভারতের স্বার্থের কথা ভাবতে হবে বলে মন্তব্য করলেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা। তাঁর মতে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার আগে কাশ্মীর নিয়ে দু’দেশের মধ্যে শীর্ষ স্তরে আলোচনা হওয়া কঠিন। তাই ভারতে ভোট প্রক্রিয়া চলাকালীন পাকিস্তানের ভেবে রাখা উচিত, তারা কী আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করতে পারে।
লন্ডনে এক বিশেষজ্ঞ সংস্থার আলোচনাসভায় ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নিয়ে আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দু’দেশের রাজনীতিক, প্রাক্তন গোয়েন্দা-কর্তা ও সাংবাদিকদের। শুক্রবার সেখানেই ওমর বলেন, ‘‘পাকিস্তান আমাদের প্রতিবেশী। তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করাটা সমাধান হতে পারে না। তাই কাশ্মীর সমস্যা সমাধানে আলোচনা ছাড়া পথ নেই। কিন্তু পাকিস্তানকেও ভারতের স্বার্থের কথা ভাবতে হবে।’’ তাঁর কথায়, ‘‘লস্কর প্রধান হাফিজ সইদকে অবাধে ঘুরে বেড়াতে দেওয়ার মতো সিদ্ধান্ত নিলে ভারতের আস্থা অর্জন করা কঠিন।’’ ওমরের মতে, ‘‘দু’দেশেই কিছু শক্তি আলোচনা চায় না। ভারতে লোকসভা ভোট শেষ হওয়ার আগে এই ধরনের শক্তির প্রভাব এড়িয়ে শীর্ষ স্তরে আলোচনা হওয়া কঠিন।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ইমরান খান সরকারের উচিত ভারতে ভোট চলাকালীন নিজেদের কার্যকলাপ নিয়ে ফের ভাবনাচিন্তা করা। যাতে তারা ভারতে ভোট শেষ হওয়ার পরে আস্থাবর্ধক পদক্ষেপ করতে পারে।’’
হিজবুল কম্যান্ডার বুরহান ওয়ানি-সহ কাশ্মীরে নিহত জঙ্গিদের স্মরণে ২০টি ডাকটিকিট প্রকাশ করেছিল পাকিস্তান। তার পরেই সেপ্টেম্বর মাসে নিউ ইয়র্কে বিদেশমন্ত্রী স্তরে বৈঠকের প্রস্তাব বাতিল করে দেয় ভারত। ওমরের কথায়, ‘‘পাকিস্তানের এমন পদক্ষেপে ভারতের আস্থা বাড়ার সম্ভাবনা নেই।’’
কাশ্মীরে শান্তি ফেরানো প্রসঙ্গে দিল্লিকেও এক হাত নিয়েছেন ওমর। তাঁর কথায়, ‘‘ভারত সরকার ও জম্মু-কাশ্মীরে তাদের প্রতিনিধি রাজ্যপাল সত্যপাল মালিকের সঙ্গে রাজ্যের যুব সম্প্রদায়ের মানসিক ব্যবধান অনেক বেড়ে গিয়েছে। শিক্ষিত ও ভাল চাকরি করেন এমন যুবকেরাও জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিচ্ছেন। বিষয়টি উদ্বেগের।’’
ওমরের মতে, ১৯৯০-এর দশকে জঙ্গি কার্যকলাপ শুরুর সময়ের চেয়েও এখন উপত্যকার মানুষ ভারতের মূলস্রোত থেকে বেশি বিচ্ছিন্ন। তাঁর কথায়, ‘‘এখন সরকারি নীতিতে ছোট ছোট কিছু সংশোধন করা প্রয়োজন। তাতে উপত্যকার আস্থা ফিরে পাওয়া যেতে পারে। ভোট মিটলে সেই আস্থার ভিত্তিতে বড় মাপের আলোচনা শুরু করতে পারবে সরকার।’’
এ দিন আলোচনার পক্ষে সওয়াল করেছেন পাকিস্তানে ভারতীয় হাইকমিশনার অজয় বাসারিয়াও। লাহৌরে এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘‘পাকিস্তানে এখন নতুন সরকার। তাদের সঙ্গে আমরা কথা বলতে আগ্রহী। কিন্তু তার আগে হিংসা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন।’’ প্রায় একই সুর বিজেপি নেতা সুধাংশু ত্রিবেদীর। তাঁর কথায়, ‘‘বিজেপি সরকার কখনওই পাকিস্তানের সঙ্গে আলোচনার বিরোধিতা করেনি। বরং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী একাধিক বার পাক প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরিফের সঙ্গে দেখা করেছেন। কিন্তু কাশ্মীরে হিংসায় পাক মদত বন্ধ না হলে আলোচনা শুরু হওয়া কঠিন।’’
তাঁর মতে, হিংসায় পাক মদত বন্ধ করতে কাশ্মীরেই জনমত তৈরি করা প্রয়োজন। বিচ্ছিন্নতাবাদী হুরিয়ত ও উপত্যকার মূলস্রোতের দলগুলি এই দায়িত্ব এড়িয়ে যেতে পারে না। হুরিয়ত নেতা মিরওয়াইজ উমর ফারুকের বক্তব্য, ‘‘আলোচনাই কাশ্মীরে রক্তস্রোত থামাতে পারে। কিন্তু কেবল ভারত-পাকিস্তান আলোচনায় ফল হবে না। কাশ্মীরিদের স্বার্থের কথাও মাথায় রাখতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy