Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
সাক্ষাৎকারে ‘নরম’ প্রধানমন্ত্রী

ওবামা কি ইংরেজিতে ‘তুই’ বলেন মোদীকে!

এপ্রিল ফুল নয়। বারাণসী বিজেপির ছাপানো প্যাডেই জানানো হয়েছিল, শুক্রবার মনোনয়ন পেশ করেই সাংবাদিক সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ বছরে প্রথম বার।

ওবামা ও মোদী। ফাইল চিত্র।

ওবামা ও মোদী। ফাইল চিত্র।

  নিজস্ব সংবাদদাতা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৫ এপ্রিল ২০১৯ ০২:২২
Share: Save:

এপ্রিল ফুল নয়। বারাণসী বিজেপির ছাপানো প্যাডেই জানানো হয়েছিল, শুক্রবার মনোনয়ন পেশ করেই সাংবাদিক সম্মেলন করবেন প্রধানমন্ত্রী। পাঁচ বছরে প্রথম বার।

নিমেষে শোরগোল। তোলপাড় সাংবাদিক মহলে। কিন্তু যত দ্রুত এই খবর ছড়াল, তার থেকেও দ্রুত গতিতে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঝাঁপিয়ে পড়লেন এটা জানাতে যে, প্রধানমন্ত্রীর এমন কোনও কর্মসূচি নেই। প্রধানমন্ত্রী কাল দুপুরে রোড-শো করবেন, দশাশ্বমেধ ঘাটে গঙ্গা আরতি করে বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সম্মেলন। পরের দিন কর্মী বৈঠক, কালভৈরব মন্দিরে পুজো দিয়ে মনোনয়ন পেশ। এর পরে কোনও সাংবাদিক বৈঠক নেই কর্মসূচিতে।

লোকসভা ভোটের তিন দফা হয়ে গিয়েছে। তিনশোর বেশি আসনে ভোট নেওয়া হয়ে গিয়েছে। গোটা দেশের কোথাও মোদীর পক্ষে আগের মতো হাওয়া নেই। এখন তাই প্রধানমন্ত্রীকে নব নব রূপে মেলে ধরতেই ব্যস্ত গোটা বিজেপি শিবির। যেমনটি হল আজ। বলিউড তারকা অক্ষয় কুমারকে দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সাক্ষাৎকার নেওয়ানো হল। বলা হল, গোটা সাক্ষাৎকারই ‘অরাজনৈতিক’। যদিও তার পরতে পরতে রাজনীতিই গুঁজে দিলেন প্রধানমন্ত্রী।

যা দেখে খোদ রাহুল গাঁধী টুইট করলেন, “বাস্তবের সামনে অভিনয় চলে না। জনতার সামনে চৌকিদারের ছলচাতুরি (মক্কারি) চলে না। চৌকিদার চোর হ্যায়।” জনসভায় প্রিয়ঙ্কা গাঁধী বঢরাও বললেন, “বড় বড় অভিনেতাকে সাক্ষাৎকার দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী। কিন্তু নিজের কেন্দ্রের গরিব লোকেদের সঙ্গে দেখা করার সময় নেই তাঁর।” আর দিল্লিতে কংগ্রেসের নেতা রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালার কটাক্ষ, “এক জন ব্যর্থ নেতা অক্ষয় কুমারের মতো অভিনেতাকেও টক্কর দিতে চাইছেন। পারবেন না। বোধ হয় ২৩ মে-র পর বলিউডে বিকল্প রোজগারের পথ খুঁজছেন প্রধানমন্ত্রী।”

কিন্তু বিজেপি সূত্র অস্বীকার করছে না, অক্ষয়কে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীর ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকার আসলে ভোটের মধ্যগগনে নরেন্দ্র মোদীর ভাবমূর্তিতে চমক আনার চেষ্টা। যেখানে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, বাইরে তাঁর ভাবমূর্তি যতই কঠোর হোক, আসলে তিনি কখনও রাগেন না। আবার আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপেও বিশ্বাস করেন না। মাত্র সাড়ে তিন ঘণ্টা ঘুমিয়ে মেহনত করেন, বাকিদেরও পরিশ্রম করাতে চান। বারাক ওবামা দেখা হলেই তাঁর কম ঘুম নিয়ে উদ্বেগ জানান।

সেই প্রসঙ্গে মোদী এমনও বলেন যে ওবামার সঙ্গে তাঁর সম্পর্কটা ‘তুই-তোকারির’। ‘‘দেখা হলেই বলে, তুই এমন কেন করিস। আসলে এটা তোর কাজের নেশা।.... এতে নিজেরই ক্ষতি করছিস।’’ সাজানো ‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকারে অক্ষয়ের প্রশ্ন করার সুযোগ ছিল না, মোদীকে তুই-তোকারি কি ওবামা ইংরেজিতে করেন? ভাষণের গোড়ায় বলা নমস্তে, ধন্যবাদ, জয় হিন্দের মতো রপ্ত করে আসা শব্দের বাইরে ওবামা কি আদৌ হিন্দিতে কিছু বলতে পারেন?

এর পরে মোদী জানালেন, অবসর নিলেও মানুষের জন্য কাজ করে যাবেন। তবে অবসরের পরে তার প্রথম চেষ্টা হবে, ঘুম কী ভাবে বাড়ানো যায়। অক্ষয় ধরতাই দিয়েছিলেন, তাঁর ও মোদীর, দু’জনেরই কোনও গডফাদার বা বিশেষ কোনও পরিবারের উত্তরাধিকার ছিল না। কখনও ভেবেছেন প্রধানমন্ত্রী হবেন? পরিবারতন্ত্রের মতো প্রিয় বিষয়ে অনায়াস গতি মোদীর। কথায় কথায় শোনালেন, ছোটবেলায় তাঁর দারিদ্রের জীবন। সাধারণ কোনও চাকরি জুটলে মা হয়তো পাড়ায় গুড় নিয়ে মিষ্টিমুখ করাতেন। চা বেচতে বেচতেই ভাল হিন্দি বলতে শিখেছেন। কখনও ভাবেননি প্রধানমন্ত্রী হবেন ইত্যাদি।

মায়ের প্রশ্নটা বারবারই তোলে কংগ্রেস। অক্ষয়ও করেছিলেন। তাঁকে হতাশ করে মোদীর জবাব, ছোটবেলায় ‘গৃহত্যাগ করেছেন বলেই’ মাকে নিজের সঙ্গে রাখেন না। তাঁকে আর্থিক সাহায্যও করেন না। উল্টে মায়ের সঙ্গে দেখা হলে তিনিই প্রধানমন্ত্রীকে কিছু টাকা দেন। আজ সাক্ষাৎকারের ঝলক সামনে আসতেই

বিরোধীরা এ নিয়ে কটাক্ষ করতে শুরু করেছেন। তাঁদের মতে, যখন প্রয়োজন হয়, তখন মাকে নিজের রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করেন প্রধানমন্ত্রী। তা সে ভোট দেওয়ার সময় হোক কিংবা নোটবন্দির সময় বৃদ্ধা মাকে ব্যাঙ্কের লাইনে দাঁড় করানো। তবে মোদী বললেন, এক বার প্রধানমন্ত্রী নিবাসে মাকে এনে রেখেছিলাম। কিন্তু নিজের ব্যস্ততার কারণে বেশি সময় দিতে পারিনি। মায়েরও এখানে মন বসেনি।’’

‘অরাজনৈতিক’ সাক্ষাৎকার বলে নিজের ‘নরম’ ব্যক্তিত্ব যেমন মেলে ধরলেন, তেমনই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মিষ্টি ও কুর্তা পাঠানোর কথা তুলে রাজনৈতিক বার্তাও দিয়েছেন মোদী। কী সেই বার্তা? কংগ্রেসের এক নেতা বললেন, “দেওয়াল লিখন স্পষ্ট পড়তে পারছেন মোদী। বুঝতে পারছেন, বিজেপি তো নয়, এনডিএর শরিকদের দিয়েও সরকার হবে না। তাই এনডিএর বাইরের নেতাদেরও কাছে টানার বার্তা দিচ্ছেন। পরশু মনোনয়ন পেশের সময়ও তাই নীতীশ কুমার, উদ্ধব ঠাকরেদের নিয়ে যাচ্ছেন। গত পাঁচ বছরে যে শরিকদের উপেক্ষাই করে এসেছেন মোদী ও অমিত শাহ।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narendra Modi Politics Barack Obama
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE