Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

‘যুধিষ্ঠির’-এর নিয়োগে পুণে এ বার কুরুক্ষেত্র

এক সময় এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলেছেন ঋত্বিক ঘটক। শ্যাম বেনেগাল, গিরিশ কারনাড, আদুর গোপালকৃষ্ণনের মতো ব্যক্তিত্বরা দীর্ঘদিন সামলেছেন চেয়ারম্যানের পদ। সেই একই আসনে এ বার বসেছেন অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। আর সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কাল থেকে ক্লাস বয়কট শুরু করেছেন পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)–র ছাত্রছাত্রীরা।

গজেন্দ্র চৌহান

গজেন্দ্র চৌহান

নিজস্ব প্রতিবেদন
শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৫ ০৩:২৯
Share: Save:

এক সময় এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব সামলেছেন ঋত্বিক ঘটক। শ্যাম বেনেগাল, গিরিশ কারনাড, আদুর গোপালকৃষ্ণনের মতো ব্যক্তিত্বরা দীর্ঘদিন সামলেছেন চেয়ারম্যানের পদ। সেই একই আসনে এ বার বসেছেন অভিনেতা গজেন্দ্র চৌহান। সৌজন্যে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। আর সেই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গত কাল থেকে ক্লাস বয়কট শুরু করেছেন পুণে ফিল্ম অ্যান্ড টেলিভিশন ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়া (এফটিআইআই)–র ছাত্রছাত্রীরা। নতুন চেয়ারম্যানকে তাঁরা এতটাই অপছন্দ করছেন যে শুধু ক্লাস বয়কটই নয়, ওই প্রতিষ্ঠানের প্রশাসনিক কাজের দফতরগুলিও বন্ধ রেখেছেন তাঁরা।

গজেন্দ্র চৌহান নামে কোনও অভিনেতাকে মনে করতে অনেকেরই অসুবিধা হতে পারে। আসলে নিজের নামে নয়, ইনি বিখ্যাত তাঁর অভিনীত একটি নির্দিষ্ট চরিত্রের জন্য। বি আর চোপড়ার ‘মহাভারত’ সিরিয়ালে যুধিষ্ঠির হয়েছিলেন গজেন্দ্র। তার পর তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য ভূমিকায় অভিনয় করতে দেখা যায়নি তাঁকে। কিন্তু প্রায় দশ বছর ধরে বিজেপির পরিচিত মুখ তিনি। বিজেপির জাতীয় কর্মসমিতিতেও গুরুত্বপূর্ণ পদে দেখা গিয়েছে তাঁকে। এ হেন গজেন্দ্রকে নিয়ে গত কয়েক দিন ধরেই উত্তপ্ত পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউট।

কাল থেকে কার্যত সব থিয়োরি ও প্র্যাক্টিকাল ক্লাস করা বন্ধ করে দিয়েছেন এখানকার শ’দেড়েক ছাত্রছাত্রী। বন্ধ ফিল্ম নিয়ে ডিপ্লোমার কাজও। প্রায় ৭০-৮০ জন পড়ুয়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন প্রশাসনিক দফতরে দফতরে ঘুরে বন্ধ করে দিয়েছেন সেখানকার কাজকর্মও। তাঁদের দাবি একটাই। নয়া চেয়ারম্যানকে না সরানো হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য এই ধর্মঘট চলবে। ফিল্ম ইনস্টিটিউটে ঢোকার মুখেই গেটের এক পাশে বিশাল গ্রাফিতিও আঁকা হয়েছে। তাতে বড় বড় করে লেখা, ‘‘গজেন্দ্র রিজাইন অ্যান্ড লিভ।’’ বার্তাটা ছোট্ট অথচ খুবই স্পষ্ট। একটা বড় সময় গজেন্দ্রকে টিভি বা ফিল্মে অভিনয় করতে দেখা যায়নি বটে। তবে বিভিন্ন টিভি চ্যানেলে টেলি শপিংয়ের জন্য যে বড় বড় স্লট ধরে রাখা থাকে, তাতে মাঝেমধ্যেই দেখা যায় তাঁকে।

ছাত্র সংগঠনের প্রধান হরিকৃষ্ণন নাচিমুথুর অভিযোগ, শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থের জন্যই এত বড় পদে বসানো হয়েছে গজেন্দ্রকে। তাঁর কথায়, ‘‘এক জন ব্যক্তি যাঁর বিজেপির প্রতি রাজনৈতিক আনুগত্য রয়েছে, প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তন চেয়ারম্যানদের মতো যাঁর ফিল্ম নিয়ে দূরদৃষ্টি বা জ্ঞান কোনওটাই নেই, তাঁর এই পদে নিয়োগ গোটা প্রক্রিয়াটার উপরই বড় প্রশ্নচিহ্ন ঝুলিয়ে দেয়।’’

শুধু ছাত্র সংগঠনই নয়, পুণে ফিল্ম ইনস্টিটিউটের বেশ কিছু শিক্ষকও কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। চিত্রনাট্যকার অঞ্জুম রাজাবলি বললেন, ‘‘এফটিআইআই ফিল্ম নিয়ে পড়াশোনার জন্য শ্রেষ্ঠ প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এমন একটা সময় দিয়ে এই প্রতিষ্ঠান যাচ্ছে, যখন শিক্ষাদানের বিষয়টিতেই ভীষণ ভাবে দূরদর্শিতার অভাব রয়েছে। চৌহান একেবারেই অযোগ্য ব্যক্তি। ফিল্ম শিক্ষা নিয়ে ওঁর কোনও অভিজ্ঞতাই নেই।’’ যাঁকে ঘিরে এত বিতর্ক, সেই গজেন্দ্র অবশ্য অনভিজ্ঞতার অভিযোগ একেবারেই মানতে চাননি। একটি চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে তিনি বলেছেন, ‘‘তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে আমি ফিল্ম আর টেলিভিশন জগতের সঙ্গে যুক্ত। আমাকে একটু সুযোগ দেওয়া হোক। কাজ করতে দেওয়া হোক। এফটিআইআই-এর উন্নতি সাধনই হবে আমার এক মাত্র কাজ।’’ গজেন্দ্র যা-ই বলুন না কেন, চিড়ে ভেজেনি। প্রতিষ্ঠানের অচলাবস্থা নিয়ে উদ্বিগ্ন ডিরেক্টর ডি নারায়ণন জানিয়েছেন, ছাত্র-ছাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে গোটা বিষয়ের একটা শান্তিপূর্ণ সমাধানের চেষ্টা চলছে।

কিন্তু তাতে বিতর্ক তো আর থামছে না। আইআইটি মাদ্রাজের ছাত্র সংগঠন এপিএসসি-কে নিষিদ্ধ করার সময় শিক্ষার গৈরিকীকরণ নিয়ে যথেষ্ট হই চই হয়েছিল। গোটা ঘটনার পিছনে কেন্দ্রীয় মানব সম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রকের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছিল তখন। খোদ কংগ্রেসের সহ–সভাপতি রাহুল গাঁধী কেন্দ্রীয় সরকারকে এক হাত নিয়েছিলেন। আজও দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধিরা রাহুলের সঙ্গে দেখা করেছেন। যে ভাবে সারা দেশে শিক্ষার গৈরিকীকরণ চলছে, তা নিয়ে তাঁরা নিজেদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাহুলের কাছে। শুধু রাজনৈতিক দলগুলিই নয়, এফটিআইআই নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন প্রতিষ্ঠানের প্রাক্তনীরাও। তালিকায় রয়েছে জাতীয় পুরস্কার বিজয়ী পরিচালক জে বড়ুয়ার নাম। তাঁর বক্তব্য, ‘‘ব্যক্তিগত ভাবে আমি গজেন্দ্রের বিরোধী নই। কিন্তু যে ভাবে তাঁকে নিয়োগ করা হয়েছে, সেই পদ্ধতি নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন। এফটিআইআই-এর মাথায় বসবেন এমন এক জন, যাঁর প্রতিভা নিয়ে সন্দেহের অবকাশ থাকবে না। প্রতিষ্ঠানের শুভাকাঙ্খী হয়ে এমনটাই তো চাইব। এ রকম না হলেই কিন্তু মানুষ বিষয়টি পছন্দ করবে না।’’

বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরে সরিয়ে রেখেছে বিজেপিও। আজ বিজেপির মুখপাত্র সম্বিৎ পাত্র বলেন, ‘‘এ নিয়ে যা বলার সরকারই বলবে।’’ কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের মাথায় যে দু’জন রয়েছেন, সেই অরুণ জেটলি আর রাজ্যবর্ধন রাঠৌর অবশ্য এ নিয়ে কোনও কথাই বলতে চাননি।

গজেন্দ্র কিন্তু বলেছেন, ‘‘সোশ্যাল মিডিয়া থেকে জানতে পারলাম আমার নিয়োগ নিয়ে বিতর্ক হচ্ছে। যাঁরা গোটা বিষয়টায় রাজনীতির রং চড়াচ্ছেন, তাঁরা কিন্তু ভুলে যাচ্ছেন, আমি বিজেপি করছি মাত্র দশ বছর। আর অভিনয় জগতের সঙ্গে আমি জড়িত পঁয়ত্রিশ বছর।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE