Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪
National News

‘সেনার এক চড়েই সেদিন গড়গড় করে সব বলে দিয়েছিল মাসুদ আজহার’

মোহনানির স্পষ্ট মনে আছে, আজহার বলত, ‘‘আমার জনপ্রিয়তাকে ছোট করে দেখছেন আপনারা। আইএসআই আমাকে ছাড়িয়ে পাকিস্তানে নিয়ে নিয়ে যাবেই।’’

জইশ-ই-মহম্মদ চিফ মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র

জইশ-ই-মহম্মদ চিফ মাসুদ আজহার। —ফাইল চিত্র

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ২০:৫৬
Share: Save:

তার ভয়ে শুধু ভারত নয়, গোটা বিশ্বই কার্যত সন্ত্রস্ত। ভারতে সংসদ হামলা, পঠানকোট, উরি থেকে সাম্প্রতিক পুলওয়ামা হামলার মাস্টারমাইন্ড সে। কিন্তু সেই মওলানা মাসুদ আজহারই ‘দুর্বল’ প্রকৃতির মানুষ। সেনার এক চড় খেয়েই নাকি সব গড়গড় করে বলে দিয়েছিল সে। ১৯৯৪ সালে কাশ্মীরে গ্রেফতার হওয়ার পর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিলেন, এমন এক পদস্থ পুলিশ কর্তা এই দাবি করে জইশ-ই-মহম্মদের চাঁই আজহার সম্পর্কে আরও অনেক কথাই বলেছেন। তবে জেরার সময় আজহার বহু বার বলেছে, ‘আইএসআই তাকে ছাড়িয়ে নিয়ে যাবেই’, এমনই দাবি ওই পুলিশ কর্তার।

১৯৯৪ সাল। পর্তুগিজ পাসপোর্ট নিয়ে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে ঢুকে কাশ্মীরে চলে যায় মাসুদ আজহার। সেখানেই দক্ষিণ কাশ্মীরের অনন্তনাগ থেকে ফেব্রুয়ারিতে গ্রেফতার হয় আজহার। তার পর থেকে ১৯৯৯ সালে কন্দহর কাণ্ডে ছাড়া পাওয়ার আগে পর্যন্ত কাশ্মীরের কোট বলওয়াল জেলই ছিল কার্যত তার অস্থায়ী ঠিকানা।

অন্য দিকে সিকিমের প্রাক্তন ডিজি অবিনাশ মোহনানি প্রায় দু’দশক ধরে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগে কাজ করেছেন। ১৯৮৫ ব্যাচের এই আইপিএস অফিসার ওই সময় ছিলেন গোয়েন্দা বিভাগের কাশ্মীর ডেস্কে। সেই সূত্রেই বহু বার মাসুদ আজহারকে জেরা করেছেন মোহনানি। সেই মোহনানিই মাসুদ আজহারের ‘চরিত্র’ নিয়ে মুখ খুলেছেন। সংবাদ সংস্থা পিটিআই-কে তিনি জানিয়েছেন, সেনা অফিসারের এক থাপ্পড় খাওয়ার পরই প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল আজহার। তার পরই সব কথা বলে দিয়েছিল।

আরও পডু়ন: ১৭ ঘণ্টার লড়াই শেষ, নিহত কামরান-সহ তিন জঙ্গি, চার সেনা ও এক পুলিশকর্মীর মৃত্যু

স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে মোহনানি বলেন, ‘‘কোট বলওয়াল জেলে বহুবার মাসুদ আজহারকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছি। ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরা করা হয়েছে। কিন্তু কখনও কড়া ‘দাওয়াই’ দিতে হয়নি আজহারকে। কারণ, সামান্য চাপ দিলেই গড়গড় করে সমস্ত তথ্য দিয়ে দিত আজহার। এমনকি, কোনও বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলে এমন সব খুঁটিনাটি তথ্য দিয়ে দিত আজহার, যা আমরা আশাই করতে পারতাম না।’’

তবে কি এতটাই সহজ-সরল ছিল বর্তমান জইশ প্রধান? এই প্রশ্নেই আজহার সম্পর্কে যে তথ্য দিয়েছেন মোহনানি, সেটা কার্যত বিস্ফোরক। যদিও সেই সময় গোয়েন্দা কর্তাদের মনে হয়েছিল, শুধুই ভয় দেখাতেই আজহার ওই সব কথা বলেছিল। কী সেই তথ্য? মোহনানি বলছেন, আজহার মাঝেমধ্যেই বলত, তাকে এ দেশে বেশি দিন আটকে রাখা যাবে না। মোহনানির স্পষ্ট মনে আছে, আজহার বলত, ‘‘আমার জনপ্রিয়তাকে ছোট করে দেখছেন আপনারা। আইএসআই আমাকে ছাড়িয়ে পাকিস্তানে নিয়ে নিয়ে যাবেই।’’

আজহার যে হাওয়ায় সেই কথা বলত না, তার প্রমাণও মিলেছিল একাধিক বার। তার গ্রেফতারির ১০ মাসের মাথায় দিল্লিতে কয়েক জন বিদেশি পর্যটককে অপহরণ করে জঙ্গিরা। তারা আজহারের মুক্তির দাবি জানায়। কিন্তু ওই অপহরণ কাণ্ডে ওমর শেখ গ্রেফতার হওয়ায় উদ্দেশ্য সফল হয়নি। শেষ পর্যন্ত ১৯৯৯ সালে কাঠমান্ডু থেকে নয়াদিল্লি আসার পথে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান অপহরণ করে কন্দহরে নিয়ে যায় জঙ্গিরা। পরিবর্তে এই মাসুদ আজহার, ওমর শেখ এবং মুস্তাক আহমেদ জারগার অরফে লাটরামকে ছেড়ে দিয়ে আসে ভারতীয় বিদেশ মন্ত্রক।

আরও পড়ুন: দাদা মাসুদ আজহারের ছায়ায় পাকিস্তানে বসে জইশের ফিদায়েঁ অপারেশন চালাচ্ছে আসগর

কিন্তু ভারত থেকে ‘মুক্তি’ পাওয়ার আগে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়ে গিয়েছিল জইশ-ই-মহম্মদের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য। মোহনানি জানিয়েছেন, কী ভাবে অল্প বয়সী যুবকদের মগজ ধোলাই করে জঙ্গি দলে নিয়ে আসা হয়, পাকিস্তানের মাটিতে কী ভাবে জঙ্গি শিবিরগুলি চলে সে সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দিয়েছিল আজহার। সেই সময় হরকত-উল-মুজাহিদিন এবং হলকত-উল জেহাদ-ই-ইসালমি জঙ্গি গোষ্ঠী মিলে গিয়ে হরকত উল আনসার জঙ্গি গোষ্ঠী তৈরি হয়েছিল। সেই সম্পর্কেও বহু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছিল আজহার।

ভারতে কী উদ্দেশ্যে ঢুকেছিল আজহার, সে সম্পর্কেও কার্যত সব কথাই বলেছিল আজহার, জানিয়েছেন মোহনানি। সে জানিয়েছিল, বাংলাদেশ হয়ে ভারতে আসার পর প্রথমেই উত্তরপ্রদেশের সাহারানপুরে গিয়েছিল আজহার। তার পর সেখান থেকে চলে যায় দক্ষিণ কাশ্মীরে। মোহনানির স্মতিতে ফিরে এসেছে, আজহার বলেছিল, ‘‘পায়ে হেঁটে এলওসি হয়ে তার পক্ষে ভারতে ঢোকা সম্ভব ছিল না। তাই সে পর্তুগালের পাসপোর্ট করে বাংলাদেশ হয়ে ভারতে প্রবেশ করে।’’

জেরার জন্য বহুবার মুখোমুখি হওয়ার জেরে দু’জনের মধ্যে ব্যক্তিগত ভাবেও পরিচিতি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। এক প্রকার সম্পর্কও তৈরি হয়ে গিয়েছিল। মোহনানি বলেন, ১৯৯৭ সালে তাঁর বদলির আগে শেষ বার দেখা হয় আজহারের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘‘সেই সময় আজহারকে আমি জানাই আমি অন্য দায়িত্ব পেয়ে চলে যাচ্ছি। আজহার আমাকে শুভকামনাও জানায়।

কিন্তু সেই মাসুদ আজহারই যে পরবর্তী কালে ভারত তথা গোটা বিশ্বের কাছেই মোস্ট ওয়ান্টেড হয়ে উঠবে, সেই সময় কি আঁচ পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা?

(দেশজোড়া ঘটনার বাছাই করা সেরা বাংলা খবর পেতে পড়ুন আমাদের দেশ বিভাগ।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE