Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Pulwama Terror Attack

দাদা মাসুদ আজহারের ছায়ায় পাকিস্তানে বসে জইশের ফিদায়েঁ অপারেশন চালাচ্ছে আসগর

তা হলে পাঠানকোটে বায়ুসেনা ছাউনিতে হামলা থেকে শুরু করে নাগরোটা সেনা ছাউনিতে ফিদায়েঁ হামলা, পুলওয়ামাতেই গত অগস্ট মাসের আত্মঘাতী হামলা এবং গত বৃহস্পতিবারে কনভয়ে হামলার পিছনে মূল মাথা কে?

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ১৭:০৩
Share: Save:

ছ’বছরের বেশি সময় ধরে কাকপক্ষীও দেখতে পায়নি তাঁকে। গোয়েন্দাদের দাবি, পাকিস্তানের মাটিতে যে জেহাদিরা গত কয়েক বছরে প্রশিক্ষণ নিতে গিয়েছে তারাও এক বারও দেখতে পায়নি মৌলানাকে। তবে সবটাই চলে তার নামে। ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটা অংশের দাবি, জইশের মাথা মৌলানা মাসুদ আজাহারের দু’টি কিডনিই বিকল। নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয়। কার্যত শয্যাশায়ী ষাট ছুঁই ছুঁই মোস্ট ওয়ান্টেড এই জঙ্গি নেতা।

তা হলে পাঠানকোটে বায়ুসেনা ছাউনিতে হামলা থেকে শুরু করে নাগরোটা সেনা ছাউনিতে ফিদায়েঁ হামলা, পুলওয়ামাতেই গত অগস্ট মাসের আত্মঘাতী হামলা এবং গত বৃহস্পতিবারে কনভয়ে হামলার পিছনে মূল মাথা কে?

ভারতীয় গোয়েন্দাদের একটি অংশের দাবি, দাদা মাসুদের ছায়াতে বসেই জইশের সাম্প্রতিক সমস্ত অপারেশন চালাচ্ছে মৌলানার ছোট ভাই মৌলানা আব্দুল আসগর রউফ। তালিবান জঙ্গি বিশেষজ্ঞ এক ভারতীয় গোয়েন্দা বলেন, “মাসুদ আজাহার লড়াই বা অপারেশনে কখনওই খুব পারদর্শী নন। তিনি মগজ ধোলাইয়ে দক্ষ। হরকত উল আনসারের হয়ে তালিবান জঙ্গিদের শিবিরে মাসুদ ৪০ দিনের প্রশিক্ষণ শিবির শারীরিক কারণে শেষ করতে পারেননি। কিন্তু মগজ ধোলাই এবং প্রচারে তাঁর পারদর্শিতার জন্য হরকত উল আনসার তাকে প্রচার বিভাগের মাথায় বসায়।” স্কুল শিক্ষকের ছেলে মাসুদ আজহার করাচির কাছে একটি ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনার সময়তেই যোগ দেন তালিবান পন্থী জঙ্গি সংগঠন হরকত-উল-আনসারে। ১৯৯৯ সালে এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান ছিনতাই করে কান্দাহারে নিয়ে গিয়ে মাসুদ সহ তিন কট্টর হরকত জঙ্গিকে মুক্ত করে হরকত জঙ্গিরা। ছাড়া পাওয়ার পরেই নিজের শহরে জইশ-ই-মোহাম্মদ সংগঠন গড়ে তোলে মাসুদ।

সেই মাসুদের হয়ে গত প্রায় দশ বছর ধরে সমস্ত ‘অপারেশন’ সামলাচ্ছে তার ভাই রউফ। ১১ জন ভাইবোনের মধ্যে ছোট রউফ দাদার হাত ধরেই নাম লেখায় তালিবান শিবিরে। দীর্ঘ দিন সে ‘মুজাহিদ’ হিসেবে আফগানিস্তানে সোভিয়েত সেনার সঙ্গে লড়েছে। নিজে যেমন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ তেমনই যে কোনও অপারেশনের ছক তৈরিতেও তার দক্ষতা রয়েছে। গোয়েন্দাদের দাবি, বিমান ছিনতাইয়ে নেতৃত্ব দিয়েছিল মাসুদেরই এক ভাই আর গোটা পরিকল্পনা ছিল রউফের।

আরও পড়ুন: পুলওয়ামা কাণ্ডের মাস্টারমাইন্ড, মাসুদ ঘনিষ্ঠ কামরান খতম, সংঘর্ষে হত চার সেনাও

আরও পড়ুন: নজরদারি এড়াতে সিমহীন মোবাইল দিয়ে যোগাযোগ রাখছিল পুলওয়ামার চক্রীরা!

জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র এক শীর্ষকর্তা, যিনি ২০১৬ সালের নাগরোটা সেনা ছাউনির হামলার তদন্ত করেছেন, তিনি বলেন, “ওই হামলার তদন্ত করতে গিয়ে আমরা রউফের সরাসরি যোগ খুঁজে পেয়েছি। গোটা অপারেশনের ছক পাকিস্তানের পঞ্জাব প্রদেশের বাহওয়ালপুরের ডেরাতে বসে করেছিল সে।” এনআইএ চার্জশিটেও দাদা মৌলানা মাসুদ আজাহারের সঙ্গে অভিযুক্ত হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে ৪২ বছরের রউফের নাম। গোয়েন্দাদের দাবি, দাদা মাসুদের জীবনের ঝুঁকি বাড়তে থাকায় তাঁর নির্দেশে বকলমে জইশের সংগঠন পরিচালনার পুরো দায়িত্ব বর্তায় রউফের উপর। এমনকি, ২০০৮ সালে পাকিস্তানে একটি স্কুলে কিছু তালিবান জঙ্গি স্কুলছাত্র এবং শিক্ষকদের পণবন্দি করলে রউফকেই পাক সরকার নিয়ে গিয়েছিল জঙ্গিদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য।

সেনা গোয়েন্দাদের একটি অংশ দাবি করেছে, দাদা মাসুদের দেখানো পথ ধরেই ভারতে একের পর এক আত্মঘাতী হামলার পরিকল্পনা করে রউফ। সেই অনুসারে দক্ষিণ কাশ্মীর এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর থেকে শুরু হয় কিশোর এবং তরুণদের নিয়োগ করা। দক্ষিণ কাশ্মীর ছাড়া উত্তর, মধ্য এবং গন্ডেরবাল জেলাতে জইশের তেমন কোনও সংগঠন নেই। গোয়েন্দাদের দাবি, তাই ফিদায়েঁ হামলার জন্য নিয়োগে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের উপর বেশি নির্ভর করতে হয় জইশকে। গোয়েন্দাদের একটি অংশের দাবি, ওই নয়া রিক্রুটদের প্রথমে বাহওয়ালপুরে আল রহমত ট্রাস্ট (জইশের ওভার গ্রাউন্ড বা প্রকাশ্য সংগঠন)-র সদর দফতরে শুরু হয় মগজধোলাই। সেখানে মৌলানা মাসুদের ভিডিও এবং অডিও টেপ দেখিয়ে এবং শুনিয়ে উদ্ধুদ্ধ করা হয় জিহাদে। তার পর শুরু হয় পাক অধিকৃত কাশ্মীরে অস্ত্র প্রশিক্ষণ এবং সব শেষে ফিদায়েঁ হামলার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত করার বিশেষ প্রশিক্ষণ।

আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া এই জঙ্গি সন্ত্রাসগুলো সম্পর্কে জানেন?

আরও পড়ুন: কোন কোন বিধ্বংসী উপায়ে এখন পাকিস্তানে আঘাত হানতে পারে ভারত

ভারতীয় গোয়েন্দারা দাবি করেছেন, সে রকমই ফিদায়েঁ হামলার জন্য প্রস্তুত দু’টি জমায়েতে গত অক্টোবরে পাক অধিকৃত কাশ্মীরের রাওয়ালাকোট এবং কোটলিতে দেখা গিয়েছিল রউফকে। সেখানে মৌলানার একটি বার্তা নয়া রিক্রুটদের শোনানো হয়। ওই ফিদায়েঁ দলকে সামনে রেখেই জইশ পরবর্তীতে দাবি করেছিল তারা আফজল গুরু সুইসাইড স্কোয়াড গঠন করেছে। তাই সেনা গোয়েন্দাদের আশঙ্কা, উপত্যকায় আরও এ ধরনের আত্মঘাতী হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে জইশ। সূত্রের খবর, সেনা গোয়েন্দারা রউফের সমস্ত গতিবিধির লাগাতার খবর নিচ্ছেন। কারণ, এ বার তাঁদের মূল টার্গেট মৌলানা রউফ আসগর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE