এ-কাল: রবিবার ট্রেন ছাড়ার আগে স্মারক ব্যাজ ঠিক করে নিচ্ছেন এক টিকিট পরীক্ষক। ছবি: দীপঙ্কর মজুমদার।
হরেক রকমের ফুলে সাজানো ইঞ্জিন-সহ ২০ কামরার গোটা ট্রেনটিই। প্রতিটি কামরার সামনে রেকাবিতে সুদৃশ্য গ্রিটিংস কার্ড আর গোলাপ নিয়ে দাঁড়িয়ে রেলকর্মীরা। সকলেরই পরনে কালো ব্লেজার। বুকে হাওড়া-নয়াদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেসের যাত্রার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ ব্যাচ।
কামরায় ওঠার মুখে প্রত্যেক যাত্রীর হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে ফুল আর অভিনন্দনপত্র। কামরায় বসানো পাবলিক অ্যাড্রেস সিস্টেমে মৃদু গান ও বাজনা। প্রতি বারের ঘোষণায় স্বাগত জানানো হচ্ছে যাত্রীদের।
নেপাল থেকে আসা কুণাল অগ্রবালের পরিবার এবং ঢাকা থেকে আসা পোখরাজ আহমেদ ও মহম্মদ জাকির হোসেন জানতেন না যে, এ দিন রাজধানী এক্সপ্রেসের প্রথম যাত্রার ৫০ বছর পূর্ণ হল। প্ল্যাটফর্মে পৌঁছনোর পরে রেলের বাড়তি আপ্যায়নে তাঁরা অভিভূত। কুণাল রাজধানী এক্সপ্রেসের নিয়মিত যাত্রী না-হলেও ঢাকার পোখরাজ ও জাকির ব্যবসার কাজে এ দেশে এলে দিল্লি সফরের জন্য রাজধানীকেই বেছে নেন। পোখরাজ বলেন, ‘‘বিমানে ঢাকা-কলকাতা যাতায়াত করলেও দিল্লি সফরে রাজধানীর টান কাটাতে পারিনি। অনেক বছরের অভ্যেস।’’
সে-কাল: পঞ্চাশ বছর আগে রাজধানীর যাত্রা শুরুর দিন। ছবি: আনন্দবাজার আর্কাইভ
৫০ বছর বয়সি রাজধানী এক্সপ্রেসে ৩০ বছর ধরে সফর করছেন বাগুইআটির বাসিন্দা, কেন্দ্রীয় বিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষিকা ইলা চট্টোপাধ্যায়। এ দিন রাজধানীর বাতনুকূল প্রথম শ্রেণির যাত্রী ছিলেন তিনি। বললেন, ‘‘তিন দশক ধরে রাজধানীতে যাতায়াত করছি। আজ এমন আপ্যায়নে অন্য রকম লাগছে।’’
১৯৬৯ সালের ৩ মার্চ চালক জি এল টচারকে পতাকা নেড়ে প্রথম রাজধানী এক্সপ্রেস ছাড়ার সঙ্কেত দিয়েছিলেন গার্ড ওএস লেভি। ৫০ বছর পেরিয়ে এ দিন রাজধানীর গার্ড ছিলেন অরুণকুমার দে। চালকের ভূমিকায় ছিলেন এস কেরকেট্টা এবং মহম্মদ রফিক মণ্ডল। তাঁরা
জানাচ্ছেন, ওই বিশেষ ট্রেনের এ দিনের সফরে সঙ্গী হওয়ার সূত্রে ইতিহাসের সাক্ষী হতে পারাটা অন্য রকম অভিজ্ঞতা।
ঘড়িতে বেলা ২টো বাজার কিছু আগে রাজধানী এক্সপ্রেসের ৫০ বছর উপলক্ষে কেক কাটেন পূর্ব রেলের জেনারেল ম্যানেজার হরীন্দ্র রাও। প্রকাশ করা হয় একটি বিশেষ ডাকটিকিটও। শুধু গোলাপ, কার্ড আর গানেই সীমাবদ্ধ ছিল না এই বিশেষ দিনের আপ্যায়ন। রসনাতৃপ্তির জন্যও ছিল বিশেষ আয়োজন। নিয়মিত পদের সঙ্গে সঙ্গে ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড টুরিজম কর্পোরেশন বা আইআরসিটিসি এ দিন যাত্রীদের ফিশফ্রাই, রসগোল্লা, সূপ, আইসক্রিম-সহ নানা পদ পরিবেশন করেছে।
তবে অনুষ্ঠানের সুর কেটে যায় ট্রেন ছাড়ার মুহূর্তে এক যুবক চেন টানায়। পরে আরপিএফ তাঁকে আটক করে। শহরের বিভিন্ন প্রান্তে একটি রাজনৈতিক দলের মিছিলকে কেন্দ্র করে এ দিন ব্রেবোর্ন রোড এবং স্ট্র্যান্ড রোডে ব্যাপক যানজট হয়। জনা দশেক যাত্রী সময়মতো স্টেশনে পৌঁছতে পারেননি। শেষ মুহূর্তে ফের ট্রেন থামায় কোনও মতে তাতে ওঠার সুযোগ পান তাঁরা। তাতেই নির্ধারিত সময়ের চেয়ে প্রায় ১০ মিনিট দেরি হয়ে যায় রাজধানী এক্সপ্রেসের।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy