সুষমা স্বরাজ ও রাজনাথ সিংহ। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদীর অস্বস্তি বাড়িয়ে সুষমা স্বরাজের পক্ষে প্রকাশ্যে মন্তব্য করলেন রাজনাথ সিংহ। নিজের শিবিরে সুষমার ‘একার লড়াইয়ে’ এই প্রথম বিজেপির কোনও শীর্ষস্থানীয় নেতা বা মন্ত্রীর বক্তব্য এল।
দিল্লিতে আজ এক অনুষ্ঠানের শেষে রাজনাথ বেরিয়ে যাওয়ার মুখে প্রশ্ন করা হয়, সুষমাকে যে ভাবে কদর্য ভাষায় আক্রমণ করা হচ্ছে, সে বিষয়ে তিনি কী মনে করেন? প্রশ্ন শুনে থেমে যান রাজনাথ। বলেন, ‘‘আমার মতে বিলকুল ভুল হচ্ছে।’’ বিজেপি সূত্রের খবর, সোশ্যাল মিডিয়ায় আক্রমণ শুরু হওয়ার পরে সুষমাকে ফোনও করেছিলেন রাজনাথ। কিন্তু গেরুয়া শিবিরের রোষ দেখে নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহরা যেহেতু প্রকাশ্যে কোনও মন্তব্য করছেন না, তাই এই ক’দিন চুপ ছিলেন। আজও চাইলে প্রশ্নটি এড়িয়ে চলে যেতে পারতেন। কৌশলগত কারণে তা করেননি। প্রথম বার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তেই নিজের মনোভাব প্রকাশ করে দিলেন।
মোদী-শাহ চুপ ছিলেন শুজাত বুখারির হত্যার পরেও। রাজনাথই প্রথম প্রকাশ্যে এর নিন্দা করেন। আগেও স্পর্শকাতর বিষয়ে মোদী যখন নীরব থেকেছেন, তখন রাজনাথকেই মুখ খুলতে দেখা গিয়েছে। কংগ্রেসের মুখপাত্র প্রিয়ঙ্কা চতুর্বেদী গত কাল অভিযোগ এনেছেন, রামের ছবিওয়ালা একটি টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে তাঁর ১০ বছর বয়সি মেয়ের ক্ষতি করার হুমকি দেওয়া হয়েছে কুৎসিত ভাষায়। রাজনাথ আজ জানান, এ বিষয়ে তিনি তদন্তের নির্দশ দিয়েছেন।
সুষমা নিজের দলের আর কোনও নেতার সমর্থন না পেলেও বিরোধী শিবির থেকে ভরপুর সমর্থন পাচ্ছেন। কংগ্রেস আগেই বিবৃতি দিয়ে নিন্দা করেছে এর। আজ সুষমার পাশে দাঁড়িয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইট করেছেন, ‘‘সুষমা স্বরাজজির বিরুদ্ধে যে ভাষা ব্যবহার করা হচ্ছে, আমি তার তীব্র নিন্দা করছি। তিনি এক জন প্রবীণ রাজনীতিক। অবশ্যই পরস্পরকে সম্মান করতে হবে। কখনওই আমরা গালিগালাজ করতে পারি না।’’
সোশ্যাল মিডিয়ায় বিজেপির পক্ষ থেকে আজ নতুন প্রচার শুরু হয়েছে, বিদেশ থেকে ফিরে সুষমা লখনউয়ের ওই দম্পতিকে পাসপোর্ট দেওয়ার বিষয়ে কিছু না জানার ‘ভান’ করেছেন। অথচ তাঁর ব্যক্তিগত সচিবের হস্তক্ষেপেই বিদেশ মন্ত্রকের পক্ষ থেকে লখনউ পাসপোর্ট দফতরে নির্দেশ গিয়েছিল। আরএসএসের দিল্লি শাখার মুখপাত্র রাজীব তুলি আজ ফের পাসপোর্ট প্রসঙ্গ টেনে টুইট করেছেন, সরকার আসে যায়, মন্ত্রীরাও (সুষমাজির প্রতি) আসে যায়। কিন্তু নীতি ও পদ্ধতি সর্বোচ্চ। এগুলিকে এড়িয়ে যাওয়া উচিত নয়। এটা সত্যিই খারাপ প্রশাসনের নমুনা।’’
বিজেপি এবং আরএসএসে এত গোসা থাকা সত্ত্বেও সুষমা লড়ে যাচ্ছেন নিজের মতো। টুইটারে ভোটও করিয়েছেন। যাতে তাঁর পক্ষে ৫৭ শতাংশ সমর্থন থাকলেও ৪৩ শতাংশ মনে করেন, সুষমার প্রতি এই আক্রমণ যথার্থ। তার পরেও সুষমা লেখেন, ‘‘গণতন্ত্রে মতভেদ হতেই পারে, কিন্তু ভাষা শালীন হওয়া উচিত।’’ কংগ্রেসের নেতাদের মতে, সুষমার এই প্রতিবাদ আসলে মোদী-শাহদের বিরুদ্ধেই। আজ প্রকাশ্যে মুখ খুলে রাজনাথও সেই শিবিরে যোগ দিলেন।
বিজেপির অন্দরেও কান পাতলে শোনা যাচ্ছে, ২০১৩ সালের আগে মোদীকে প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী করার তোড়জোরের সময় এই রাজনাথ, সুষমারাই ঘোর বিরোধিতা করেছিলেন। চার বছরে মোদীর জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়েছে। পরের লোকসভায় বিজেপির আসন কমলে রাজনাথ-সুষমার মতো বেশি গ্রহণযোগ্য কোনও মুখকে সামনে রাখার দাবি উঠতে পারে শরিকদের মধ্যে থেকে। সে কারণেই কি ধীরে ধীরে দলের মধ্যে থেকেও মোদী-বিরোধী অবস্থান নিচ্ছেন তাঁরা?
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy