নারী নির্যাতনের প্রতিবাদে মিছিল। সোমবার নয়াদিল্লিতে। ছবি: পিটিআই
দেহের বাঁ দিকের অংশ প্রায় নেই বললেই চলে। কুকুর খুবলে নিয়েছে আরও বেশ কিছু অঙ্গ। সাবাড় করে দিয়েছে হাত দু’টো। আধখাওয়া নগ্ন দেহটা তিন দিন ধরে আবর্জনায় পড়েছিল বলে অভিযোগ।
ময়নাতদন্ত করতে গিয়ে তাই শিউরে উঠেছেন চিকিৎসক এস কে দত্তারবাল। হরিয়ানার রোহতকে গণধর্ষণের শিকার মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণীর দেহ কাটাছেঁড়ার তত্ত্বাবধানের দায়িত্বে ছিলেন দত্তারবাল। তাঁর দাবি, গত তিরিশ বছরে এমন ভয়ানক অভিজ্ঞতা আর কখনও হয়নি।
যে ঘটনা ফিরিয়ে আনছে ২০১২ সালের ১৬ ডিসেম্বরের কথা। রাজধানীর বুকে নির্ভয়া-কাণ্ডের সেই স্মৃতি এখনও ফিকে হয়নি। কারও কারও বক্তব্য, রোহতকের ঘটনা বর্বরতায় দিল্লিকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে। রোহতক থেকে ৯ কিলোমিটার দূরে গাড্ডিখেরাগ্রামে গিয়ে আজ পুলিশ এই ঘটনায়অভিযুক্ত ন’জনের মধ্যে আট জনকে গ্রেফতার করে। এরা প্রত্যেকেইদোষ স্বীকার করেছে। নবমব্যক্তির খোঁজে দিনভর তৎপর ছিল পুলিশ। পরে জানা যায়, শীলকারাম নামে সেই লোকটি বিষ খেয়ে আত্মঘাতী হয়েছে।
রোহতক-হিসার জাতীয় সড়কের কাছে আকবরপুর নামে একটি গ্রামের মাঠ থেকে দিন পাঁচেক আগে উদ্ধার হয় ২৮ বছরের ওই তরুণীর পচা-গলা দেহ। দেহ বললেও ভুল বলা হবে। আধখাওয়া সেই মৃতদেহের হাত দু’টো ছিঁড়ে খেয়েছে কুকুর। আরও অনেক অঙ্গই খুঁজে পাওয়া যায়নি। দেে হর বাঁ দিকের অংশ প্রায় ছিলই না।
ভয়াবহতার এখানেই শেষ নয়। পুলিশ জানিয়েছে, ধর্ষণের পরে লাঠি, পাথর, কন্ডোম এমন সব জিনিস ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল তরুণীর গোপনাঙ্গে। ময়নাতদন্ত রিপোর্টেও স্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে এমন বীভৎসতার। তরুণীর গোপনাঙ্গে মিলেছে অসংখ্য ক্ষত। পেটের ভিতর থেকে পাওয়া গিয়েছে পাথর এবং ব্লেড।
আর সেই দেহ পরীক্ষার পরে এস কে দত্তারওয়ালের বক্তব্য, “গত ৩০ বছরে এমন বীভৎস ঘটনা দেখিনি। আঘাতের নমুনা দেখে মনে হয়েছে, তরুণীর মাথায় ভারী কিছু দিয়ে খুব জোরে আঘাত করা হয়েছিল। তাতে তিনি আংশিক অচেতন হয়ে পড়েন। তখনই গণধর্ষণ করা হয় তাঁকে।” দত্তারবালের দাবি, মেরে ফেলার আগে মেয়েটির শরীরে পাথর ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছিল। কেউ যাতে দেখতে না পায়, সেই জন্য সাত ফুট উঁচু পাঁচিল থেকে আবর্জনায় ছুড়ে ফেলে দেওয়া হয়েছিল দেহ। তিনি বলেছেন,মাথায় জোর আঘাত এবং গোপনাঙ্গে গুরুতর ক্ষত নিয়ে আর লড়তেপারেনি মেয়েটি।
ওই তরুণীর দিদি জানিয়েছেন, এ মাসের প্রথম দিনই পুলিশকে জানানো হয়েছিল, তাঁর বোন নিখোঁজ। সম্ভবত সে দিনই তরুণী মারা যান বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। তার দিন তিনেক পরে আধখাওয়া নগ্ন দেহটি খুঁজে পায় পুলিশ। দিদির অভিযোগ, “পুলিশ তিন দিন চুপচাপ বসে ছিল। আমরা তো সমাজের উঁচু-তলার লোক নই। তাই আমাদের বলেছিল, খুঁজতে থাকুন, পেয়ে যাবেন। বা উনি হয়তো নিজেই ফিরে আসবেন। পুলিশ যদি প্রথমেই সক্রিয় হতো, তা হলে বোন হয়তো মারা যেত না।” যদিও পুলিশ সেই অভিযোগ মানতে চায়নি।খুনি ও ধর্ষকদের ফাঁসি চেয়েছেন তরুণীর দিদি।
গণধর্ষণের শিকার মানসিক ভারসাম্যহীন ওই তরুণী মাস তিনেক আগে নেপাল থেকে রোহতকে এসেছিলেন চিকিৎসার জন্য। আদতে তিনি নেপালেরই বাসিন্দা। তরুণীর দিদি রোহতকে পরিচারিকার কাজ করেন। তাঁর বয়ান অনুযায়ী, “ফেব্রুয়ারির এক তারিখ সকালের পরে আর দেখা যায়নি ওকে।
আমার ছেলে সকালে যখন পড়াশোনা করছিল, বোন তখন ছাদে গিয়েছিল। তার পর আমি কাজে বেরিয়ে যাই। দুপুরে ছেলে জানাল বোনকেখুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।” মানসিক প্রতিবন্ধী তরুণী অবসাদে ভুগতেন বলে দাবি বোনের। তাই সে দিন কখন হঠাৎ বাড়ির বাইরে চলে গিয়েছেন, বোঝা যায়নি। দিদির আফশোস, “বোন যে আর ফিরবে না, তা তো স্বপ্নেও ভাবিনি।”
এই ঘটনায় পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার বিরুদ্ধে গত কাল থেকেই পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। ধর্ষণেরকথা প্রকাশ্যে আসার পরে হরিয়ানায় ক্ষমতাসীন বিজেপির সমালোচনায় সক্রিয় হয়েছে বিরোধী দল কংগ্রেস। প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ভূপেন্দ্র সিংহ হুডা-সহ এই নিয়ে মুখ খুলেছেন অনেক নেতাই। এআইসিসি মুখপাত্র রণদীপ সিংহ সুরজেওয়ালা আজ মুখ্যমন্ত্রী মনোহরলাল খাট্টারের তীব্রসমালোচনা করেন। বলেন, “ওদের এখনও ঘুম ভাঙেনি। বিজেপি লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে ‘বেটি বাঁচাও যোজনা’ করছে। অথচ খাট্টার বা তাঁর মন্ত্রিসভার কেউই নির্যাতিতার পরিবারের সঙ্গে দেখা করার সময়টুকু পর্যন্ত পাননি।”
জাপানি তরুণীকে ধর্ষণের নালিশ
ফের ভারতে বেড়াতে এসে যৌন নিগ্রহের অভিযোগ তুললেন এক বিদেশিনি। এ বার এক জাপানি তরুণীকে ধর্ষণের অভিযোগ উঠল জয়পুরের এক শহরতলিতে। অভিযোগ, বছর পঁচিশের এক তরুণ গাইড হিসাবে নিজের পরিচয় দিয়ে ধর্ষণ করেছে জাপানের বাসিন্দা ওই পযর্টককে। রবিবার দিনই জয়পুরে বেড়াতে এসেছিলেন বছর কুড়ির ওই জাপানি পর্যটক। সেখানেই জল মহল দেখতে গিয়ে তাঁর সঙ্গে আলাপ হয় অভিযুক্তের। নিজেকে গাইড বলে পরিচয় দিয়ে তরুণীর সঙ্গে ভাব জমায় ২৫ বছরের ওই তরুণ। আশপাশের জায়গাগুলি ঘুরিয়ে দেখানোর কথাও বলে তরুণীকে। সেই মতো নিজের মোটরসাইকেলে চাপিয়ে তরুণীকে সারা সকাল বিভিন্ন জায়গায় ঘোরায় সে। তরুণীর অভিযোগ, রবিবার গভীর রাতে মোজামাবাদ গ্রামের কাছে পরিত্যক্ত জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁকে ধর্ষণ করে অভিযুক্ত। ঘটনার পর ওই তরুণী স্থানীয় থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। অভিযুক্তের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy