শশী তারুরের লেখা বইয়ের প্রচ্ছদ।
পাঁচ রাজ্যে বিধানসভা ভোটের মুখে আজ এক মোক্ষম বোমা ফাটালেন শশী তারুর। গত প্রায় পাঁচ বছর ধরে প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত নরেন্দ্র মোদীর ‘মহান’ ভূমিকা নিয়ে দেশে-বিদেশে প্রকাশিত হয়েছে শত-শত বই। বিদেশি লেখক অ্যান্ডি মারিনো পর্যন্ত মোদীর জীবনীতে লিখেছেন, ‘‘গোধরা কাণ্ডেও মোদীর কোনও নেতিবাচক ভূমিকা ছিল না। বরং মোদী দাঙ্গা থামাতে চেয়েছিলেন।’’ আর আজ মনমোহন সিংহ রাজধানীতে প্রকাশ করলেন শশীর সাম্প্রতিকতম বই— ‘দ্য প্যারাডক্সিক্যাল প্রাইম মিনিস্টার, নরেন্দ্র মোদী অ্যান্ড হিজ ইন্ডিয়া।’
প্যারাডক্স শব্দটির অর্থ— যে কথা আপাতদৃষ্টিতে অসম্ভব বা স্ববিরোধী মনে হলেও প্রকৃতপক্ষে সত্যি। নিজের বইয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে এরই নানা উদাহরণ দিয়েছেন শশী। লিখেছেন, ‘‘এক দিকে নরেন্দ্র মোদী বলেন, সংবিধান নাকি তাঁর কাছে পবিত্র গ্রন্থ। অথচ বাস্তবে গাঁধী-নেহরু-অম্বেডকরের তিল তিল করে গড়ে তোলা সাংবিধানিক সংস্থাগুলি গত চার বছরে ধূলিসাৎ হয়ে গিয়েছে।’’ মোদী বলেছিলেন, ‘সবকা সাথ, সবকা বিকাশ।’ শশী পাল্টা পরিসংখ্যান দিয়েছেন কর্মহীনতা এবং সামাজিক ও অর্থনৈতিক অসাম্যেরা। বলেছেন, ‘‘বড়লোক আরও বড়লোক হচ্ছে। গরিব আরও গরিব।’’
প্রকাশিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব বুঝেছেন যে, ৫০৪ পৃষ্ঠার ওই বইটি নরেন্দ্র মোদী নামক বিজেপির সর্বরোগহর বটিকাকে সম্পূর্ণ উন্মোচিত করার এক ব্রহ্মাস্ত্র। শশী বলছেন, ‘‘মোদীকে বলা হয় গেমচেঞ্জার। এখন দেখা যাচ্ছে তিনি আসলে ‘নেমচেঞ্জার’। যোজনা কমিশন থেকে নীতি আয়োগ। ইলাহাবাদ থেকে প্রয়াগ রাজ। শশীর প্রশ্ন, ‘‘মৃতের শরীরে আতর ছড়ালে কি মৃত জীবিত হয়? আসলে মোদী যা বলেন তা তিনি করেন না।’’
বিজেপির নেতারা ওই বইটির বক্তব্যের তীব্র বিরোধিতা করেছেন। বিজেপির মুখপাত্র সুধাংশু ত্রিবেদী বলেন, ‘‘শশী কংগ্রেসের সাংসদ। তিনি নিরপেক্ষ নন। তিনি গ্লাসে রাখা অর্ধেক জল দেখে মন্তব্য করছেন, পুরো গ্লাসটা দেখছেন না।’’ শশীর বক্তব্য, ‘‘আমি অস্বীকার করছি না যে আমি কংগ্রেসের সাংসদ, তাই আমি সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ। কিন্তু আমি যুক্তিবাদী মন নিয়ে বিষয়টি বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করেছি।’’
২০০৯ সালে চেন্নাইয়ে প্রবাসী ভারতীয় দিবসে কংগ্রেসি এক কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর আমন্ত্রণে মোদীর সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজন সেরেছিলেনশশী। সেটাই ছিল দু’জনের প্রথম সাক্ষাৎ। শশী জানান, হাফ শার্ট, রিমলেস চশমা, ট্রিমড সাদা দাড়ির মোদীর সঙ্গে দীর্ঘ তর্ক-বিতর্ক হয়েছিল তাঁর। মতান্তর সত্ত্বেও মোদীর সক্রিয়, আধুনিক দিকটা তাঁর ভাল লেগেছিল। কিন্তু গত পাঁচ বছরে তাঁর মনে হয়েছে, মোদী যতটা দেশের উন্নয়ন করতে চেয়েছিলেন, তার চেয়ে তাঁকে অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়েছে নিজেকে নিয়ে।
এটাই এক ধরনের ‘নার্সিসিজম’ বা আত্মপ্রেম। বইয়ের প্রচ্ছদে দেখা যাচ্ছে, নিজের মোম-মূর্তিকে গভীর মনোযোগে ছুঁয়ে দেখছেন মোদী। শশীর কথায়, ‘‘মোদীর মধ্যে নেপোলিয়নের মতো ক্ষমতালিপ্সা ছিল। বুদ্ধিও ছিল। কিন্তু সাম্প্রদায়িকতা আর আত্মপ্রেম মোদীত্বকে হিন্দুত্বের যুপকাষ্ঠে বলি দিতে বাধ্য করেছে।’’
মনমোহন বলেন, ‘‘গালভরা প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন মোদী। কিন্তু তিনি ও তাঁর সরকার ভোটারদের দেওয়া কথা রাখেননি। তিনি জনতার প্রধানমন্ত্রী হতে চান। অথচ সাম্প্রদায়িক হিংসা, গোরক্ষকদের তাণ্ডব, গণপিটুনিতে খুন দেখেও নীরব থাকেন। মোদীর শাসনে দেশের ভাল হয়নি।’’ বিশ্ববিদ্যালয়গুলি থেকে শুরু করে সিবিআইয়ের মতো কেন্দ্রীয় সংস্থার পরিবেশের অবনতি নিয়েও অসন্তোষ প্রকাশ করেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদী আসলে বাস্তব নন। তিনি এক পরাবাস্তবতা। এই বইটি সেই মিথ্যাকে সত্য করার চেষ্টা ফাঁস করে দিয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy