Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
National News

ভয়াল রূপ নিচ্ছে কেরলের বন্যা, মৃত্যু ৩০০ ছাড়াল, যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

বন্যায় কেরলে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

বন্যায় কেরলে ভয়াবহ পরিস্থিতি। ছবি: টুইটারের সৌজন্যে।

সংবাদ সংস্থা
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০১৮ ১৭:২৮
Share: Save:

যে দিকেই চোখ যাচ্ছে শুধু জল আর জল।তার মধ্যে থেকেই কোথাও মাথা উঁচু করে রয়েছে কিছু বাড়ি আর গাছপালা। বন্যাবিধ্বস্ত কেরলের ছবিটা এখন এরকমই।

গত এক সপ্তাহ ধরে প্রবল বৃষ্টিতে রাজ্যের বেশির ভাগ অংশই প্রায় জলের তলায় চলে গিয়েছে। বন্যার সঙ্গে যুঝতে না পেরে লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যা। এখনও পর্যন্ত ৩২৪ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে মুখ্যমন্ত্রীর অফিস থেকে জানানো হয়েছে। মৃতের সংখ্যা আরও বাড়ার আশঙ্কা করছে প্রশাসন। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগামী কয়েক দিন এ ভাবে বৃষ্টি চলতে থাকলেপরিস্থিতি আরও সঙ্কটময় হয়ে উঠবে। কেরলের এই বন্যা ১৯২৪-এর ভয়াল স্মৃতিকে উস্কে দিয়েছে রাজ্যবাসীর মনে। সে বছর রেকর্ড পরিমাণ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। টানা তিন সপ্তাহ ধরে বৃষ্টি চলে। মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল ৩,৩৬৮ মিলিমিটার। সরকারি তথ্য না মিললেও বিভিন্ন তথ্য থেকে জানা গিয়েছে, সে বছর প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল। যা কেরলের ইতিহাসে ‘দ্য গ্রেট ফ্লাড অব ’৯৯’ নামে চিহ্নিত হয়ে আছে।

কেরলের বন্যা পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখতে শুক্রবার সে রাজ্যে যাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। শনিবার পর্যন্ত ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দিয়েছেন আবহবিদরা। রাজ্যের ১৪টি জেলার মধ্যে ১৩টিতেই চূড়ান্ত সতর্কতা জারি করেছে রাজ্য প্রশাসন। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা ইদুকি জেলার। তবে পরিস্থিতি আগের থেকে কিছুটা উন্নত হয়েছে আলাপুঝা, এর্নাকুলাম, ত্রিশূর এবং পথনমথিত্তায়। জল কিছুটা নেমেছে এ সব জায়গায়। ত্রিশূর ও চালাকুড়ি শহরের বেশির ভাগটাই জলের তলায় চলে গিয়েছে। যে সব জায়গায় ত্রাণ শিবির তৈরি করা হয়েছে, নতুন করে বৃষ্টি হওয়ায় সেখানেও জল ঢুকতে শুরু করেছে।

আরও পড়ুন: শতাব্দীর ভয়াবহতম বন্যায় কেরলে মৃত্যু বেড়ে ১৬৭, যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী

দক্ষিণ কেরলের একটি চার্চ। সেখানে বেশিরভাগ জায়গা জলের তলায় চলে গিয়েছে। ছবি: রয়টার্স।

উদ্ধারকাজের জন্য দুশোরও বেশি নৌকা নামিয়েছে সেনা। বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী (এনডিআরএফ) এবং উপকূলরক্ষী বাহিনীর জওয়ানরা দিনরাত এক করে উদ্ধারকাজ চালাচ্ছেন। গাজিয়াবাদ, ভদোদরা, ভাতিন্ডা, পটনা, নদিয়া এবং মুন্ডালির এনডিআরএফ ঘাঁটি থেকে ৩৩টি অতিরিক্ত দল তুলে আনা হয়েছে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য। এই মুহূর্তে কেরলে এনডিআরএফ-এর ৫১টি দল কাজ করছে।যে সব এলাকা পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে সেখানে উদ্ধারকাজ চালানোর জন্য উপকূলরক্ষী বাহিনীর আরও চারটে বিমান নামানো হয়েছে। এ দিন প্রায় দু’হাজার মানুষকে উদ্ধার করা কুট্টানাড় থেকে। প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে এখনও প্রায় এক লক্ষ মানুষ জলবন্দি হয়ে রয়েছেন। তাঁদের যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেখান থেকে উদ্ধার করার চেষ্টা চালাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা। তিরুঅনন্তপুরম-কোট্টায়ম-এর্নাকুলাম এবং এর্নাকুলাম-শোরানুর-পালাক্কড় রেলওয়ে সেকশনের বেশির ভাগ জায়গায় ট্র্যাক জলের তলায় চলে গিয়েছে। কোথাও আবার জলের তোড়ে পুরো রেলট্র্যাকই উধাও! ওই দুই সেকশনে শনিবার বিকেল ৪টে পর্যন্ত ট্রেন চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেল। রাজ্যের বন্যা পরিস্থিতি এবং ত্রাণ নিয়ে সরকার কী পদক্ষেপ করছে তা নিয়ে রাজ্যের কাছে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।

আরও পড়ুন: অসমে ‘গরুচোর’ সন্দেহে গণপিটুনিতে মৃত ১, গুরুতর আহত ৩

আবহবিদরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে ১ জুন থেকে ১৫ অগস্ট পর্যন্ত রাজ্যে বৃষ্টি হয়েছে ২,০৮৭.৬৭ মিলিমিটার। যা রাজ্যের স্বাভাবিক বৃষ্টিপাতের ৩০ শতাংশকে অতিক্রম করে গিয়েছে। এই সময়ে রাজ্যে স্বাভাবিক বৃষ্টিপাত হয় ১,৬০৬.০৫ মিলিমিটার।আশঙ্কাটা আরও ঘনীভূত হচ্ছে এখানেই। অনেকের মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করেছে, তা হলে কি আবার ১৯২৪-এর পুনরাবৃত্তি হতে চলেছে?

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kerala Flood কেরল বন্যা rain
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE