Advertisement
০২ মে ২০২৪
National

নরেন্দ্র মোদীর তিনটি পাগড়ির কাহিনি

পোশাক দিয়ে কি মন পড়া যায়? মনস্তত্ত্ব দিয়ে কি ব্যাখ্যা করা যায় পোশাককে? বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাঁ যায়। তাঁদের মতে, গাঁধীজির অর্ধনগ্ন ওই ফকিরের পোশাক ছাড়া তাঁর সম্পূর্ণ রূপটা কোনও মতেই ধরা পড়ে না। ওই পোশাক ছাড়া গাঁধীজিকে ভাবা যায় নাকি?

তিন বছরে তিন রকম পাগড়ি— কোন বার্তা দিতে চাইলেন মোদী? —ফাইল চিত্র।

তিন বছরে তিন রকম পাগড়ি— কোন বার্তা দিতে চাইলেন মোদী? —ফাইল চিত্র।

জয়ন্ত ঘোষাল
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ১৬ অগস্ট ২০১৬ ২১:১২
Share: Save:

পোশাক দিয়ে কি মন পড়া যায়? মনস্তত্ত্ব দিয়ে কি ব্যাখ্যা করা যায় পোশাককে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হ্যাঁ যায়। তাঁদের মতে, গাঁধীজির অর্ধনগ্ন ওই ফকিরের পোশাক ছাড়া তাঁর সম্পূর্ণ রূপটা কোনও মতেই ধরা পড়ে না। ওই পোশাক ছাড়া গাঁধীজিকে ভাবা যায় নাকি? ঠিক যেমন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাওয়াই চটি। এ রকম অনেক ক্ষেত্রেই পোশাক দিয়ে সেই মানুষটির কাজকর্ম-ভাবনা-চিন্তাকে ব্যাখ্যা করা যায়।

যেমন, নরেন্দ্র মোদী। তিনিও ভীষণ পোশাক সচেতন। এই নিয়ে পর পর তিন বার স্বাধীনতা দিবসে তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে লাল কেল্লায় ভাষণ দিলেন। আর তিন বারই তাঁর মাথায় দেখা গিয়েছে পাগড়ি। আর সেই পাগড়িই যে তাঁর রাজনৈতিক মনস্তত্ত্ব বুঝিয়ে দিচ্ছে সে কথা মেনে নিচ্ছেন ফ্যাশন থেকে জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ— সকলেই।

কী রকম?

২০১৪-র স্বাধীনতা দিবসে মোদীকে লাল কেল্লায় দেখা গিয়েছিল লাল পাগড়ি মাথায়। উজ্জ্বল লালের উপর ছিল সোনালি রঙের বিন্দু বিন্দু ডিজাইন। সবে মাত্র তখন কেন্দ্রের ক্ষমতায় একক সংখ্যা গরিষ্ঠতা নিয়ে এসেছেন মোদী। প্রায় হাঁটু ছোঁয়া পাগড়ি থেকেই ঠিকরে বেরোচ্ছিল তাঁর তাঁর শৌর্য-বীর্য। ২০১৫-য় এসে সেই লাল বদলে গেল একটা হলদে রঙের শেডে। না-সোনালি আবার না-গেরুয়া। আর তাতে আড়াআড়ি ডোরা কাটা। পাগড়ির মাপও কিছুটা ছোট। আর এ বার ২০১৬-য় এসে তাঁর শৌর্য-বীর্যের গাথা কিছুটা যেন ম্নান। ১৫ অগস্ট লাল কেল্লায় মোদীর পাগড়িতে কি সেই বার্তা পড়া গেল?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদী আসলে যে কাজই করেন, ভীষণ ভেবেচিন্তে করেন। পাগড়ির মাধ্যমে মোদী এ বার অনেক কিছু বুঝিয়ে দিয়েছেন। এ বারে তাঁর পাগড়ি ঝুঁটিহীন। লালের সঙ্গে সেই পাগড়িতে রয়েছে আরও নানা শেড। স্টাইলে ভরপুর সেই পাগড়ি দেখে দীর্ঘ দিন ধরে ফ্যাশন বিষয়ে পড়াশোনা করা জয়া জেটলি বলছেন, এই পাগড়িতে রাজস্থানের ডাইং টেকনিক রয়েছে। ভীষণ স্টাইলিস্ট। এই পাগড়িতে যে ডিজাইন রয়েছে সেটা সরলরেখার। সাধারণত রাজস্থানী ওই পাগড়িতে কোনাকুনি ডিজাইন করা থাকে। জয়ার মতে, রাজস্থান এবং গুজরাতের বিভিন্ন উত্সবে এ ধরনের পাগড়ি পরা হয়। কিন্তু, মোদীর জন্য হাতে বোনা ওই পাগড়ি বিশেষ ভাবে বানানো হয়েছে। তাঁর কথায়, ‘‘এই পাগড়িকে আমি দশে দশ দেব। আর স্টাইলের দিক থেকে এক্কেবারে একশো।’’

জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ দিলীপ চেরিয়ান যেমন বলছেন, ‘‘এর মধ্যে একটা সচেতন প্রয়াস আছে। অনেক রং আছে। ২০১৪-য় এত শেড ছিল না।’’ এর সঙ্গে অনেকেই ভারতের বহুত্ববাদের তুলনা টেনেছেন। দেশের বহুত্ববাদে এতই খটাখটি লেগেছে যে মোদী তাঁর গুজরাতি অস্মিতা বজায় রাখতে চেয়েছেন পাগড়ির মাধ্যমে। অনেকগুলো রং মিশিয়ে যেন দেশের বহুত্ববাদের কাহিনি ফের এক বার শোনাতে চেয়েছেন মোদী।

আরও পড়ুন: মোদীর বক্তৃতায় বাস্তববাদী কৌশল

গুজরাতের ভূমিপুত্র মোদী। সেই ভূমিতেই দলিতদের আন্দোলন এমন জায়গায় গিয়েছে যে, তিনি অসহায়। দাদরি থেকে গুজরাত, সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা থেকে দলিত সমস্যা— সব কিছু নিয়েই চূড়ান্ত অস্বস্তি রয়েছে তাঁর। তাই বহুত্ববাদকে ফের তুলে ধরতে উত্তর ভারত-সহ মধ্য এবং পশ্চিম ভারতীয় এই পাগড়ি সংস্কৃতিকেই ব্যবহার করতে চেয়েছেন মোদী। এর আগে মাত্র কয়েক জন প্রধানমন্ত্রীকেই টুপি বা পাগড়ি পরতে দেখা গিয়েছে। বিশ্বনাথপ্রতাপ সিংহ এক বিশেষ ধরনের কাশ্মীরি টুপি পরতেন। চরণ সিংহ পাগড়ি পরতেন। তবে সে এমন স্টাইলিস্ট ছিল না। নেহরু-সহ কয়েক জন কংগ্রেসি প্রধানমন্ত্রী গাঁধী টুপি পরতেন। আবার রাজীব গাঁধী-সহ অনেকেই টুপি বা পাগড়ি সংস্কৃতিতে অভ্যস্থ ছিলেন না। কিন্তু, মোদীর মতো কেউই এর আগে এ ভাবে পাগড়ির মাধ্যমে রাজনৈতিক ভাবনা তুলে ধরতে সক্ষম হননি। স্বাধীনতা দিবসের তিন পাগড়ি যেন মোদীর তিন রাজনৈতিক বার্তা।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Turbans Narendra Modi Independence Day Speech
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE