Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

তদন্তের জুজুতে আর ‘ভীত’ নন বিরোধীরা

এই ধরনের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের পর্যুদস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।

হার্দিক পটেলকে খাবার পরিবেশন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন তেজস্বী যাদব-সহ অন্য নেতারা। আলিপুরের ‘সৌজন্য’ ভবনে।

হার্দিক পটেলকে খাবার পরিবেশন করছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রয়েছেন তেজস্বী যাদব-সহ অন্য নেতারা। আলিপুরের ‘সৌজন্য’ ভবনে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০১৯ ০৪:৩৫
Share: Save:

কোনও ভাবেই ইডি, সিবিআই বা আয়করের মতো কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাগুলিকে তাঁরা ‘ভয়’ পাবেন না বলে সমস্বরে জানিয়ে দিলেন বিজেপি-বিরোধী নেতারা। লোকসভা ভোটের আগে এই ধরনের কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনৈতিক ভাবে ব্যবহার করে বিরোধী নেতাদের পর্যুদস্ত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও তাঁরা অভিযোগ করেন।

সিবিআই, ইডি, আয়করের মতো বিভিন্ন কেন্দ্রীয় সংস্থাকে ব্যবহার করে বিরোধী দলগুলিকে বিজেপি ‘ভয়’ দেখাচ্ছে বলে এতদিন বারবারই অভিযোগ করেছেন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। শনিবার ব্রিগেডে আসা অতিথি-নেতাদের সামনে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর বিরুদ্ধে সুর চড়িয়ে তাঁর হুঁশিয়ারি, ‘‘কাউকে ছাড়েননি আপনারা। অখিলেশ, মায়াবতী, লালুপ্রসাদ, আমাকেও ছাড়েননি। আপনাকে কেন ছাড়বে?’’

নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে বিজেপি-নেতাদেরও রাফাল, ধনজন এবং ফসল বিমা-দুর্নীতির জন্য শাস্তি পেতে হবে স্পষ্ট হুঁশিয়ারি দেন মমতা। কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘চোর’ বলেও কটাক্ষ করেন তিনি। লুটের টাকায় কেন্দ্রীয় সরকার ভোট করছে বলেও মমতা অভিযোগ করেন। কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে বিজেপি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ করে মমতা বলেন, ‘‘ব্যাঙ্ক, সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আয়কর, অর্থনীতি, গণতন্ত্রে ধস। শুধু বিজেপি-ই বস্।’’

সেই সুরেই নরেন্দ্র মোদী, অমিত শাহকে আক্রমণ করেন আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদব। দিল্লির আদালতে একটি মামলার শুনানিতে হাজিরা দেওয়ার জন্য সমাবেশে দেরিতে আসবেন বলে আগেই জানিয়েছিলেন তেজস্বী। এলেনও তাই। তাঁর বিরুদ্ধেও সিবিআই এবং ইডি ইতিমধ্যেই দুর্নীতি-মামলা করেছে। সমাবেশের একেবারে শেষ লগ্নে মঞ্চে এসে লালুপ্রসাদের পুত্র তেজস্বী বিজেপিকে আক্রমণ করে বললেন, ‘‘আমার আসতে দেরির পিছনে মোদী-শাহর কৃপা ছিল। ওদের বিরোধিতা করলে ইডি, সিবিআই দেবে। ভয় দেখাবে। আমার বাবাকেও জেলে ভরে রেখেছে।’’ এর বিরুদ্ধে দেশবাসীকে গর্জে ওঠার আবেদন জানান লালু-পুত্র।

কেন্দ্রীয় সংস্থাগুলিকে হাতিয়ার করে বিরোধীদের বিরুদ্ধে বিজেপি প্রতিহিংসা করছে বলে মন্তব্য করেছেন তৃণমূলের সমর্থনে কংগ্রেসের রাজ্যসভার সাংসদ অভিষেক মনু সিঙ্ঘভি। তাঁর কথায়, ‘‘তেজস্বীরা কয়েক বছর আগে পটনায় একটা সভা করেছিল। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই ওদের আয়করের নোটিস দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু উত্তরপ্রদেশে মোদী, অমিত শাহ যে শ’য়ে শ’য়ে সভা করলেন, তার জন্য কোনও নোটিস তো দেওয়া হল না! এ কেমন দ্বিচারিতা?’’

সাংবিধানিক এই সংস্থাগুলির ‘ক্ষয়’ রোখার আবেদন জানিয়ে উত্তরপ্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অখিলেশ যাদব বলেন, ‘‘ওরা (বিজেপি) সিবিআইয়ের সঙ্গে জোট করছে। কিন্তু আমরা মানুষের সঙ্গে জোট করছি।’’

সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অগ্রাহ্য করে সিবিআই-এর মতো সংস্থাকে বিজেপি ব্যবহার করছে বলে অভিযোগ তোলেন অটলবিহারী বাজপেয়ী জমানার প্রাক্তন দুই মন্ত্রী। প্রাক্তন মন্ত্রী যশবন্ত সিন্হার কথায়, ‘‘এমন কোনও সংস্থা নেই যার ক্ষতি বিজেপি করেনি।’’ আর এক প্রাক্তন মন্ত্রী অরুণ শৌরির অভিযোগ, ‘‘সিবিআই, রিজার্ভ ব্যাঙ্ক, আয়কর, ক্যাবিনেট, সংবাদমাধ্যমের মতো সংস্থাগুলিকে দুর্নীতিগ্রস্ত করে তুলেছে এই সরকার। দেশে এমন আর কখনও ঘটেনি।’’

সিবিআই এখন ‘কেন্দ্রের হাতের পুতুল’ বলে কটাক্ষ করেছেন ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেন, অরুণাচল প্রদেশের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গেগং আপাং।

শুধু যে এই সংস্থাগুলির অপব্যবহার হচ্ছে, তা নয়, বিজেপির বিরুদ্ধে মুখ খুললে ‘রাষ্ট্রদ্রোহী’ তকমা দেওয়া হচ্ছে বলেও অনেক নেতাই অভিযোগ করেন। জবাবে বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, ‘‘নেতারা বলছেন, সিবিআই, ইডির মতো সংস্থাগুলিকে প্রভাবিত করছে কেন্দ্র। অথচ পূর্বতন সরকারই তো এ সব সংস্থাকে ব্যবহার করে অমিত শাহকে জেলে পাঠিয়েছিল। মোদীর নামে মামলা করেছিল। তাঁরা আদালতে নির্দোষ প্রমাণিত হন। তৃণমূল-সহ বাকি দলের নেতারা যদি নির্দোষই হন, তা হলে সিবিআই, ইডিকে ভয় পাচ্ছেন কেন?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE