স্বাতী চট্টোপাধ্যায়।
কুয়াশার কারণে যে ট্রেনের দেরি হবে, সেটা জানিয়ে সকালেই ইন্ডিয়ান রেলওয়ে কেটারিং অ্যান্ড ট্যুরিজম কর্পোরেশন (আইআরসিটিসি) থেকে একটা এসএমএস এসেছিল। লেখা ছিল, ‘শিয়ালদহ রাজধানীর সময় পরিবর্তন হয়েছে। ট্রেন ছাড়বে, রাত ১০টা ৫০ মিনিটে।’
সন্ধ্যা ৭টায় মোবাইলে ঢুকল আর একটা এসএমএস। তাতে লেখা, ‘ট্রেন ছাড়বে রাত ১২টা ১৫ মিনিটে।’ ট্রেন ধরব বলে বৃহস্পতিবার হোটেল থেকে বেরিয়ে নয়াদিল্লি স্টেশনে যখন ঢুকেছিলাম, তখন রাত ১০টা। স্টেশনে দাঁড়িয়ে মোবাইলে দেখলাম, তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কনকনে ঠান্ডা হাড় কাঁপিয়ে দিচ্ছে। আর অত রাতে ১১, ১২, ১৩ নম্বর প্ল্যাটফর্ম তো বটেই, ওভারব্রিজেও ঠাসাঠাসি করে দাঁড়িয়ে রয়েছেন যাত্রীরা।
ঘন কুয়াশার মধ্যে ওভারব্রিজ থেকে প্ল্যাটফর্মের যত দূর দেখা যাচ্ছিল, তত দূর শুধুই কালো কালো মাথা। বেশির ভাগই বাতিল করে দেওয়া ট্রেনের যাত্রী। কিন্তু ওই শীতের রাতে আর ফিরতে না পেরে সবাই স্টেশনেই থেকে গিয়েছেন। অবস্থা এমন যে ট্রলি ব্যাগটাও টেনে নিয়ে যাওয়ার উপায় নেই। অত ভিড়ে মোটবাহকদেরও খুঁজে বার করতে পারিনি। একজনকে পেয়েছিলাম। কিন্তু অত রাতে ট্রেনে মালপত্র তুলতে পারবেন না জানিয়ে তিনি চলে গেলেন।
অগত্যা নিজেই মাথায় করে মালপত্র নিয়ে ওভারব্রিজে উঠে দাঁড়িয়ে পড়েছি। তখনও একবারের জন্য স্টেশনে রাজধানী নিয়ে কোনও ঘোষণা শুনিনি। দেখতে দেখতে রাত সওয়া ১২টাও পেরিয়ে গেল। দ্বিতীয়বার দেওয়া শিয়ালদহ রাজধানী ছাড়ার পরিবর্তিত সময়। ভয় হচ্ছিল, ট্রেন চলে যায়নি তো!
ভিড়ের মধ্যে ঠেলাঠেলি করে গিয়ে এক রেলকর্মীকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, ট্রেন এখনও দেওয়া হয়নি। শিয়ালদহ রাজধানীর কোনও খবরই নেই। ওই সময় ১২ নম্বরে ঢুকল নয়াদিল্লি-পটনা সম্পর্কক্রান্তি এক্সপ্রেস। তাতে প্ল্যাটফর্মে ভিড় আরও বেড়ে গেল। কোনও যাত্রী বেরোতে পারছেন না। শুরু হল ঠেলাঠেলি। এক সময় মনে হল ভিড়ে চাপা পড়ব। কোনও রকমে নিজেকে বাঁচালাম। বাঁচালাম মালপত্রগুলোও।
শুনলাম সম্পর্কক্রান্তি বেরিয়ে গেলে শিয়ালদহ রাজধানী দেওয়া হবে। অনেক পরে এল শিয়ালদহ রাজধানী। তখন রাত প্রায় দেড়টা। ট্রেনে উঠে দেখলাম কামরার মেঝেতে কম্বল, বালিশ, চাদর ছড়িয়ে রয়েছে। সামান্য পরিষ্কারও হয়নি। শৌচাগারেও গা ঘিনঘিনে অবস্থা। নাকে রুমাল দিয়ে ঢুকে দেখি, বেসিনে জলও নেই। শুনলাম ট্রেনটা প্রায় ৬ ঘণ্টা কারশেডে ছিল। কুয়াশার দোহাই দিয়ে পরিচ্ছন্নও যে হয়নি, সেটা স্পষ্ট।
ট্রেন ছাড়ল রাত সওয়া দু’টোয়। সকালেও শৌচাগারে জল ছিল না। এক চেনা রেলকর্তাকে ফোন করে জানানোর পরে তিনি লোক পাঠিয়ে জলের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। সকালের খাবার এলেও লাঞ্চ বলতে এল একটা ছোট ফয়েলের প্যাকেটে একটু খিচুড়ি আর মিষ্টি দইয়ের একটি কাপ। ব্যাস ওই টুকুই। খাবার দেখে সহযাত্রী কৃপাসিন্ধু পোদ্দার বললেন, ‘‘এটাও মেনে নিন। বাড়ি ফিরতে পারলেই বাঁচি।’’ এর মধ্যে কামরার মাইকে কয়েক বার ঘোষণা করা হয়েছে, ‘কুয়াশার জন্য এই অবস্থা। রাতে ঠিক মতো খাবার দেওয়ার চেষ্টা করা হবে।’
এই লেখা যখন লিখছি তখন ট্রেন কানপুরেও ঢোকেনি। তবে গতি কিছুটা বেড়েছে। এখন প্রায় ২০ ঘণ্টা দেরিতে চলছে দেশের ঐতিহ্যশালী নয়াদিল্লি-শিয়ালদহ রাজধানী এক্সপ্রেস। ট্রেনেই রেলকর্মীদের কাছে শুনেছি, নয়াদিল্লি-হাওড়া রাজধানীও প্রায় একই ভাবে চলছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy