প্রতীকী ছবি
এক দিকে যখন ডিজিটাল ইন্ডিয়ার ঢক্কানিনাদ, ঠিক তখনই কুসংস্কারের অন্ধকারে আচ্ছন্ন দেশের অন্য ছবিটা আবার সামনে চলে এল ভয়ঙ্কর ভাবে। ডাইনি অপবাদে দুই মহিলার উপর চরম অত্যাচারের ঘটনা ঘটল ছত্তীসগঢ়ে। তাঁদের মধ্যে এক জনকে মেরে আধমরা করে পুড়িয়ে দিল তাঁরই ছেলে। অপর জনকে গোটা গ্রামের সামনে নগ্ন করে ঘোরাল গ্রামবাসীরা। প্রথম ঘটনাটি ছত্তীসগঢ়ের রায়পুর জেলার তাতিবন্ধ এলাকার এবং দ্বিতীয়টি রাজনন্দগাঁও জেলার মুদিপুর গ্রামের। পুলিশ জানিয়েছে, দু’জায়গাতেই অভিযুক্তদের জিজ্ঞাসাবাদ করে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। উভয় ক্ষেত্রেই অভিযুক্তদের বিশ্বাস যে ওই মহিলারা কালা জাদু বিদ্যার চর্চা করতেন এবং পরিবার বা গ্রামের কারও কারও মৃত্যুর জন্য দায়ী।
আরও পড়ুন: খাজুরাহো মন্দিরে ‘কামসূত্র’ নিষিদ্ধের দাবি বজরঙ্গ সেনার
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, তাতিবন্ধের মাতৃঘাতী রোহিত ধ্রুবর বছর সাতাশেক বয়স। নিজের মাকেই ডাইনি অপবাদে পুড়িয়ে মারে রোহিত। তার পর পুলিশের কাছে আত্মসমর্পন করে। পুলিশের কথায়, রোহিতের অভিযোগ তার মা বছর পঞ্চান্নর সুমিত্রাদেবী নাকি ডাইনি বিদ্যার চর্চা করতেন। এক দিন স্বপ্নে সে দেখে তার মা তাকে গিলে খাচ্ছে। এই ভয়ানক স্বপ্ন দেখে তার ঘুম ভেঙে যায় এবং মাকে ধরে বেদম প্রহার করতে থাকে। মাথায় বার বার ভারী জিনিস দিয়ে আঘাতের ফলে মৃত্যু হয় সুমিত্রাদেবীর। এর পর কেরোসিন ঢেলে মায়ের মৃতদেহ পুড়িয়ে দেয় সে।
পুলিশ আধিকারিক ডিপি শর্মা জানিয়েছেন, মঙ্গলবারের ওই ঘটনার আগে এক মাসের মধ্যে রোহিতের দুই ভাইয়ের মৃত্যু হয়। তার পর থেকেই চরম অবসাদে এবং আতঙ্কে ভুগছিল সে। ভাইদের মৃত্যুর জন্য নিজের মাকেই দায়ী করে বসে রোহিত। সেই অন্ধ বিশ্বাসের জেরেই শেষ পর্যন্ত খুন করে মাকে।
দ্বিতীয় ঘটনাটি রাজনন্দগাঁও-এর মুদিপুর গ্রামে। সেটাও মঙ্গলবারের ঘটনা। ডাইনি অপবাদে এক আদিবাসী মহিলা ও তাঁর স্বামীকে মারধর করে কয়েক জন গ্রামবাসী। পুলিশ জানিয়েছে, ওই গ্রামেরই এক আদিবাসী পরিবারে এক শিশুর মৃত্যুকে ঘিরেই ঘটনার সূত্রপাত। শিশু মৃত্যুর জন্য দায়ী করে ওই মহিলার দিকেই আঙুল তোলে গ্রামের ওক গুনিন। তার পরেই মহিলার উপর চলে অকথ্য অত্যাচার।
রাজনন্দগাঁও জেলা পুলিশ সুপার প্রশান্ত আগরওয়াল জানান, মঙ্গলবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু করে বেলা ৩টে পর্যন্ত ওই মহিলার উপর অত্যাচার চালায় ওই গ্রামবাসীরা। তাঁর কথায়, ‘‘ডাইনি অপবাদে ওই আদিবাসী মহিলা এবং তাঁর স্বামীর উপর চড়াও হয় ১২ জন গ্রামবাসী। মহিলাকে ঘর থেকে টেনে বার করে এনে নগ্ন করে ঘোরানো হয় গোটা গ্রাম। এখানেই শেষ নয়। মহিলার যৌনাঙ্গে লঙ্কার গুঁড়ো ছিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় তাঁকে ফেলে যায় তারা। আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাঁকে ভর্তি করা হয়েছে খৈরাগড় হাসপাতালে।’’ তিনি আরও জানান, ঘটনায় দুই মহিলা-সহ ন’জন গ্রামবাসীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ধৃতদের মধ্যে রয়েছে ওই গুনিনও। বাকি অপরাধীদের খোঁজ চলছে। ধৃতদের বিরুদ্ধে ডাইনি অপবাদ বিরোধী আইন(২০০৫)-এর ৩ ও ৪ নং ধারা এবং ভারতীয় দণ্ডবিধির ধারা ২৯৪, ৩২৩, ১৪৭, ৪৫৪, ৩৫৪-এ মামলা দায়ের করা হয়েছে। এরই সঙ্গে তিনি যোগ করেন, যদি মহিলার অবস্থার আরও অবনতি হয় বা মৃত্যু ঘটে তাহলে আরও কঠোর ধারা প্রয়োগের কথা বিবেচনা করা হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy