Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Economy

বাজেট-নজরে ক্ষুদ্র-মাঝারি শিল্প ও আবাসন

অর্থনীতিতে এখনও সেই নোট বাতিলের ক্ষত।

ছবি: সংগৃহীত।

ছবি: সংগৃহীত।

প্রেমাংশু চৌধুরী
নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১১
Share: Save:

দিল্লির ময়ূর বিহারে গত দশ বছর ধরে মোটরবাইকের নাট-বল্টু তৈরির কারখানা চালান সুরেশ যাদব। আর পারছেন না। উত্তরপ্রদেশের বুলন্দশহরের সুরেশকে এ বার ঠিকানা বদলাতে হচ্ছে। ব্যবসা কমে গিয়েছে। ভাড়া গুণতে পারছেন না আর। এ বার তাই কারখানার জন্য আরও ছোট ঘর খুঁজতে হয়েছে।

সুরেশ বলেন, ‘‘তিন বছর আগে নোট বাতিলের পরেই ব্যবসা বসে যায়। সেই যে মার খেলাম, এত দিনেও উঠে দাঁড়াতে পারলাম না।’’ সুরেশের ভাই হরিশ ফ্ল্যাট-বাড়ির দালালি করেন। সেখানেও একই দশা। হরিশের জবাব, ‘‘বিক্রিবাটা নেই। দামও পড়ে গিয়েছে। রোজগার কমেছে।’’

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন বছর আগে নোট বাতিলের ঘোষণা করেছিলেন। অর্থনীতিতে এখনও সেই নোট বাতিলের ক্ষত। শনিবার ১ ফেব্রুয়ারির বাজেটে অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামনকে সেই ক্ষতপূরণের চেষ্টা করতে হবে। নোট বাতিলের জেরে সব থেকে বেশি ধাক্কা খেয়েছে ছোট-মাঝারি শিল্প এবং আবাসন ক্ষেত্র। দুই ক্ষেত্রই এখনও যুঝে চলেছে। ছোট-মাঝারি শিল্পে নোট বাতিলের পরে আবার জিএসটি ধাক্কা দিয়েছিল। আবাসন ক্ষেত্রে নোট বাতিলের পরে গলায় কাঁটা হয়ে ওঠে নতুন নিয়ন্ত্রণ আইন।

আরও পড়ুন: সংবিধান ফেরালেন মোদী, দাবি কংগ্রেসের

অর্থ মন্ত্রক সূত্রের খবর, বাজেটে এই ছোট-মাঝারি শিল্প ও আবাসন ক্ষেত্রের জন্যই কিছু সুরাহার বন্দোবস্ত হতে পারে। কী সেই সুরাহা?

সূত্রের বক্তব্য, ছোট-মাঝারি ক্ষেত্রের জন্য সরকারি সাহায্যে একটি ১০ হাজার কোটি টাকার তহবিল ঘোষণা হতে পারে। এই তহবিল থেকে প্রাইভেট ইকুইটি বা ভেঞ্চার ক্যাপিটাল সংস্থাকে ছোট-মাঝারি শিল্পে লগ্নিতে সাহায্য করা হবে। সেবি-র প্রাক্তন চেয়ারম্যান ইউ কে সিন্হার নেতৃত্বাধীন কমিটি গত জুনে এই ধরনের একটি তহবিলের সুপারিশ করেছিল। ছোট-মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের জন্যও বরাদ্দ বাড়ানো হতে পারে। মন্ত্রী নিতিন গডকড়ী এ বার অর্থ মন্ত্রকের কাছে ১২ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ চেয়েছেন। গত বছর বরাদ্দ ছিল মাত্র ৭,০১১ কোটি টাকা। লোকসভা ভোটের আগে জিএসটি-র ধাক্কা প্রশমিত করার চেষ্টায় প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা করেছিলেন, জিএসটি-ব্যবস্থায় নথিভুক্ত ক্ষুদ্র-ছোট-মাঝারি সংস্থার ঋণের সুদে ২ শতাংশ ভর্তুকি দেওয়া হবে। চলতি অর্থ বছরেই ওই সুবিধা শেষ হয়ে যাওয়ার কথা। তার মেয়াদ বাড়ানো হতে পারে। বিজেপির আর্থিক শাখার এক নেতা বলেন, ‘‘এই ক্ষেত্রে প্রায় ১১ কোটি মানুষের রুটিরুজি জড়িত। এর একটা বড় অংশ আমাদের ভোটব্যাঙ্ক। এই শ্রেণির কথা ভাবতেই হবে।’’

আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে প্রধানমন্ত্রী ‘২০২২-এর মধ্যে সকলের জন্য বাড়ি’-র প্রকল্প ঘোষণা করেছিলেন। নতুন করে ক্ষমতায় আসার পরেও জুলাইয়ের বাজেটে অর্থমন্ত্রী সাধ্যের মধ্যে বাড়ির ঋণের সুদে আয়কর ছাড়ের পরিমাণ ২ লক্ষ টাকা থেকে ১.৫ লক্ষ টাকা বাড়িয়েছিলেন। কিন্তু তার শর্ত ছিল, প্রথম বাড়ি কেনার ক্ষেত্রেই এই সুরাহা মিলবে। চলতি অর্থ বছরেই ঋণ মঞ্জুর হতে হবে। আবাসন ক্ষেত্রের দাবি, এই সুবিধা আগামী অর্থ বছরের জন্যও দেওয়া হোক। এখন ফ্ল্যাট বা বাড়ির দাম ৪৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত হলে তা সাধ্যের মধ্যে বলা হয়। কিন্তু মেট্রো শহর বা প্রথম সারির শহরের হিসেবে এই ঊর্ধ্বসীমা যথেষ্ট কম। তা বাড়িয়ে ৬৫ লক্ষ টাকা করা হোক। বাড়ির ঋণে ২ লক্ষ টাকা পর্যন্ত সুদে কর ছাড় মেলে। তা-ও বাড়ানো হোক। আবাসন ক্ষেত্রকে চাঙ্গা করতে বাজেটে এই সুরাহা ঘোষণা থাকতে পারে। অর্থ মন্ত্রকের এক কর্তা বলেন, ‘‘আবাসন ক্ষেত্রকে শিল্পের তকমা দেওয়া ও ছাড়পত্রের জন্য এক জানলা ব্যবস্থা চালু করার দাবিও দীর্ঘদিনের। তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Budget 2020 Union Budget 2020 Nirmala Sitharaman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE