Advertisement
E-Paper

টিকা পেলেই সব সমস্যা মিটবে না, বার্তা সরকারকে

গোটা বিশ্বের মতোই ভারতেও সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেও।

অনমিত্র সেনগুপ্ত

শেষ আপডেট: ০২ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০৩:৫৯
ছবি এএফপি।

ছবি এএফপি।

প্রতিষেধকই করোনাভাইরাস থেকে মুক্তির একমাত্র পথ— এমনটা ভাবতে মানা করছেন খোদ চিকিৎসকেরা। সরকারের পক্ষ থেকে বারবার বলে এমন একটা ধারণা তৈরি করা হচ্ছে, যেন প্রতিষেধক বা টিকা এলেই বুঝি সব আগের মতো হয়ে যাবে। এটা উচিত হচ্ছে না বলে সরব হল বিশেষজ্ঞদের একটি কমিটি। ইন্ডিয়ান পাবলিক হেল্‌থ অ্যাসোসিয়েশন (আইপিএইচএ), ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব প্রিভেনটিভ অ্যান্ড সোশ্যাল মেডিসিন (আইএপিএসএম) এবং ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন অব এপিডিমিয়োলজিস্ট (আইএই)— এই ৩ সংস্থার সদস্যেরা রয়েছেন কমিটিতে। এই কমিটির পক্ষ থেকে গত কাল প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে চিঠি লিখে বলা হয়েছে, করোনা রুখে দেবে এমন অব্যর্থ ও কার্যকর প্রতিষেধক পাওয়া কষ্টকর। তাই প্রতিষেধক মানেই সর্বরোগহর বটিকা এমন প্রচার বন্ধ করার দাবি জানিয়েছে ওই কমিটি।

গোটা বিশ্বের মতোই ভারতেও সংক্রমণ প্রতিদিন বাড়ছে। অতিমারির নেতিবাচক প্রভাব অর্থনীতিতেও। এই পরিস্থিতিতে গোটা দেশ তাকিয়ে কবে প্রতিষেধক পাওয়া যাবে। চিকিৎসক সংগঠনের বক্তব্য, ভারতে তিনটি প্রতিষেধক গবেষণার বিভিন্ন পর্যায়ে থাকলেও, মনে রাখতে হবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে প্রতিষেধকের কোনও ভূমিকা থাকে না। শেষ পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বিভিন্ন নিয়ম মেনে টিকা দিনের আলো দেখলে তা স্বাস্থ্যকর্মীদের ব্যক্তিগত সুরক্ষাকবচ হিসেবে কাজ করতে পারে। কিংবা যাঁরা বয়স্ক মানুষ, যাঁরা অন্যান্য ক্রনিক রোগের শিকার তাঁরা লাভবান হবেন।

আইপিএইচএ-র সেক্রেটারি জেনারেল চিকিৎসক সঙ্ঘমিত্রা ঘোষ বলেন, “টিকা এলেই স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ফিরে পাওয়া যাবে, এমন ভুল সবচেয়ে আগে ভাঙা দরকার। প্রথমত, দেশীয় দু’টি টিকা এখন দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে। যার দ্বিতীয় পর্যায়ে পরীক্ষার জন্য ৬ থেকে ৭ মাস সময় দরকার। তড়িঘড়ি টিকা আবিষ্কার সম্ভব হয় না। সময় লাগবেই। তা ছাড়া ১৩০ কোটির দেশে যদি অর্ধেককেও টিকা দিতে হয়, তাতে প্রচুর সময় লেগে যাবে। ওই সময়ে এক দিকে যেমন বহু সংখ্যক লোক সংক্রমিত হয়ে নিজে থেকেই সুস্থ হয়ে যাবেন, তেমনই ভাইরাসের চরিত্রগত পরিবর্তন বা মিউটেশন ঘটবে। ফলে ওই টিকা তত দিনে কতটা কার্যকর থাকবে, তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তাই এ সব প্রচার ছেড়ে বরং করোনা রোখার প্রশ্নে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় জোর দেওয়া উচিত।”

সংক্রমণ ছড়ানো রুখতে বিভিন্ন রাজ্য যে লকডাউনের ঘোষণা করেছে তার কার্যকারিতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে ওই কমিটি। অবিলম্বে লকডাউন নীতি বাতিলের দাবি করা হয়েছে। কমিটির পরামর্শ, লকডাউন যদি করতেই হয় তা হলে তা একদম ছোট এলাকায় করা হোক। কারণ, বড় শহরে যেখানে সংক্রমণ অনেক এলাকায় ছড়িয়ে পড়েছে, সেখানে লকডাউন অর্থহীন। তুলনায় মাঝারি বা ছোট শহর বা টাউনে যেখানে সংক্রমণ এখনও সে ভাবে ছড়ায়নি, সেখানে এলাকা ধরে ধরে লকডাউন ও সঙ্গে প্রচুর সংখ্যায় পরীক্ষা করার উপরে জোর দিলে বেশি সুফল মিলতে পারে। দেশে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফেরাতে স্কুল-কলেজ খোলার উপরে জোর দিয়েছে ওই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরা। তাঁদের মতে, যে এলাকাগুলিতে সংক্রমণের হার কম, সেখানে ধাপে ধাপে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান খোলা উচিত। জোর দেওয়া হয়েছে, নির্দিষ্ট সময় অন্তর সেরো সমীক্ষার উপরে। জাতীয় ও রাজ্য স্তরে এই পরীক্ষা নিয়মিত হলে সংক্রমণ কতটা ছড়াচ্ছে, কিংবা কতটা রোখা গিয়েছে, তা বোঝা সম্ভব হয়।

বর্তমান পরীক্ষা নীতিতে যে ভাবে কোনও পরিবারের কেউ সংক্রমিত হলে তার দরজায় করোনা রোগী লিখে স্টিকার সাঁটা হচ্ছে, তার সমালোচনা করেছে এই কমিটি। কমিটির সদস্যদের মতে, এতে ওই পরিবার সামাজিক ভাবে একঘরে হয়ে পড়ছে। পরিবারের সুস্থ ব্যক্তিরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। এমনকি, রোগী সুস্থ হয়ে আসার পরে তাঁকে বাড়িতে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। এ ভাবে করোনা রোগীকে দাগিয়ে দেওয়ার নীতি পরিবর্তনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আর্জি জানিয়েছেন কমিটির সদস্যেরা।

Coronavirus in India COVID-19 Coronavirus Vaccine
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy