Advertisement
২৭ এপ্রিল ২০২৪

চোখের জলে স্বামীকে শেষ বিদায় সাইমার

দুপুর দু’টোর সময়ে স্বামীকে শেষ বিদায় জানালেন সাইমা। গত কাল সারা দিন ধরে কেঁদেছেন। লাল হয়ে যাওয়া চোখের দৃষ্টি এখনও উদভ্রান্ত। মাস তিনেকের মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন এক আত্মীয়া।

শোকার্ত: স্বামী আবিদ হুসেন লোনের শেষযাত্রায় সাইমা (মাঝ খানে)। রবিবার পুলওয়ামায়। নিজস্ব চিত্র

শোকার্ত: স্বামী আবিদ হুসেন লোনের শেষযাত্রায় সাইমা (মাঝ খানে)। রবিবার পুলওয়ামায়। নিজস্ব চিত্র

সাবির ইবন ইউসুফ 
শ্রীনগর শেষ আপডেট: ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:৪৩
Share: Save:

দুপুর দু’টোর সময়ে স্বামীকে শেষ বিদায় জানালেন সাইমা। গত কাল সারা দিন ধরে কেঁদেছেন। লাল হয়ে যাওয়া চোখের দৃষ্টি এখনও উদভ্রান্ত। মাস তিনেকের মেয়েটাকে আঁকড়ে ধরে ছিলেন এক আত্মীয়া। ইন্দোনেশিয়া থেকে কাশ্মীরে এসে স্বামীর সঙ্গে ঘর বেঁধেছিলেন সাইমা। কাল বাহিনীর গুলিতে এক লহমায় শেষ হয়ে গিয়েছে তাঁদের স্বপ্ন। সাইমার স্বামী আবিদ হুসেন লোনের মৃত্যুর প্রতিবাদে এ দিন বিক্ষোভ হয়েছে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জার্কাতাতেও।

ইন্দোনেশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ের এমবিএ ডিগ্রি ছিল আবিদের। বছরখানেক আগে সে দেশের নাগরিক সাইমাকে বিয়ে করেন তিনি। কিন্তু কাশ্মীরে ফিরে চাকরি পাননি আবিদ। অগত্যা কাজ করতেন পুলওয়ামার সিরনু গ্রামের আপেল বাগানে। তাঁর কাকা গুলাম মহম্মদ ফোনে বললেন, ‘‘আমাদের গ্রাম করিমাবাদের খুব কাছেই সিরনু। কাল বাগানে কাজ করতে গিয়েছিল ও। তার পরেই সংঘর্ষ শুরু হয়। কিছু ক্ষণ পরে এক আত্মীয় আমাদের ফোনে জানান, আবিদকে গুলি করেছে বাহিনী। পরে ওর দেহ আসে বাড়িতে।’’ গুলাম জানিয়েছেন, পরিবারের প্রবীণ সদস্যেরা আবিদের শেষকৃত্য নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নড়াচড়া করতে পারেননি সাইমা। যত ক্ষণ পেরেছেন হাত বুলিয়েছেন আবিদের নিথর দেহে।

আবিদের পরিবার জানিয়েছে, কাল থেকেই ক্রমাগত ফোনে মেয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন সাইমার মা। আজ জাকার্তায় এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভে সামিল হন তিনি। বিক্ষোভকারীরা অবিলম্বে কাশ্মীরিদের হত্যা বন্ধের দাবি জানান।

আবিদের গ্রাম করিমাবাদ থেকে এক কিলোমিটার দূরেই পিরচু গ্রাম। সেখানে বাড়ি বছর চোদ্দোর কিশোর মুর্তাজা আহমেদের। কাল শেষকৃত্য হয়েছে তার। স্থানীয় এক তরুণ বলেন, ‘‘হাসপাতালে প্রথমে কেউ মুতার্জাকে শনাক্তই করছিলেন না। পরে আমরা এক জনকে ওর ছবি দেখাই। দেখা যায়, তিনি মুতার্জার কাকা।’’

একই চিত্র নিহত ওয়েইস ইউসুফ নজর, আমির পাল্লা, সুহেল রশিদদের বাড়িতেও। এলাকার বাসিন্দা আব্দুর রশিদের কথায়, ‘‘পুরো জেলাতেই শোকের ছায়া। প্রায় প্রত্যেকটি গ্রামেই কেউ না কেউ নিহত হয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Encounter Indian army
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE