শুক্রবার শ্রীনগরে সেনাবিরোধী বিক্ষোভ। ছবি: রয়টার্স।
গত এক দশকে এই পরিমাণ হিংসার মুখোমুখি হয়নি উপত্যকা। সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা, এনকাউন্টার, স্থানীয় বাসিন্দাদের বিক্ষোভ-প্রতিবাদ, সেনার গুলিতে বিক্ষোভকারীদের মৃত্যু এবং জঙ্গি হামলায় ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের মৃত্যু—সব ক’টি ক্ষেত্রেই সাম্প্রতিক কালের সব রেকর্ড ছাপিয়ে উপত্যকার রং এখন আক্ষরিক অর্থেই লাল।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে জম্মু-কাশ্মীরে রাজ্যপালের শাসন জারি হওয়ার পর থেকেই সব লাগাম ছাড়িয়ে বেড়ে চলেছে হিংসার ঘটনা। শনিবার কাশ্মীর উপত্যকায় এক দিনে তিন জঙ্গি, এক নিরাপত্তারক্ষী এবং সাত বিক্ষোভকারী-সহ মোট ১১ জনের মৃত্যুর পর সেই রাজ্যপালের শাসন নিয়েই প্রশ্ন উঠল রাজনৈতিক মহলে। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি এবার হিংসার প্রতিবাদে সরব হল উপত্যকার প্রধান দুই রাজনৈতিক দল—ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি)। সব মিলিয়ে ফের ঘোরাল হয়ে ওঠার পথে কাশ্মীর পরিস্থিতি, এমনটাই অনুমান উপত্যকার রাজনৈতিক মহলের।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের তথ্য বলছে,গত ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত উপত্যকায় মোট ২২৩ জন সন্ত্রাসবাদীর মৃত্যু হয়েছে। শেষ আট বছরে যা সর্বাধিক। ২০১৭-য় মোট ৩৪২টি সন্ত্রাসবাদী হামলার ঘটনা ঘটলেও চলতি বছর ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত তা বেড়ে পৌঁছেছে ৪২৯-এ। বেড়েছে সাধারণ মানুষের মৃত্যুর ঘটনাও। ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সাধারণ মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৭৭। শনিবারেরর সাত আর গত এক সপ্তাহে দক্ষিণ কাশ্মীর-সহ উপত্যকার বিভিন্ন প্রান্তে হিংসার ঘটনা মেলালে সেই সংখ্যা এখন ১০০ ছুঁই ছুঁই। ২০১৭ সালে জম্মু-কাশ্মীর উপত্যকায় মোট ২১৩ জন জঙ্গি মারা গিয়েছিল। এ বছর ৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত সেই মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২২৩, যা শেষ আট বছরে সর্বাধিক। পাশাপাশি জঙ্গিদের হাতে নিহত ভারতীয় নিরাপত্তারক্ষীদের সংখ্যা বেড়ে এখন ৯০-এর কাছাকাছি।শুধু সংখ্যাতত্ত্বের হিসেবেই গত এক দশকের মধ্যে উপত্যকায় সব থেকে বেশি রক্ত ঝরল এই ২০১৮-তেই। যদিও বাস্তব পরিস্থিতি আরও খারাপ বলে জানা যাচ্ছে স্থানীয় সূত্রে।
আরও পড়ুন: জঙ্গি অভিযান ঘিরে ফের রক্তাক্ত কাশ্মীর, ৬ স্থানীয় মানুষের মৃত্যু ঘিরে উত্তাল উপত্যকা
এই নিয়েই এখন প্রতিবাদ, বিক্ষোভে উত্তাল উপত্যকা। শনিবার সাধারণ মানুষের বিক্ষোভের সেই সুরে সুর মেলাল পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স। শনিবারের হিংসার প্রতিবাদে জম্মু-কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তথা পিডিপি নেত্রী মেহবুবা মুফতির টুইট, ‘‘ কোনও তদন্তই এই নিরপরাধ নাগরিকদের ফিরিয়ে আনতে পারবে না। রাজ্যপালের শাসনে কি এটাই প্রত্যাশিত? সাধারণ মানুষের জীবন সুরক্ষিত রাখতে ব্যর্থ প্রশাসন। মৃতদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা। নিজেদের মানুষকে হত্যা করে কোনও যুদ্ধ জেতা সম্ভব নয়।’’
No probe enough to bring back the dead innocent civilians.South Kashmir has been reeling under fear for the last 6 https://t.co/yvGQiUPOel this what was expected from Gov rule?The admin has failed in securing civilian lives. Deepest condolences to the bereaved.
— Mehbooba Mufti (@MehboobaMufti) December 15, 2018
আরও পড়ুন: ‘হায়দার’ ছবির সেই কিশোর অভিনেতার মৃত্যু পুলিশের এনকাউন্টারে
সাধারণ মানুষের ক্ষোভকে কাজে লাগাতে মরিয়া বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদ গোষ্ঠী। ছবি: এএফপি।
প্রতিবাদে সামিল হয়েছেন ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা এবং জম্মু ও কাশ্মীরের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ওমর আবদুল্লাও। টুইটারে তাঁর প্রশ্ন, ‘‘কাশ্মীরে আর একটি রক্তস্নাত দিন! ছ’জন সাধারণ মানুষ, এক জন সেনা, তিন জঙ্গি, সব মিলিয়ে মৃত ১০ জন। ভয়াবহ একটা দিন। এনকাউন্টারের জায়গা থেকে আরও অনেকের আহত হওয়ার খবর আসছে। এনকাউন্টারের জায়গাতেই বিক্ষোভের ঘটনা এখন হয়ে উঠেছে অত্যন্ত স্বাভাবিক। এর থেকে ভাল ভাবে পরিস্থিতি মোকাবিলা করার কোনও উপায় কি নেই?’’
Another blood soaked weekend in Kashmir. 6 protestors killed, 1 solider killed in the line of duty. Together with the 3 militants from this morning’s encounter that’s 10 dead. Reports of many injured at the encounter site. What a horrible day!
— Omar Abdullah (@OmarAbdullah) December 15, 2018
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, ১৯ জুন বিজেপি-পিডিপি জোট ভেঙে গিয়ে রাজ্যপাল শাসন শুরু হওয়া থেকেই হিংসা কয়েক গুণ বেড়েছে কাশ্মীরে। ডিসেম্বরে পঞ্চায়েত নির্বাচন প্রক্রিয়া বানচাল করতে মরিয়া হয়ে ভোট বয়কটের ডাক দিয়েছিল বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। তা নিয়েও হিংসার মুখোমুখি উপত্যকার বিভিন্ন জায়গা।
পিডিপি এবং ন্যাশনাল কনফারেন্সের পাশাপাশি উপত্যকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে হুরিয়ত কনফারেন্সের বিভিন্ন গোষ্ঠী এবং কাশ্মীরের অন্যান্য বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনও।সাধারণ মানুষের এই ক্ষোভকে কাজে লাগিয়ে ভারত এবং ভারতীয় সেনাবিরোধী কার্যকলাপের তীব্রতা আরও বাড়াতে তৎপর এই সব গোষ্ঠী। সীমান্তের ওপারে সক্রিয় পাক মদতপুষ্ট জঙ্গিরাও। ডিসেম্বরের বরফ পেরিয়ে নিয়ন্ত্রণরেখা অতিক্রম করে এই সময়টাই উপত্যকায় ঢোকার ‘মরসুম’সন্ত্রাসবাদীদের। সব মিলিয়ে ফের সঙ্কটজনক হয়ে উঠেছে কাশ্মীরের পরিস্থিতি। যা অনেককেই মনে করিয়ে দিচ্ছে আটের দশকের আতঙ্কের কথা।
(কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, গুজরাত থেকে মণিপুর - দেশের সব রাজ্যের গুরুত্বপূর্ণ খবর জানতে আমাদের দেশ বিভাগে ক্লিক করুন।)
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy