পুলিশ: উমর খালিদ, আশুতোষ, অপরাজিতা রাজা, অনন্ত প্রকাশ, অনির্বাণ ভট্টাচার্য— আপনার মতো এঁরাও অভিযুক্ত। এঁদের গ্রেফতার করতে কীভাবে সাহায্য করবেন?
কানহাইয়া: এঁদের বেশিভাগই জেএনইউ-এর পড়ুয়া। তবে আমার সংগঠনের সদস্যা একমাত্র অপরাজিতাই। তাঁকে আমি খুব ভাল করে চিনি। উমর, আশুতোষ আর প্রকাশ হলেন জেএনইউ-এর ছাত্র। তাঁরা ক্যাম্পাসেই থাকেন। তার চেয়ে বেশি কিছু এঁদের সম্পর্কে জানা নেই। বাকি যাঁদের নাম করছেন, তাঁদের আমি চিনি না। কখনও দেখিনি।
(অপরাজিতা রাজা হলেন বর্ষীয়ান সিপিআই নেতা ডি রাজার মেয়ে। আদালতে জমা পড়া কোনও নথিতে দেশবিরেধী কার্যকলাপে অভিযুক্ত হিসেবে তাঁর নাম নেই। কিন্তু এক বিজেপি নেতা অপরাজিতার বিরুদ্ধে অভিযোগের আঙুল তুলেছেন। ডি রাজা নিজে এ প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘অপরাজিতা এআইএসএফ-এর জেএনইউ ইউনিটের সভানেত্রী। তাঁর সঙ্গে দেশবিরোধী স্লোগানের কোনও সম্পর্ক নেই। বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে দু’দল ছাত্রের মধ্যে যখন সংঘর্ষ হচ্ছিল, তখন থামাতে অপরাজিতাকে সেখানে যেতে হয়েছিল।’’)
পুলিশ: এই অভিযুক্তদের খুঁজে বার করতে আপনি কী আমাদের সঙ্গে আসবেন? যদি না আসেন, তা হলে কেন?
কানহাইয়া: তাঁরা জেএনইউ-এর। এবং এক এক জন এক একটি হস্টেলে থাকেন। এ ছাড়া তাঁরা কখন কোথায় থাকেন আমার জানা নেই।
পুলিশ: এঁদের সবাইকে এক জায়গায় পাওয়া যাবে কী করে?
কানহাইয়া: উমর, অপরাজিতা, আশুতোষ, অনন্তরা জেএনইউ-এর পড়ুয়া। আমার মনে হয়, ক্যাম্পাসেই তাঁদের পাওয়া যাবে।
পুলিশ: আপনি কখনও জম্মু-কাশ্মীর বা পাকিস্তান গিয়েছেন? যদি গিয়ে থাকেন, তা হলে কেন?
কানহাইয়া: ২০১১ বা ২০১২-তে এক বার শ্রীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়েছিলেমা। একটি সেমিনারে যোগ দিতে। পাকিস্তান কখনও যাইনি।
পুলিশ: আপনি কোন রাজনৈতিক দলে আছেন? সে দলে আপনার পদ কী?
কানহাইয়া: অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস’ ফেডারেশন। আমি ইউনিট সেক্রেটারি ছিলাম এবং রাজ্য কমিটির সদস্য ছিলাম। এখন আমি জেএনইউ ছাত্র সংসদের অধ্যক্ষ।
পুলিশ: ঐ রাজনৈতিক সংগঠনে আপনার সহকর্মী বা বন্ধু কারা?
কানহাইয়া: বিশ্বজিত কুমার। ভল্লি উল্লাহ কাদরি, অপরাজিতা রাজা, অরুণ।
পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারি বেলা ৩টে থাকা রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত জেএনইউ ক্যাম্পাসে কী কর্মসূচির আয়োজন করেছিলেন আপনারা?
কানহাইয়া: সে দিন আমি বা আমার সংগঠন কোনও কর্মসূচির আয়োজন করেনি। আমি এ রকম কর্মসূচি সমর্থনও করি না।
পুলিশ: সাংস্কৃতিক সন্ধ্যা নামে যে পোস্টার আপনি দেখিয়েছেন, তাতে উমর, অনির্বাণদের নাম রয়েছে। তাঁরা কি জেএনইউ পড়ুয়া না অন্য কিছু?
কানহাইয়া: এঁদের কেউ আমার সংগঠনের নন। তবে তাঁরা জেএনইউ-এর ছাত্র।
পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির ভিডিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, উমর খালিদ, অপরাজিতা রাজা, আশুতোষ, অনন্ত, অনির্বানদের সঙ্গে আপনিও একই মিছিলে হাঁটছেন। এঁদের মধ্যে ক’জন আপনার দলের সঙ্গে যুক্ত?
কানহাইয়া: শুধু মাত্র অপরাজিতা রাজা আমার সংগঠন এআইএসএফ-এর সদস্যা।
আরও পড়ুন:
ক্যাম্পাসে খালিদরা, বাইরে পুলিশ
পুলিশ: যে পড়ুয়ারা দেশবিরোধী স্লোগান দিচ্ছিলেন, তাঁদের থামানোর জন্য আপনি কোনওরকম চেষ্টা কি করেছিলেন?
কানহাইয়া: আমি তখন সেখানে ছিলাম না। সবরমতীতে যে কর্মসূচি আয়োজিত হয়েছিল, আমি তার অংশ ছিলাম না। কিন্তু সবরমতী ধাবা থেকে গঙ্গা ধাবা পর্যন্ত রাস্তায় ছাত্রদের মধ্যে যা সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল, তা থামতে ছাত্র সংসদের অধ্যক্ষ হিসেবে আমাকে সেখানে যেতে হয়েছিল। আমি নিরাপত্তা রক্ষীদের বলেছিলাম মারামারি থামাতে। ছাত্রদের বলেছিলাম, নিজেদের মধ্যে মারামারি না করতে। কিন্তু আমি যতক্ষণ সেখানে ছিলাম, ততক্ষণ কোনও দেশবিরোধী স্লোগান ওঠেনি।
পুলিশ: ছাত্র সংসদের অধ্যক্ষ হিসেবে পুলিশকে আপনি কি আগে থেকে কিছু জানিয়েছিলেন, যাতে সংঘর্ষ রোখা সম্ভব হয়?
কানহাইয়া: আমি যখন পৌঁছেছিলাম, তখন সবরমতী ধাবা এবং গঙ্গা ধাবাতে পুলিশ ছিল।
পুলিশ: জেএনইউ কর্তৃপক্ষ বা নিরাপত্তা রক্ষীদের কি আপনি বলেছিলেন, দেশবিরোধী কার্যকলাপ রুখতে?
কানহাইয়া: এ রকম কোনও ঘটনার কথা আমি জানতাম না।
পুলিশ: এটা কি সত্যি যে আফজল গুরু এবং মকবুল ভাটের মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোর জন্য সাংস্কৃতিক কর্মসূচির আয়োজন করে পোস্টার লাগানো হয়েছিল?
কানহাইয়া: হ্যাঁ।
পুলিশ: খালিদ, অনির্বাণদের কারা সমর্থন করছেন?
কানহাইয়া: তাঁরা জেএনইউ-এর ছাত্র জানি। কিন্তি তাঁদের বিষয়ে আর কিছু জানা নেই।
পুলিশ: এ রকম কার্যকলাপ কি জেএনিউ ক্যাম্পাসে চলতে দেওয়া উচিত?
কানহাইয়া: না।
পুলিশ: এই ধরনের কর্মসূচি আয়োজনের জন্য টাকাপয়সা জোগাচ্ছেন কারা?
কানহাইয়া: আমি জানি না।
পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির ভিডিও ফুটেজ বলছে, আপনি সে দিনের বেআইনি কার্যকলাপে অংশ নিয়েছিলেন। আপনার এ ব্যাপারে কী বলার আছে?
কানহাইয়া: ৯ ফেব্রুয়ারি দিনের বেলা আমি ঘুমোচ্ছিলাম। বিকেল ৫টায় ঘুম থেকে উঠি। ফ্রেশ হওয়ার পর হস্টেল থেকে বেরিয়েছিলাম চা খাওয়ার জন্য। হস্টেলের বাইরে কয়েকজন ছাত্র বলছিলেন, সবরমতী হস্টেলে এক দল পড়ুয়া সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান করছেন। হস্টেলের বাইরে এবিভিপি রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে। তাঁদের কাছেই শুনি, এবিভিপির রাস্তা অবরোধ দু’দলের মধ্যে উত্তেজনা বাড়াচ্ছে এবং যে কোনও সময় হিংসাত্মক পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
একটা পরোটা হাতে নিয়ে আমি আরও কিছু ছাত্রকে নিয়ে বাইকে করে সবরমতী হস্টেলের দিকে রওনা দিই। সেখানে গিয়ে দেখি, পুলিশ পিসিআর ভ্যান এসেছে, প্রচুর পুলিশ মোতায়েন হয়েছে। এক দিকে এবিভিপি কর্মীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন। আমি সেখানেই থামি। দেখি আর এক দল পড়ুয়া একটা প্রতিবাদ মিছিল বার করছে।
দুই গোষ্ঠীই পরস্পরকে গালিগালাজ করা শুরু করে। তার পরই প্রাবল মারামারি শুরু হয়ে যায়। এই সংঘর্ষ থামাতে আমি হস্তক্ষেপ করি। দুই গোষ্ঠীর মধ্যে মানববন্ধন তৈরি করে গোলামাল থামানোর চেষ্টা করি। দুই গোষ্ঠীকেই আমি থামানোর চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু এবিভিপি-র বিরোধী গোষ্ঠীটা গঙ্গা ধাবার দিকে মিছিল নিয়ে এগোতে শুরু করে। এবিভিপিও তাদের বাধা দিতে থাকে। গোলমাল চলতে চলতেই দুই গোষ্ঠী গঙ্গা ধাবায় পৌঁছে যায়। সেখানে তখন বিশাল পুলিশ বাহিনী রয়েছে।
পুলিশ হস্তক্ষেপ করার পর দুই গোষ্ঠীর মারামারি থামে। তার পরও দু’পক্ষই পরস্পরের বিরুদ্ধে স্লোগান দিতে শুরু করে। আমি দু’পক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করি। আমি ছাত্রদের উদ্দেশে ভাষণ দিই এবং গোটা ঘটনার নিন্দা করি। আমার ভাষণ শেষ হওয়ার পর দু’পক্ষই ঘটনাস্থল থেকে চলে যায়।
পুলিশ: ৯ ফেব্রুয়ারির কর্মসূচির যে সব পোস্টার লাগানো হয়েছিল ক্যাম্পাসে, সে সব আপনি খুলে ফেললেন না কেন?
কানহাইয়া: আমাকে কেউ কিছু বলেনি, আমি জানতামও না অনুষ্ঠানটার ব্যাপারে।
পুলিশ: বিশ্ববিদ্যালয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং যৌক্তিকতার পরিসর থাকা নিঃসন্দেহে মৌলিক অধিকার। কিন্তু দেশবিরোধী স্লোগান দেওয়া এবং দেশবিরোধী গোষ্ঠীগুলিকে সমর্থন করা সংবিধান প্রদত্ত মৌলিক অধিকারের অপব্যবহার। আপনি মানেন সে কথা?
কানহাইয়া: হ্যাঁ, আমি এ কথা মানি।
দ্য টেলিগ্রাফ প্রকাশিত মূল প্রতিবেদনটি পড়তে ক্লিক করুন:
The Kanhaiya interrogation
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy