প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের হাত থেকে পুরষ্কার নিচ্ছেন জম্মু কাশ্মীরের রাজ্যপাল এন এন ভোরা। —ফাইল চিত্র
মেহবুবা মুফতির পিডিপি সরকারের উপর থেকে বিজেপি সমর্থন তুলে নেওয়ার পরই জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যপালের শাসন কার্যকর হয়েছে। কিন্তু রাজ্যপালের শাসন কেন? অন্য রাজ্যের মতো কেন নয় রাষ্ট্রপতি শাসন?
সাধারণভাবে বেশ কয়েকটি কারণে ভারতের কোনও রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন জারি হতে পারে। কোনও রাজ্যে নির্বাচিত সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণে ব্যর্থ হলে, বিধানসভার নেতা নির্বাচন করতে না পারলে বা ভোটগ্রহণ পিছিয়ে যাওয়ার মতো সাংবিধানিক সঙ্কট তৈরি হলে ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী জারি হতে পারে রাষ্ট্রপতি শাসন। কোনও রাজ্যে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হলেও এই ধারা প্রয়োগ করা হতে পারে।
কিন্তু জম্মু কাশ্মীরের ক্ষেত্রে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হলে প্রথমে জারি হয় রাজ্যপালের শাসন। কারণ জম্মু-কাশ্মীরে রয়েছে আলাদা সংবিধান। সেই সংবিধানের ৯২ নম্বর ধারা অনুযায়ী প্রথমে ছ’মাসের জন্য জারি হয় রাজ্যপালের শাসন। তবে তার জন্য রাষ্ট্রপতির অনুমোদন নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যেও সংকট না কাটলে তারপর ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী জারি হয় রাষ্ট্রপতি শাসন। তারপর ছ’মাসের মধ্যে নির্বাচন করতে হয়। তবে নির্বাচন কমিশন কোনও কারণে এই সময়ের মধ্যে ভোট করতে না পারলে সেই মেয়াদ বাড়তে পারে।
আরও পড়ুন: মেহবুবার হাত ছাড়ল বিজেপি, রাজ্যপাল শাসন জারি উপত্যকায়
বিজেপি সমর্থন তোলার পরই মুখ্যমন্ত্রীর পদ থেকে ইস্তফা দেন জম্মু কাশ্মীরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি। তারপরই রাষ্ট্রপতি ও কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রককে রিপোর্ট পাঠান ভোরা। তার মধ্যেই পিডিপি ও অন্যান্য দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলেন। কিন্তু কোনও পক্ষই সরকার গঠনের দাবি না জানানোয় রাষ্ট্রপতির কাছে রাজ্যপালের শাসনের জন্য অনুমতি চান রাজ্যপাল। রাষ্ট্রপতিও তাতে সবুজ সঙ্কেত দিয়ে দিয়েছেন। তারপরই উপত্যকায় জারি হয়েছে রাজ্যপালের শাসন। ১৯৭৭ সাল থেকে এই নিয়ে সে রাজ্যে অষ্টমবার রাজ্যপালের শাসন জারি হল।
রাজ্যপালের শাসন জারি হওয়ার পর রাজ্যপাল মনে করলে বিধানসভা ভেঙে দিতে পারেন। অথবা ‘সাসপেন্ডেড অ্যানিমেশন’ হিসাবে রাখতে পারেন। যার অর্থ, বিধায়কদের দফতর চালু থাকবে, কিন্তু তাঁদের কোনও ক্ষমতা থাকে না। কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা থাকে না বিধানসভার। আর বিধানসভা ভেঙে দিলে তার ছ’মাসের মধ্যে ভোট প্রক্রিয়া শেষে করতে হয় নির্বাচন কমিশনকে। তবে এই বিষয়টি সাধারণত কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা করেই রাজ্যপালকরে থাকেন। রাজ্যপালের শাসন চলাকালীন তিনিই কার্যত মুখ্যমন্ত্রীর ভূমিকা পালন করেন। তাঁর উপদেষ্টারাও মন্ত্রীর সমতুল ক্ষমতা ও পদমর্যাদা ভোগ করেন।
আরও পড়ুন: রাজ্যপাল শাসনেই আমাদের সুবিধা, বললেন কাশ্মীরের পুলিশ প্রধান
২৬ মার্চ, ১৯৭৭ —(১০৫ দিন) শেখ আবদুল্লার ন্যাশনাল কনফারেন্স সরকার থেকে সমর্থন তুলে নেয় কংগ্রেস
৬ মার্চ, ১৯৮৬ — (২৪৬ দিন) আস্থা ভোটে হারে সরকার পক্ষ
১৯ জানুয়ারি, ১৯৯০ — (৬ বছর ২৬৪ দিন) উগ্রপন্থা ও আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি
১৮ অক্টোবর, ২০০২ — (১৫ দিন) ভোটগ্রহণে দেরি
১১জুলাই ২০০৮ — (১৭৮ দিন) কংগ্রেসের গুলাম নবি আজাদ সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার পিডিপি-র
৯ জানুয়ারি, ২০১৫ — (৫১ দিন) নির্বাচনের পর কোনও দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। জোটও হয়নি
৮ জানুয়ারি, ২০১৬ — তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সঈদের মৃত্যু
১৯ জুন, ২০১৮ — (এখনও পর্যন্ত) মুফতি সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার বিজেপির
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে ব্যর্থ ডোভাল, তির বিরোধীদের
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy