Advertisement
১১ মে ২০২৪
National news

কাঁধে ডুলি নিয়ে জঙ্গলে ৭ কিমি হাঁটলেন গ্রামবাসীরা, প্রসব মাঝপথেই

হাসপাতালে তো নিয়ে যেতেই হবে আসন্নপ্রসবাকে। তাই বাঁশ, কাপড় আর দড়িদড়া দিয়ে ডুলি বানালেন গ্রামবাসীরা। অনেকটা পালকির মতো।

কাঁধে ডুলি নিয়ে... ছবি- সংগৃহীত।

কাঁধে ডুলি নিয়ে... ছবি- সংগৃহীত।

সংবাদ সংস্থা
হায়দরাবাদ শেষ আপডেট: ০৭ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ২০:৪৭
Share: Save:

প্রসব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছিলেন মুথুম্মা। উপজাতি রমণী। কিন্তু কিছুই করার ছিল না তাঁর স্বামী, পরিবারের লোকজন আর গ্রামের বাসিন্দাদের। ৯/১০ কিলোমিটার পথ পেরোতেই হবে সবচেয়ে কাছের গ্রামীণ হাসপাতালটিতে পৌঁছনোর জন্য। অতটা পথ, অথচ গাড়ি যাওয়ার কোনও রাস্তাই নেই। ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে পেরোতে হবে অতটা পথ। পায়ের তলায় মাটিও শক্ত নয়। কর্দমাক্ত।

কিন্তু হাসপাতালে তো নিয়ে যেতেই হবে আসন্নপ্রসবাকে। তাই বাঁশ, কাপড় আর দড়িদড়া দিয়ে ডুলি বানালেন গ্রামবাসীরা। অনেকটা পালকির মতো। তার হাতলদু’টিতে কাঁধ দিয়ে ঘন জঙ্গলের মধ্যে দিয়ে কাদা মাটির বাধা সরিয়ে মুথুম্মাকে নিয়ে হাঁটতে লাগলেন তাঁর পরিবারের লোকজন, গ্রামবাসীরা।

অনেকটা পথ। ডুলিটাও ভারী। তাই মাঝেমধ্যেই কাঁধ বদলাতে হল সেই ডুলিবাহকদের। পালা করে ‘কাঁধ’ দিলেন মুথুম্মার স্বামী, বাড়ির লোকজন আর গ্রামের পড়শিরা। ফলে, তাঁদের থামতেও হল মাঝেমধ্যে।

কিন্তু তার পর ৬/৭ কিলোমিটার গিয়ে সত্যি-সত্যিই মাটিতে ডুলি নামিয়ে রাখতে হল বাহকদের। কারণ, প্রসবযন্ত্রণা আর সহ্য করতে পারছিলেন না মুথুম্মা। আর ডুলি নামানোর পরেই মুথুম্মাকে প্রসব করালেন গ্রামের মহিলারা। খোলা জঙ্গলেই নাড়ি কাটা হল মুথুম্মার।

আরও পড়ুন- আদিবাসী দোপাট্টায় শাহরুখ, খুশি কুইয়ানি​

আরও পড়ুন- মেয়েদের সঙ্গে ফুটবল নিয়ে দৌড়চ্ছেন মায়েরাও​

অন্ধ্রপ্রদেশের ভিজিয়ানাগ্রাম জেলার মাসিকা বালাসা চিন্তালা সালুরে এই ঘটনা ঘটেছে হালে। আর তার ভিডিয়ো তুলে রেখেছিলেন এক গ্রামবাসী।

মাসিকা বালাসা চিন্তালা সালুরের গোটা এলাকাটাই উপজাতিদের। সমস্যাটা আজকের নয়। বহু দিনের। কাছেপিঠে কোনও হাসপাতাল নেই। চিকিৎসক নেই। পাকা রাস্তাঘাট নেই। গাড়িঘোড়া নেই যাতায়াতের। তাই বার বার স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে হাসপাতাল আর রাস্তা গড়ার দাবি জানিয়েছেন গ্রামবাসীরা। কোনও কাজ হয়নি।

মাসিকা বালাসা চিন্তালা সালুরের মতো ভিজিয়ানাগ্রাম জেলার প্রত্যন্ত গ্রামগুলিতে এই ঘটনা নতুন ঘটে চলেছে আকছারই। কিন্তু তার পরেও প্রশাসনের হেলদোল চোখে পড়েনি কারও।

গত জুলাইয়ে মাসিকা বালাসা চিন্তালা সালুরেই ৫ মাসের সন্তানসম্ভবাকে নিয়ে অ্যাম্বুল্যান্স পাওয়ার জন্য তাঁর স্বামীকে ওই ভাবে কাঁধে নিয়ে হাঁটতে হয়েছিল ১২ কিলোমিটার পথ। সোমবার ২৫ বছর বয়সী জিন্দাম্মাকেও ওই ভাবেই নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। জন্মের পর তাঁর সন্তানের মৃত্যু হয়।

মাসিকা বালাসা চিন্তালা সালুরের ইন্টিগ্রেটেড ট্রাইব্যাল ডেভেলপমেন্ট এরিয়া প্রোজেক্ট অফিসার লক্ষ্ণীশা বলছেন, ‘‘প্রশাসনের কোনও দোষ নেই। অর্থ মঞ্জুর করা হয়েছিল রাস্তা নির্মাণের জন্য। কিন্তু কোনও ঠিকাদার মেলেনি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE