অরবিন্দ কেজরীবালের দিকে ছোড়া হয়েছে কালি। ডান দিকে অভিযুক্ত ভাবনা আরোরাকে আটকানোর চেষ্টা করছে পুলিশ। রবিবার নয়াদিল্লির ছত্রসল স্টেডিয়ামে। ছবি: পিটিআই।
অনুষ্ঠানটা ছিল ধন্যবাদ জানানোর। আর সেখানেই কিনা কালির ছিটে খেতে হল দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবালকে!
দিল্লিতে জোড়-বিজোড় গাড়ির সাফল্য উদ্যাপন করতে ছত্রসল স্টেডিয়ামে রবিবার কেজরীবাল বক্তব্য শুরু করতেই এক মহিলা মঞ্চের একেবারে সামনে পৌঁছে যান। তাঁর হাতে ছিল একটি সিডি ও কিছু কাগজ। মহিলা মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে সিএনজি ও অটো পারমিট নিয়ে দুর্নীতির অভিযোগ করতে থাকেন। তার মধ্যেই হঠাৎ তিনি কালি ছুড়ে মারেন মুখ্যমন্ত্রীকে! গায়ে কালি লাগলেও কেজরীবাল অবশ্য শান্তই ছিলেন। উল্টে মঞ্চ থেকে তিনি পুলিশকে অনুরোধ করেন মহিলাকে ছেড়ে দিতে। বলেন, ওই মহিলা সিএনজি দুর্নীতি নিয়ে কিছু বলছেন। তাঁর থেকে কাগজপত্র নিয়ে ব্যাপারটা যেন কেউ শুনে নেন। কিন্তু পুলিশ তৎক্ষণাৎ মহিলাকে স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে যায় ও আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।
অতীতেও কেজরীবালের মুখে কালি ছেটানোর ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এখন তিনি মুখ্যমন্ত্রী। ফলে নিমেষের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে রাজধানীর রাজনীতি তেতে ওঠে। স্বাভাবিক ভাবেই সবচেয়ে সরব আম আদমি পার্টি। এবং তাদের তির বিজেপির দিকে। ঘটনার মিনিট খানেকের মধ্যেই কেজরীবাল-সরকারের মন্ত্রী কপিল মিশ্র বলে দেন, ‘‘এটি বিজেপির কারসাজি।’’ পরে উপমুখ্যমন্ত্রী মণীশ সিসৌদিয়া সাংবাদিক বৈঠক করে বলেন, ‘‘বিজেপি সরকারের অধীনে দিল্লি পুলিশ মুখ্যমন্ত্রী কেজরীবালকে হত্যার ষড়যন্ত্র করছে। সে কারণে এত বড় স্টেডিয়ামে প্রায় হাজার পনেরো লোকের উপস্থিত হলেও কারও ব্যাগ তল্লাশি করা হয়নি! এক মহিলা কী করে মঞ্চের এত সামনে চলে এলেন? আজ না হয় কালি ছিটিয়েছেন, যদি অ্যাসিড ছুঁড়তেন? বা বোমা ফাটাতেন?’’
আম আদমি পার্টি তাদের দিকে আঙুল তুললেও তাতে মোটেই বিস্মিত নয় দিল্লি বিজেপি। তবে দলের নেতাদের দাবি, গোটাটাই সাজানো ঘটনা! দিল্লি বিজেপির সভাপতি সতীশ উপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘এ ধরনের ঘটনা মোটেই সমর্থনযোগ্য নয়। কিন্তু এটি কেজরীবালের সাজানো ঘটনা! কাউকে দিয়ে নিজেকে আক্রমণ করিয়ে সহানুভূতি কুড়নোর রাজনীতি করেন। আজও তার অন্যথা হয়নি।’’
এ দিনের ঘটনার পরে দিল্লি পুলিশকে আক্রমণ করে মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তা জোরদার করার দাবি তুলেছে আম আদমি পার্টি। আজ সিসোদিয়া বলেন, ‘‘আমাদের ভিআইপি মর্যাদা চাই না। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তাও সুনিশ্চিত করা উচিত।’’ যদিও কেজরীবাল নিজেই এত দিন বলেছেন, তাঁর কোনও নিরাপত্তা চাই না। কোনও ভিআইপি মর্যাদাও নিতে নারাজ তিনি। স্বাভাবিক ভাবেই সিসৌদিয়ার এ দিনের বক্তব্যের পরে কটাক্ষ করতে ছাড়ছেন না বিরোধী নেতারা।
মুখ্যমন্ত্রীকে কালি ছোড়ার ঘটনায় আটক মহিলার নাম ভাবনা অরোরা। ভাবনা জানিয়েছেন, তিনি ‘আম আদমি সেনা’র পঞ্জাবের দায়িত্বে রয়েছেন। এই দলটি আসলে আম আদমি পার্টি থেকে বেরিয়ে যাওয়া বিক্ষুব্ধ গোষ্ঠী। ভাবনার অভিযোগ, দিল্লিতে জোড়-বিজোড় পর্বের সময়ই গাড়িতে সিএনজি স্টিকার লাগানো নিয়ে দুর্নীতি হয়েছে। পাশাপাশি অটোর পারমিট নিয়েও দুর্নীতি হয়েছে। তাঁর পরিবারের এক সদস্য সমস্যাতেও পড়েন এর জন্য। বিষয়টি নিয়ে অনেক বার দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও দিল্লি সরকারের অফিসারদের সঙ্গে দেখা করতে চেয়েও না পেরে ক্ষোভের চোটে তিনি আজ এই কাজ করেছেন। অভিযুক্ত ভাবনা আরোরাকে গ্রেফতারের জন্য ম্যাজিস্ট্রেটের অনুমতি চেয়েছে দিল্লি পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy