সেপ্টেম্বরের পর কালো টাকা বিছানার তলায় নিয়ে শান্তিতে ঘুমোতে পারবেন না।
কংগ্রেসের দুর্নীতি নিয়ে যে নরেন্দ্র মোদী গত দু’বছর ধরে তোপ দেগে আসছেন, এমন এক মন্তব্য যদি বিরোধীদের উদ্দেশ্যে হত, তা-ও তার এক সহজ মানে ছিল। কিন্তু এই হুঁশিয়ারি প্রধানমন্ত্রী দিয়ে বসলেন তাঁর নিজের দলের নেতাদের। তা-ও আবার এক গোপন বৈঠকে। যে বৈঠকের সারবত্তা প্রকাশ্যে আনেননি বিজেপির কোনও নেতাই।
ইলাহাবাদে কর্মসমিতির বৈঠক আনুষ্ঠানিক ভাবে শুরুর আগেই গোটা দেশ থেকে আসা দলের পদাধিকারীদের সঙ্গে একান্তে আলোচনায় বসেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সেই বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী নিজের দলের নেতাদেরই হুঁশিয়ারি দিয়ে জানান, এই জুন মাস থেকে তিন মাসের জন্য সকলকে সুযোগ দেওয়া হচ্ছে কালো টাকা ঘোষণার জন্য। ৩০ সেপ্টেম্বর এই ঘোষণার মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার পর এ দেশের কারও কাছে কালো টাকা পাওয়া গেলে তাঁকে কোনও ভাবেই রেয়াত করা হবে না।
প্রধানমন্ত্রীর কথায়, “সেপ্টেম্বরের পর আমার কাছে এসে কোনও অনুরোধ করেও কোনও লাভ হবে না। এই বিষয়ে আমি কাউকেই রেয়াত করব না। তার চেয়ে ভাল আপনারা এই সময়ের মধ্যে কালো টাকা ঘোষণা করে জরিমানা দিয়ে নিশ্চিন্তে থাকুন। আশপাশের ব্যবসায়ীদেরও বোঝান সেই পথে হাঁটতে।” প্রধানমন্ত্রীর সতর্কবাণী, এই সময়ের পরেও কালো টাকার বিষয় চেপে রাখলে শান্তিতে ঘুমোতে দেবে না তাঁর সরকার। সে নিজের দলের কোনও ব্যক্তিই হোন না কেন।
আরও পড়ুন
করের টাকায় আর কত দিন, এআই নিয়ে প্রশ্ন মন্ত্রীরই
গত বছর প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বিদেশে গচ্ছিত কালো টাকা ঘোষণার জন্য তিন মাসের সময় দিয়েছিলেন। এ বারে ১ জুন থেকে দেশে রাখা কালো টাকা ঘোষণার জন্য তিন মাসের সময় দিয়েছেন। ৩০ সেপ্টেম্বর এর মেয়াদ শেষ হচ্ছে। তার পর কর ও জরিমানা দেওয়ার জন্য আরও দুই মাস সময় পাওয়া যাবে। যত পরিমাণ কালো টাকা ঘোষণা করা হবে, তার উপর ৩০ শতাংশ কর দিতে হবে। আর করের উপর ২৫ শতাংশ ‘কৃষি কল্যাণ সেস’ ও ২৫ শতাংশ জরিমানা দিতে হবে। সব মিলিয়ে প্রায় ৪৫ শতাংশ কর ও জরিমানা দিয়ে কালো টাকা ঘোষণা করতে পারেন কোনও ব্যক্তি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে থেকেই কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে বড়সড় প্রতিশ্রুতি করে এসেছেন নরেন্দ্র মোদী। এমনকী, তাঁর দলের নেতা মোদীর সুরে সুর মিলিয়ে এমনও দাবি করেছিলেন, বিদেশ থেকে সমস্ত কালো টাকা দেশে ফিরিয়ে আনলে প্রত্যেকের ব্যাঙ্ক খাতে ১৫ লক্ষ টাকা করে আসবে। মোদী সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিরোধীরা অনেক দিন ধরে বিজেপিকে এই নিয়ে উঠতে বসতে কটাক্ষ করেছে। বার বার প্রশ্ন করেছে, ‘রোজ ব্যাঙ্ক খাতা খতিয়ে দেখছি আমরা। কিন্তু ১৫ লক্ষ টাকা এখনও সরকার দিতে পারল না।’ এমনকী, যে বাবা রামদেব সেই সময় কালো টাকা ফিরিয়ে আনা নিয়ে বিজেপির প্রতিশ্রুতিতে সায় দিয়ে সরব হয়েছিলেন, আজ তিনিও হতাশ।
সরকার বার বার অবশ্য দাবি করেছে, কালো টাকা নিয়ে মোদী সরকার যে যে পদক্ষেপ করেছে, অতীতে কোনও সরকার এই ব্যবস্থা নেয়নি। নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর প্রথম মন্ত্রিসভার বৈঠকেই একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করেছিল। তাতেও সন্তুষ্ট করা যায়নি বিরোধীদের। মাঝে বিজেপি সভাপতি অমিত শাহ ১৫ লক্ষ টাকা ব্যাঙ্ক খাতে দেওয়ার বিষয়টি ‘নির্বাচনী তর্জমা’ বলে বিতর্ক আরও বাড়িয়ে তুলেছিলেন। বিজেপি সূত্রের মতে, কালো টাকা উদ্ধার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী কঠোর পদক্ষেপ করতে চাইছেন। যে ভাবে আজ নিজের দলের নেতাদেরই তিনি কঠোর বার্তা দিলেন, তাতে অনেকের নাভিশ্বাস ওঠার পালা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy