Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

পূর্বপুরুষের হাঁড়ির খবর জানতে বিশেষ গবেষণা

লাহুরাদেওয়ার মেনুর খোঁজ পেতে গবেষণার জন্য প্রেসিডেন্সির ভূবিদ্যার গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। সম্প্রতি সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘কারেন্ট সায়েন্স’ জার্নালে।

লাহুরাদেওয়ার এই মাটির পাত্রের টুকরো নিয়েই হয়েছে গবেষণা। নিজস্ব চিত্র

লাহুরাদেওয়ার এই মাটির পাত্রের টুকরো নিয়েই হয়েছে গবেষণা। নিজস্ব চিত্র

স্বাতী মল্লিক
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০৩:৪৫
Share: Save:

প্রায় ৮ হাজার বছর আগে এ দেশে ধানচাষ করতেন আমাদের পূর্বপুরুষ— উত্তরপ্রদেশের লাহুরাদেওয়ার হ্রদ থেকে উদ্ধার হওয়া মাইক্রোস্কোপিক অ্যালগির ফসিল নিয়ে গবেষণা করে এই দাবি করেছিলেন পুরাতত্ত্ববিদেরা। কিন্তু ধানচাষ করলেও পাতে কী পড়ত সেই ক্ষুদ্র জনপদের অধিবাসীদের? কী খেতেন তাঁরা? এর উত্তর জানতেই এ বার পুরাতত্ত্ববিদদের সঙ্গে একজোট হয়েছেন প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূবিদ্যার গবেষকেরা। লাহুরাদেওয়ার হাঁড়ির খবর পেতে ‘জৈব অবশিষ্টের বিশ্লেষণ’ (অরগ্যানিক রেসিডিউ অ্যানালিসিস) পদ্ধতির ব্যবহার করেছেন ওই গবেষকেরা, যা সাধারণত পুরাতত্ত্বের ক্ষেত্রে এ দেশে খুব একটা ব্যবহার হয় না বলেই দাবি তাঁদের।

লাহুরাদেওয়ার মেনুর খোঁজ পেতে গবেষণার জন্য প্রেসিডেন্সির ভূবিদ্যার গবেষকদের সঙ্গে কাজ করেছেন সুইডেনের স্টকহোম বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকেরা। সম্প্রতি সেই গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে ‘কারেন্ট সায়েন্স’ জার্নালে। তাঁদের এক জন, প্রেসিডেন্সির ভূবিদ্যার শিক্ষক সুপ্রিয় দাস জানাচ্ছেন, লাহুরাদেওয়ার খনন এলাকা থেকে উদ্ধার হওয়া বিভিন্ন পাত্রের ভগ্নাংশে লুকিয়ে রয়েছে সেই সময়ের খাবারের কণা। গবেষণাগারে সেই কণা উদ্ধার করে তা নিয়ে পরীক্ষা চালিয়েছেন তাঁরা, যাকে বলে ‘অরগ্যানিক রেসিডিউ অ্যানালিসিস’। সুপ্রিয়বাবুর ব্যাখ্যা, ‘‘মাটির পাত্রে অনেক ছিদ্র থাকে। তার মধ্যে খাবার রাখলে সেই ছিদ্রে প্রোটিন বা ফ্যাটজাতীয় খাবারের কণা ঢুকে যায়, যা হাজার হাজার বছর ধরে সেখানেই রয়ে যায়। কারণ, পাত্রের ছিদ্রে থাকে বলে ব্যাক্টিরিয়া ওই কণাকে নষ্ট করতে পারে না।’’ প্রেসিডেন্সির গবেষণাগারে লাহুরাদেওয়ার মাটির পাত্রের অংশ থেকে বিশেষ উপায়ে সেই খাদ্যকণাকে বার করেছেন সুপ্রিয়বাবুরা।

সেই সবের বিশ্লেষণ থেকে ওই গবেষকেরা জানাচ্ছেন, ৮ হাজার বছর পূর্বে ধান চাষ করলেও ভাত যে পূর্বপুরুষদের পাতে পড়ত, তেমন কোনও প্রমাণ পাননি তাঁরা। কারণ, স্টার্চ জাতীয় কোনও খাবারের অস্তিত্ব গবেষণায় ধরা পড়েনি। কিন্তু তাঁরা যে বড় প্রাণীর মাংস (কোনও জলজ প্রাণী নয়) খেত, তার প্রমাণ পেয়েছেন গবেষকেরা। এই মাংস নীলগাই বা বুনো শুয়োরের হতে পারে বলে মনে করছেন ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ বিভাগের প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল গৌতম সেনগুপ্ত। তাঁর মতে, ‘‘এটাই প্রমাণ করে যে, আমরা ভারতীয়রা বহুদিন থেকেই মাংসাশী। নিরামিষ খাওয়া নিয়ে বর্তমানে যে রব উঠেছে, তার যে কোনও ঐতিহাসিক ভিত্তি নেই, লাহুরাদেওয়ার খাদ্যাভ্যাসই তার প্রমাণ।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Archaeologist Presidency University Research
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE