Advertisement
০৭ মে ২০২৪

চাপ নিয়ে লাভ নেই উচ্চ রক্তচাপে

হাই ব্লাড প্রেশারের সমস্যা ঘরে ঘরে। তবে তা যেন নিয়ন্ত্রণসীমার বাইরে না চলে যায়, তার জন্য সতর্ক হোন। খাদ্যাভ্যাস ও জীবনধারণের পদ্ধতি বদলালেই মিলবে সুরাহাচিকিৎসকের মতে, আশি-নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ‘এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন’। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি কমতে থাকে।

মধুমন্তী পৈত চৌধুরী
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৫ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:০১
Share: Save:

আধুনিক জীবনের দুশ্চিন্তা, কর্মক্ষেত্রে অতিরিক্ত চাপ, রোজের টানাপড়েনে রক্তচাপ যখন-তখন বেড়ে যেতে পারে। অনেক ক্ষেত্রে বিপজ্জনক সীমার কাছে পৌঁছনোর আগে রোগী তা অনুধাবন করতে পারেন না। ফলে হৃদ্‌রোগ বা স্ট্রোকের আশঙ্কা বাড়তে পারে। তাই চল্লিশের পর থেকেই নিয়মিত ব্লাড প্রেশার মাপা দরকার। তবে নয়া প্রজন্মের অনেকেরই তিরিশের পরেও এই সমস্যা দেখা যায়। সে ক্ষেত্রে দায়ী খাদ্যাভ্যাস বা লাইফস্টাইল। হাইপার টেনশন (হাই ব্লাড প্রেশার) ও হাইপো টেনশন (লো ব্লাড প্রেশার)-এর মধ্যে হাইপার টেনশনের সমস্যাই বেশি দেখা যায়। চিকিৎসকের মতে, আশি-নব্বই শতাংশ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ ‘এসেনশিয়াল হাইপারটেনশন’। অর্থাৎ বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শরীরের ফ্লেক্সিবিলিটি কমতে থাকে। ব্লাড ভেসেলগুলিও ব্যতিক্রম নয়। তাই প্রাকৃতিক নিয়মেই নির্দিষ্ট বয়সের পরে রক্তচাপ একটু বেশির দিকেই থাকে। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণসীমা পার করলেই সমস্যা।

স্বাভাবিক রক্তচাপ

সম্প্রতি প্রকাশিত আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী, যে কোনও সুস্থ ব্যক্তির স্বাভাবিক রক্তচাপ হওয়া উচিত ১৩০/৮০। বয়স-লিঙ্গ নির্বিশেষে সকলের জন্যই এটা প্রযোজ্য। চিকিৎসক সুবীর মণ্ডলের মতে, রিডিং ১৩০-এর বদলে ১৪০ হলেও ঘাবড়ানোর কিছু নেই। কিন্তু তার বেশি হলে চিন্তার বিষয়।

মনে রাখুন

• চল্লিশের পর থেকেই নিয়মিত ব্লাড প্রেশার চেক করুন। দরকার হলে বাড়িতে মেশিন কিনেও তা করতে পারেন
• হাই ব্লাডপ্রেশারে অ্যালকোহল, ধূমপান ও কফি খাওয়া নিষিদ্ধ
• ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ব্লাড প্রেশারের ওষুধ বন্ধ করবেন না। খেতে ভুলেও যাবেন না। যে ওষুধ দিনে যে ভাবে খাওয়ার, সেই নিয়ম মানবেন
• বিরিয়ানির মাংস খেলে ক্ষতি নেই। তবে ক্ষতি বিরিয়ানির ভাত বা মাংসের ঝোলে
• ডায়েটে ফলমূল রাখুন
• ব্লাড প্রেশার বাড়ার সঙ্গে শরীরের অন্য কোনও সমস্যা বাড়ছে কি না, নজর রাখুন। হয়তো ব্লাড প্রেশার বাড়াটা উপসর্গ, রোগ অন্যত্র
• সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খাবেন। কিন্তু এত কমও নয় যে, শরীরে তার ঘাটতি হয়ে যায়। বয়স্ক ব্যক্তিরা সাধারণত সোডিয়ামের ঘাটতিতে ভোগেন
• লো ব্লাড প্রেশারে ঘরোয়া চিকিৎসাই যথেষ্ট

সমস্যা যেখানে

উচ্চ রক্তচাপের ক্ষেত্রে চিন্তা বাড়ে দু’টি পরিস্থিতিতে।

রেসিসটেন্ট হাইপার টেনশন: যখন দু’তিন রকম ওষুধ দেওয়ার পরেও রোগীর ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আনা যায় না, সেই অবস্থাকে বলা হয় রেসিসটেন্ট ব্লাড প্রেশার।

হোয়াইট কোট হাইপারটেনশন: অনেক সময়েই রোগীর অভিযোগ, সকালে বাড়িতে তাঁর প্রেশারের রিডিং ঠিকই ছিল। তবে ডাক্তারবাবুর চেম্বারে এসে রিডিং নিতেই সেটা যেন একটু বেড়ে গেল। এই ধরনের হাই ব্লাড প্রেশারের নাম রাখা হয়েছে ‘হোয়াইট কোট হাইপার টেনশন’। দুশ্চিন্তা থেকে অনেক সময়েই এই ধরনের পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়। তবে সে ক্ষেত্রে বিষয়টা সাময়িক কি না তা খতিয়ে দেখতে হবে। অর্থাৎ রোগীর শরীরে মেশিন লাগিয়ে ২৪ ঘণ্টার রিডিং নিয়ে দেখতে হবে যে, বাড়িতে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের মধ্যে থেকেও তাঁর প্রেশার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে আছে কি না।

থাইরয়েড, কোলেস্টেরল বা কিডনির সমস্যায় ব্লাড প্রেশার বাড়তে পারে। সে ক্ষেত্রে প্রেশার বাড়ার মূল কারণের অনুসন্ধান এবং চিকিৎসা প্রয়োজন।

ওষুধ বন্ধ নয়

ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কখনও ব্লাড প্রেশারের ওষুধ বন্ধ করা উচিত নয়। এমনকী প্রেশার নিয়ন্ত্রণসীমার মধ্যে থাকলেও। রোগীকে প্রেশারের ওষুধ দেওয়া হয় সেই ওষুধের কার্যক্ষমতার সময়সীমার ভিত্তিতে। কোনও ট্যাবলেটের কার্যক্ষমতা আট ঘণ্টা, কোনওটির বারো ঘণ্টা, কোনওটির আবার প্রায় ২৪ ঘণ্টা। রোগীর শরীরের চাহিদা অনুযায়ী একটি ট্যাবলেট অর্ধেক করে বা দিনে দুটি ট্যাবলেট অবধি খেতে হতে পারে। তবে সবটাই ঠিক করে দেবেন সংশ্লিষ্ট ডাক্তার।

ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া?

প্রতিটি ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া আছে। কিন্তু সেই ভয়ে ওষুধ খাওয়া বন্ধ করে দেবেন না। তবে চিকিৎসকদের মতে, ব্লাড প্রেশার নিয়ন্ত্রণে ওষুধের উপকারিতা তার সাইড এফেক্টের চেয়ে বেশি। রোগীর শরীরে ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ন্যূনতম করার জন্য অনেকেই এখন দু’তিন রকমের ওষুধ প্রেসক্রাইব করে থাকেন। সেই নিয়মই মানবেন।

কী খাবেন, কী খাবেন না

ব্লাড প্রেশার বাড়লেই আগেভাগে খাওয়ার পাতে নুন বন্ধ করে দেন অনেকেই। এটা কতটা যুক্তিযুক্ত?

চিকিৎসক সুবীর মণ্ডলের মতে, গাইডলাইন অনুযায়ী একজন প্রাপ্তবয়স্ক ব্যক্তির দিনে ২.৩ গ্রাম সোডিয়াম খাওয়া উচিত। কিন্তু আমাদের দেশের জলবায়ু বা খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে তাল রেখে মেপে মেপে ওই পরিমাণ সোডিয়াম গ্রহণ করা সম্ভব হয় না। তাই সে ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ, সোডিয়াম সমৃদ্ধ খাবার কম খেলেই হবে। কারণ বয়স্ক ব্যক্তিদের সিংহভাগ হাইপোনাট্রিমিয়া-র সমস্যায় আক্রান্ত হন। তাই নুনের পরিবর্তে গোলমরিচ, অন্য মশলা সহযোগে খাবার খেতে পারেন।

ব্লাড প্রেশার বাড়লেই কি পাঁঠার মাংস বন্ধ? চিকিৎসকের মতে, বিরিয়ানির মাংস খেলে কোনও ক্ষতি নেই। কারণ মাংস সুষম ডায়েট। তবে সাধারণ মানুষ ভাবেন, মাংস বাদ দিয়ে তার ঝোল বা ঝাল দিয়ে ভাত খেলেই তাঁরা বিপদ এড়িয়ে গিয়েছেন। যদিও উল্টোটাই সত্যি! যে কোনও ধরনের মাংস রান্নার পরে তার ফ্যাট মেশে ঝোলে বা বিরিয়ানির চালে। তাই শুধু মাংস খেলে ক্ষতি নেই। কিন্তু সে ক্ষেত্রে রোগীর কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকতে হবে।

ডায়েট থেকে ফ্যাটও একেবারে বাদ নয়। কারণ ভিটামিন এ, কে ও ডি-র আত্তীকরণের জন্য শরীরে ফ্যাট থাকা জরুরি। তবে সলিড ফ্যাট না খাওয়াই শ্রেয়।

ডায়েটে পটাসিয়াম সমৃদ্ধ ফলমূলের পরিমাণ বাড়াবেন। অ্যালকোহল, কফি ও ধূমপান হাই ব্লাড প্রেশারের জন্য ক্ষতিকর।

হাইপো টেনশনের জন্য সাধারণত চিকিৎসার প্রয়োজন হয় না। তবে সেপটিক শকে ব্লাড প্রেশার অস্বাভাবিক কমে গেলে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা প্রয়োজন। হাইপো টেনশনে ঘরোয়া নিয়ম মানলেই কাজ দেয়। ব্লাড প্রেশারের সঙ্গে খাবারের গভীর সম্পর্ক। তবে ব্যক্তিবিশেষে নিয়মের রদবদল হতে পারে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

High Blood Pressure Health
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE