Advertisement
E-Paper

মনের চাপ কমাতে চাই মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন

প্রয়োজনে স্ট্রেস ডায়েরি ব্যবহার করুন। বলছেন ডা. দেবাঞ্জন পান। যোগাযোগ ৯৮৩০৫৪৪৪৭০ ইদানীং কাজের চাপ বেড়েছে সায়ন্তনের। বয়স খুব বেশি না হলেও তার ধকল চট করে আর নিতে পারছে না সে। দিনের শেষে মাথা টিপটিপ, ক্লান্তি যেন রোজকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও না কারও সঙ্গে মতান্তর তো নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা।

শেষ আপডেট: ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ ০০:০০

ইদানীং কাজের চাপ বেড়েছে সায়ন্তনের। বয়স খুব বেশি না হলেও তার ধকল চট করে আর নিতে পারছে না সে। দিনের শেষে মাথা টিপটিপ, ক্লান্তি যেন রোজকার সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারও না কারও সঙ্গে মতান্তর তো নিত্য-নৈমিত্তিক ঘটনা। পরিণামে রাতের ঘুমের ব্যাঘাত আর কি! শুরুতেই গুরুত্ব না দেওয়ায় শেষে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হল তাঁকে।

প্র: বাড়িতেও ইদানীং অশান্তি হচ্ছে। কী করে এত সামলাই বলুন তো?

উ: আগে বলি, গাড়িতে শক অ্যাবজরভার লাগানো থাকে দেখেছেন? যতক্ষণ পর্যন্ত সেটা ঠিক আছে, চোট কিন্তু গাড়ি অবধি পৌঁছয় না। আমাদের সহ্য ক্ষমতাও সে রকম। তাকে যত জোরদার করে তুলতে পারবেন, তত সে চাপ সামলাতে পারবে।

প্র: সহ্য-শক্তি বাড়ানো যায় নাকি?

উ: নিশ্চয়ই। ভাল করে রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ করে মনের ভার যখন হালকা হবে তখন যুক্তি-বুদ্ধি দিয়ে ঘটনাগুলিকে কাটা-ছেঁড়া করুন। দেখবেন রাস্তা পেয়ে গেছেন। সে পথেই আপনাকে এগোতে হবে।

প্র: এত সোজা? মাথা তো কাজই করছে না।

উ: আসল কথা, রিল্যাক্সড হতে পারছেন না বলেই মাথা কাজ করছে না। রাতে একটু হালকা ব্যায়াম করে দেখুন তো, কী হয়।

প্র: একে তো রাতে ঘুম আসতে চায় না। তার উপর ব্যায়াম। এটা করলে বস ঠান্ডা হবে, নাকি ঘরের শান্তি ফিরবে?

উ: সবাই যে যার মতোই থাকবে। পরিবর্তন হবে আপনার। আপনার মাথা তো ঠান্ডা হবেই, যুক্তিও কাজ করবে। যুক্তি হারিয়ে বসে আছেন বলেই তো আপনার সমস্যা বাড়ছে।

প্র: মানে?

উ: দেখুন বাইরের জগৎ তার নিজের মতো চলবে। সেখানে বিরাট পরিবর্তন নিয়ে আসা আপনার পক্ষে সম্ভব নয়। বস খিটখিট করবে, বাড়িতে খিটিমিটি চলবে, ছেলে-মেয়ে মনের মত কাজ করবে না-এ সব ধ্রুব সত্য। তার জন্য যদি কথায় কথায় টেনশন করেন এবং ভেবেই নেন যে আপনার টেনশনের মূলে আছে অন্যরা, তা হলে কোনও দিনই চাপ মুক্ত হতে পারবেন না। চারিদিকে ভাল করে দেখুন, এ রকম পরিস্থিতি সবার জীবনেই আছে। কিন্তু সবাই কি আপনার মতো কষ্টে আছে? নেই তো। তা হলে দোষটা কার?

প্র: সবাই কি নির্বিকার হতে পারে?

উ: চেষ্টা করলে অনেকটাই পারে।

প্র: কী সেই চেষ্টা? রিল্যাক্সেশন এক্সারসাইজ?

উ: সেটা তো অবশ্যই একটা।

প্র: কী এক্সারসাইজ করতে হবে?

উ: সপ্তাহে অন্তত তিন দিন ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন, ৪০ থেকে ৪৫ মিনিট। সপ্তাহে পাঁচ থেকে ছয় দিন করতে পারলে আরও ভাল। এতে শরীরে তৈরি হবে মন ভাল করা হরমোন। মানসিক চাপ বাড়লে যে সমস্ত ক্ষতিকর হরমোন শরীর মন মেজাজ খারাপ করে দেয় তাদের হটিয়ে দেবে এরা। মন হবে ফুরফুরে।

প্র: কিন্তু সে আর কতক্ষণ? অফিসে গেলে তো আবার যে কে সেই।

উ: না, এর প্রভাব থাকে। তা ছাড়া ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করার সময় প্রচুর অক্সিজেন তথা পুষ্টি পায় ব্রেন। ফলে চাপ সামলানোর ক্ষমতা বাড়ে তার। এর পাশাপাশি যদি সকাল-বিকেল ১০ মিনিট করে ডিপ বেলি ব্রিদিং করতে পারেন, ভেগাস নার্ভ উদ্দীপিত হয়ে মনকে আরও শান্ত করবে। তবে মনে রাখবেন, শ্বাস-প্রশ্বাস এত গভীরভাবে নিতে হবে যাতে পেট ওঠা-নামা করে।

প্র: মেডিটেশনেও তো মন শান্ত হয় বলে শুনেছি। কিন্তু নানা চাপে মন এমনিতেই বিক্ষিপ্ত থাকে! তার মধ্যে কি আর মেডিটেশন করা যায়!

উ: খুব যায়। শান্ত হয়ে বসে মন একাগ্র করার চেষ্টা করুন। এই চেষ্টাতেই কাজ হবে। অশান্তির ভাবনাকে জোর করে সরানোর দরকার নেই। সে নিজের মনে আসবে, আবার চলেও যাবে। সকালে-বিকেলে ১০ মিনিট করে করতে পারলে এক সময় দেখবেন অভ্যাস হয়ে গেছে। আজকাল মাইন্ড ফুলনেস বলে এক ধরনের মেডিটেশনের চর্চা হচ্ছে। তাতে আরও ভাল কাজ হচ্ছে।

প্র: মাইন্ড ফুলনেস বলতে?

উ: দেখুন বহু কাজ আমরা অভ্যেস বশে করি। মনে অশান্তির ভাবনা চলতে থাকে। আর তার মধ্যেই আমরা খাই-দাই, কাজকর্ম করি। ফলে অশান্তির ক্ষতি চলতেই থাকে। মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন হল আপনি যখন যে কাজ করবেন, তাতে ডুবে যাওয়া। ধরুন খাচ্ছেন। কোন ধরনের পাত্রে কী খাবার দেওয়া হল, তার রং-চেহারা খুঁটিয়ে দেখুন। গন্ধ অনুভব করুন। প্রতিটি গ্রাস মুখে তুলুন দেখে বুঝে। খাবার মুখে যাওয়ার পর চিবোনো থেকে স্বাদ গ্রহণ করা গেলা, সবই করুন সচেতনভাবে। অর্থাৎ আপনার সব ইন্দ্রিয়ই যেন সজাগ থাকে। এতে কী হয়, যতক্ষণ খাচ্ছেন ততক্ষণ আপনার মন এত ব্যস্ত যে টেনশনের ভাবনা ঢুকতে পারছে না। সে বাবদ ক্ষতি হচ্ছে না। সারা দিন এভাবে কাটাতে পারলে, চাপ থাকলেও তার প্রভাব সেভাবে পড়তে পারে না।

প্র: তা কি হয়! মন তো ঘুরে-ফিরে সেই চাপের উপরই গিয়ে পড়বে!

উ: চাপ মাত্রা ছাড়ালে তাও হতে পারে। সে ক্ষেত্রে স্ট্রেস ডায়েরি বানিয়ে ঠান্ডা মাথায় বসুন। কোন ঘটনায় আপনার মনের উপর চাপ পড়ে তা লিখুন সেখানে। তার পাশে লিখুন কীভাবে সে ঘটনা ঘটলে চাপের বদলে আনন্দ পেতেন। এবার ভাবুন ওইভাবে ঘটনাকে ঘটাতে গেলে আপনাকে যা করতে হবে তা করা আপনার পক্ষে সম্ভব কিনা, সম্ভব হলে কীভাবে এবং এর জন্য যে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে, তা করতে আপনি প্রস্তুত কিনা...।

প্র: সব কিছু আমাকেই করতে হবে?

উ: অবশ্যই।

প্র:কিন্তু পরিস্থিতি যদি না থাকে?

উ: বিকল্প ভাবতে হবে। এবং দেখতে হবে তাতে চাপ বাড়বে না কমবে।

প্র: এতে কি আর মন ভাল হয়!

উ: দেখুন চাপ কমানোর দুটোই কিন্তু রাস্তা। এক, নানাভাবে রিল্যাক্সড থাকার চেষ্টা করা। দুই. ঘটনার প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো। প্রতিটি ঘটনাকে কাটাছেঁড়া করার অভ্যাস নিতে পারলে দেখবেন, কোনটাই আসলে চাপ নয়, একটা নতুন সুযোগ।

সাক্ষাৎকার: সুজাতা মুখোপাধ্যায়

স্ট্রেস কমানোর দাওয়াই

•অতিরিক্ত চাপ এড়াতে চাইলে কীভাবে ‘না’ বলতে হয় শিখুন।

•হার-জিতকে বেশি গুরুত্ব দেবেন না। আজ যেটাকে হার বলে মনে হচ্ছে, কাল হয়তো দেখা যাবে তার মধ্যেই জিতের বীজ লুকিয়ে ছিল।

•জীবনে রুটিন আনুন। ঘাম ঝরানো ব্যায়াম করুন। অভ্যেস করুন মাইন্ডফুলনেস মেডিটেশন।

•মন খুলে কথা বলতে পারেন, এমন কিছু মানুষ যেন থাকে।

•হাসির অনুষ্ঠান দেখুন নিয়মিত। হাসির বই পড়ুন।

•কাজের পাশাপাশি ভাল করে অবসর যাপন করুন। কোনও একটা হবির চর্চা করতে পারলে ভাল।

•স্ট্রেস বাড়লে স্ট্রেস ডায়েরি বানিয়ে সমাধানের রাস্তা খুঁজুন।

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy