রাহুল মিত্র রবীন্দ্র সৃষ্ট গানগুলির ভেতর থেকেই নানা বিষয়কে খুঁজে নিয়ে বিভিন্ন শিরোনামে পরিবেশন করেন তাঁর সম্পূর্ণ নিজস্ব ভাবনা। স্বল্পশ্রুত বহুশ্রুত গানগুলি যখন এক একটা মোড়কে তিনি নির্মাণ করেন তখন শ্রোতাদের মননের উপরেও এক অসাধারণ সৌধ নির্মাণ করা হয়ে যায়। সম্প্রতি কলামন্দিরে তাঁর কল্পনা ও বিন্যাসে এরকমই একটি অনুষ্ঠান হয় যার শিরোনাম ছিল ‘একলা জ্বলোরে’। বিষয়বস্তু ‘আগুন’। অনুষ্ঠানের মুখবন্ধে তিনি বলেছেন ‘তুমি এখন একা। ভীষণ একা.....’। মুখবন্ধের কবিতাটি পাঠ করেছেন সৌমিত্র চট্টোপাধ্যায় গভীর অনুভূতিতে। চুয়াল্লিশটি গানের চয়নে রাহল দশটি ভাগে পরিবেশন করেছেন। আঁধার, একা, বিদায়, জাগা, ডাক, অভয়, বাঁধন, মুক্তি, সাধন, সম আঁধারে চারটি। একায় ছটি, বিদায়ে পাঁচটি, জাগায় চারটি এবং ডাকেতে তিনটি গান নিয়ে ছিল প্রথম পর্ব। শুরুর গান ‘এখনো আঁধার রয়েছে’। আর সমাপ্তিতে ‘যদি তোর ডাক শুনে কেউ’। অতি পরিচিত একটি গানকে বিষয়বস্তুর সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে একটু বিলম্বিত লয়ে তার রূপ বা মর্মার্থকে অন্যভাবে ধরবার চেষ্টা করেছেন। টপ্পা তালবাদ্যের সঙ্গে গাইলে যে সুন্দর নিয়ন্ত্রণ থাকে সেটা তিনি এ দিন দেখালেন ‘তরী আমার’ গানটিতে। শুধু বেহালা (অম্লান হালদার) সহযোগে মুক্ত ছন্দে ‘দিন যায় রে’ ও টপ্পাঙ্গের ‘এ পরবাসে রবে কে’ বেহালা ও বাঁশির (সুশান্ত নন্দী) সহযোগিতায় গান দুটি গভীর বেদনার অভিঘাতে আপ্লুত করল।
শ্রোতারা জানে ‘আমায় বোলোনা গাহিতে’ গানটির প্রেক্ষিতের কথা। কিন্তু সেই চেনা প্রেক্ষিতকে তিনি মনে রেখেও গানটিকে যে এই চয়নে যুক্ত করেছেন তার জন্য কখনওই খাপছাড়া মনে হয় না। জাগা পর্যায়ে চারটি গানের মধ্যে তিনটিই ছিল পাখোয়াজ সহযোগে ও একটি খোল সহযোগে। সঙ্গতে গৌতম দত্ত রাহুলের গানের মেজাজের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে যেভাবে সহযোগিতা করেছেন তা মনে রাখার মতো। হয়তো সেই কারণেই হারমোনিয়ম (সৌরভ চট্টোপাধ্যায়) থাকলেও তাও খুব মৃদুভাবে বাজে।
দ্বিতীয় পর্বে ভাবনা যেন আমাদের আত্ম আবিষ্কার, আত্ম উপলব্ধির সাধনা। ‘একলা জ্বলো রে’ আগুনের জয়গান করে। কিন্তু আগুন এখানে দহনেই শেষ হয় না, আশ্রয়ও হয়ে ওঠে। শেষের সমাপন অংশে নির্বাচিত করেছিলেন ‘আগুনে হল আগুনময়’, ‘অগ্নি শিখা এসো এসো’, ‘ওরে আগুন আমার ভাই’, ‘আমার সকল নিয়ে’, ‘দিন ফুরালো হে সংসারী’। পরিশেষে‘আগুনের পরশমণি’-তে তিনি ছড়িয়ে দিলেন এমন এক অনুভূতি যা শ্রোতাদের অন্তরে অন্তরে অনুরণিত হতে থাকে এই গানেরই দুটি পঙক্তি ‘নয়নের দৃষ্টি হতে ঘুচবে কালো। যেখানে পড়বে সেথায় দেখবে আলো’। এই আলোকেই শিল্পী বলতে চেয়েছেন ‘মঙ্গলদীপ আপনি জ্বলো। একলা জ্বলো’।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy