E-Paper

আন্তরিক পরিবেশনায় সুন্দর এক সন্ধ্যা

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে পরিবেশিত হল ‘শেষের কবিতা’র একটি নির্বাচিত অংশ। পরিবেশন করলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও মধুমিতা বসু। সুন্দর উপস্থাপনা।

সৌম্যেন সরকার

শেষ আপডেট: ১৭ অগস্ট ২০২৪ ০৯:৩২

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে বাচিকশিল্পী মধুমিতা বসু তাঁর প্রতিষ্ঠান ‘আন্তরিক’-এর ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে একটি মনোজ্ঞ অনুষ্ঠান উপস্থাপন করলেন, যার নাম ‘সুন্দর হে’। ‘আন্তরিক’ তিরিশ বছরে পদার্পণ করল।

অনুষ্ঠানের শুরুতে মধুমিতা বসুর পরিচালনায় সম্মেলক কবিতার কোলাজ শোনালেন ছাত্রছাত্রীরা। ভাল লাগল ছোট ছেলেমেয়েদের এই অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে দেখে। যাঁদের কবিতা দিয়ে এই কোলাজ উপস্থাপিত হল, তাঁরা হলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জীবনানন্দ দাশ, বীরেন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, প্রতুল মুখোপাধ্যায় ও জয় গোস্বামী। অনুষ্ঠানের শুরু হল ‘আবার আসিব ফিরে’ দিয়ে। সমবেত কণ্ঠে পরিবেশিত হল ‘আমি বাংলার গান গাই’, ‘তোমার ছুটি নীল আকাশে’। আবহসঙ্গীত সহযোগে পরিবেশিত হল ‘একদিন ছুটি পেলে’ কবিতাটি। এর সঙ্গে ট্রেনের শব্দ কবিতাটিকে এক অন্য মাত্রায় নিয়ে গিয়েছিল। মধুমিতা বসুর প্রশিক্ষণে কচিকাঁচা শিক্ষার্থীরা পরিবেশন করল ‘তাল গাছ এক পায়ে দাঁড়িয়ে’। ছোটদের এই পরিবেশনা স্বতঃস্ফূর্ত, বেশ উপভোগ্য হয়েছিল এই উপস্থাপনা। দেখে ভাল লাগে, ছোট থেকেই তারা এই সুন্দর শিক্ষার মধ্য দিয়ে, সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠছে। কবিতা ‘পাহাড়িয়া মধুপুর মেঠো দুই পথ’ শ্রোতাদের মনকে আবিষ্ট করে। মধুমিতা বসুর কণ্ঠে ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে’ নৃত্যের সংযোজনায় এক সুন্দর মুহূর্ত তৈরি করে। শমিতা ভট্টাচার্য শোনালেন সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়ের সম্প্রীতি ও বন্ধুত্বের কবিতা ‘সাঁকো টিপ দুলছে’। এই পর্বের অনুষ্ঠানে আবহসঙ্গীতে আশিস ঘোষের কাজ সত্যিই প্রশংসনীয়।

অনুষ্ঠানের দ্বিতীয় ভাগে পরিবেশিত হল ‘শেষের কবিতা’র একটি নির্বাচিত অংশ। পরিবেশন করলেন অভিনেতা বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও মধুমিতা বসু। সুন্দর উপস্থাপনা। এর পরে এঁরা দু’জনে স্বপন গঙ্গোপাধ্যায় রচিত শ্রুতিনাটক ‘পাকা দেখা’ উপস্থাপন করলেন। এই নাটকে বিশ্বজিৎ চক্রবর্তীর সরস বাচনভঙ্গি দর্শক-শ্রোতাকে খুবই আনন্দ প্রদান করে। মধুমিতা বসু যথাযথ। আবহসঙ্গীতের ব্যবহারও চমৎকার। এর পরের পরিবেশনা ‘হোরিখেলা’। কবিতাটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর রচনা করেন ১৩০৬ বঙ্গাব্দে। রাজপুত ইতিহাসকে অবলম্বন করে এই সৃষ্টি। অনেকটা ব্যালাডের আঙ্গিকে। কাব্যনৃত্যায়নের এই উপস্থাপনা দর্শককে মুগ্ধ করেছে। কবিতা পাঠে অংশ নিয়েছিলেন স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত, অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায় ও মধুমিতা বসু। নৃত্যে কেশর খাঁর ভূমিকায় ছিলেন কৌশিক চক্রবর্তী, রানির ভূমিকায় গার্গী নিয়োগী, পত্রবাহক চন্দনা রায় প্রমুখ। নেপথ্য সঙ্গীতে ছিলেন শ্রীকান্ত আচার্য, শ্রেয়া গুহঠাকুরতা, শৌনক চট্টোপাধ্যায় ও অলক রায়চৌধুরী। পরিবেশনাটি দৃষ্টিনন্দন হয়ে উঠেছিল। ইন্দ্রনীল সেন, দেবাশিস কুমার, চৈতালি দাশগুপ্ত, অপরাজিতা আঢ্য, সোহিনী সেনগুপ্ত, অরুময় বন্দ্যোপাধ্যায়, অনসূয়া মজুমদার, বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী, কাজল শূর প্রমুখ বিশিষ্টজনকে এ দিন অনুষ্ঠানে সম্মানজ্ঞাপন করা হল।

এ দিনের সন্ধ্যা একটি ঘরোয়া অনুষ্ঠানের রূপ নিয়েছিল। তারই মধ্যে মধুমিতা বসুর অনুরোধে স্বাগতালক্ষ্মী দাশগুপ্ত খালি গলায় অসামান্য দক্ষতায় গাইলেন ‘আমার হিয়ার মাঝে লুকিয়ে ছিলে’। দর্শক-শ্রোতার অনুরোধে আর একটি গান পরিবেশন করলেন, ‘যে তোরে পাগল বলে তারে তুই বলিস নে কিছু’। দু’টি গানই অসাধারণ। এই অনুষ্ঠানের পরেও ‘গান আবহমান’ শীর্ষক একটি গানের আসর বসল। তাতে অংশগ্রহণ করলেন দেবমাল্য চট্টোপাধ্যায়, বিভবেন্দু সেনগুপ্ত, পায়েল কর ও দেবলীনা।

দীর্ঘায়িত অনুষ্ঠান। পরিচালিকা অনুষ্ঠানটি আর একটু সংক্ষিপ্ত করলে দর্শক-শ্রোতা পরিপূর্ণ ভাবে এই সুন্দর উপস্থাপনার অনুষ্ঠানটি হয়তো আরও উপভোগ করতে পারতেন।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Cultural Program Cultural Events Rabindra Sadan

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy