অবচেতন মনে যে ছবি বিমূর্ত অবস্থায় থাকে, শিল্পী তাকেই প্রকাশ করেন বস্তুজগতের অনুষঙ্গে, রঙে রেখায়, তুলির টানে। এ রকমই এক মনোরম প্রদর্শনী করলেন শিল্পী বাদল পাল, অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টসে। তুলির আলতো ছোঁয়ায় ভেজা জমিতে রং ভাসিয়ে এ সবই তিনি অতি অনায়াস গতিতে করেছেন। যাতে ছবিগুলিতে একটা কোমল আভা, ভিজে ভাব তৈরি হয়েছে। শিল্পী গভীর ভাবে প্রকৃতিপ্রেমিক। ফলে সমগ্র চিত্রপটে অনেকটা ওয়াশের কাজের মতো এক ধরনের কোমল ঔজ্জ্বল্য তৈরি হয়েছে। নিসর্গ প্রকৃতির বিভিন্ন ঋতু ও সময় তাঁর শিল্পী মানসের অনুরণন। এই চিত্রগুলিতে মেঘ ভাঙা বৃষ্টি, বর্ষাস্নাত প্রান্তর, ঝাপসা হওয়া দিগন্ত, মেঘের ফাঁক দিয়ে এসে পড়া আলো তাঁর প্রিয়।
বেশ কয়েকটি ছবিতে আকাশ জলে এসে মিশেছে। যা উপভোগ্য। শিল্পী এক বিশাল চরাচরকে রং ও আলোতে ধরেছেন তুলির ছোঁয়ায়। অ্যাক্রিলিক ও জলরঙের বিভিন্ন টোন ও স্নিগ্ধ স্বচ্ছতায় মনোমুগ্ধকর পরিবেশ তৈরি করেছেন। যদিও মস্তিষ্কচর্চার কোনও সুযোগই ছবিগুলিতে নেই। বেশির ভাগই আবেগের তাৎক্ষণিকতায় করা—চন্দ্রালোকে উচ্ছ্বল নদী, বর্ষাস্নাত বিস্তীর্ণ প্রান্তর, কুয়াশা ভেজা ভোর ইত্যাদি। ছবিতে সাদা জমি ছেড়ে দেওয়া, হাইলাইট, পরিমিতিবোধের পরিচায়ক। শিশিরভেজা সকাল ছবিটিতে শিল্পী যে বিশালত্বের অনুভব এনেছেন, তাতে শূন্য ও প্রকৃতি পরস্পরের পরিপূরক। নীচে হলদে রং শেষ হয়ে একটু সাদা সমস্ত ছবিটিতে অন্য ডাইমেনশন আনলেও দুটি নৌকা ও ক’জন মানুষ বড়ই বেমানান। ‘সূর্যের জলকেলি’, ‘ঝাপসা আলোয়’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাজ। অনেকগুলি ছবিতে আনুভূমিক তুলি সঞ্চালন যে বুনন তৈরি করেছে, তাতে দুটি রঙের মিশে যাওয়ায় কোথাও কোথাও আপনি রেখা এসে গিয়েছে। জলরঙের রীতিনীতি বজায় রেখেই একটি নিজস্ব শৈলী এনেছেন, যা কাগজ ও ক্যানভাসে সমান ভাবে প্রযোজ্য। এখানেই তাঁর নিজস্বতা প্রকাশ পেয়েছে।
শমিতা নাগ