Advertisement
E-Paper

মনের আবেগ নৃত্যনাট্যে

চণ্ডালিকা দেখে এসে লিখছেন বারীন মজুমদারসারস্বত’র দু’ দিনের নৃত্যসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রসদনে অনিতা মল্লিকের পরিচালনায়। সবাইকে সুযোগ দেবার কারণেই প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানগুলি বেশ দীর্ঘায়িত। এই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক, কিছু কিছু নৃত্যপদের দু’ দিনই মঞ্চায়ন কেন? শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত আলারিপু, কীর্ত্তনম, ভজন, তিলানা, টোড়িয়ম, রাঙামাটি, শীতের হাওয়ায়, বিশ্ববীণা প্রতিটি নৃত্যপদই পরিচ্ছন্ন।

শেষ আপডেট: ০৮ অক্টোবর ২০১৬ ০০:০০

সারস্বত’র দু’ দিনের নৃত্যসন্ধ্যা অনুষ্ঠিত হল রবীন্দ্রসদনে অনিতা মল্লিকের পরিচালনায়। সবাইকে সুযোগ দেবার কারণেই প্রথম পর্বের অনুষ্ঠানগুলি বেশ দীর্ঘায়িত। এই সঙ্গে আরেকটি প্রশ্ন মনে আসা স্বাভাবিক, কিছু কিছু নৃত্যপদের দু’ দিনই মঞ্চায়ন কেন? শিক্ষার্থীদের উপস্থাপিত আলারিপু, কীর্ত্তনম, ভজন, তিলানা, টোড়িয়ম, রাঙামাটি, শীতের হাওয়ায়, বিশ্ববীণা প্রতিটি নৃত্যপদই পরিচ্ছন্ন। এ ছাড়া প্রথম দিনের মূল আকর্ষণ ছিল বাংলার ছয় ঋতু অবলম্বনে নৃত্যালেখ্য ‘ঋতুশৃঙ্গার’ ও দ্বিতীয় দিনে নৃত্যনাট্য ‘চণ্ডালিকা’।

চণ্ডালিকায় চণ্ডালকন্যা প্রকৃতিকে যিনি প্রথম মানুষের সম্মান দিয়েছিলেন, প্রকৃতি তাকে ধরতে চেয়েছিল প্রতিদিনের সুখ, দুঃখ প্রবৃত্তির তাড়নায়। কিন্তু শেষে প্রকৃতি অনুভব করে যে সেই বৌদ্ধসন্ন্যাসী আনন্দের মুখে দিব্য আভা আর নেই। এও বুঝতে পারে যে তার প্রেম আদিম দেহ আকর্ষণ নয়, কেবল নবজন্ম। তার চরণে জীবন দর্শন। প্রিয়কে পাবার জন্য মায়ের মাধ্যমে যে অলৌকিক শক্তির আশ্রয় নিয়েছিল সে, সেই মিথ্যা ভেঙে নিরলঙ্কার চিরসত্যের প্রকাশ পেয়েছে নৃত্যনাট্যের শেষে। দলগত ঐক্য, অনুশীলনের নিষ্ঠা এবং নির্দেশনায় পরিমিত রসবোধ প্রযোজনাকে সমৃদ্ধ করলেও সামগ্রিক বিচারে মাঝারিয়ানার সীমা অতিক্রম করতে পারেনি। চণ্ডালকন্যা কবিতা চট্টোপাধ্যায় (ইনিই পরিচালক) নৃত্যে মন প্রাণ ঢেলে দিয়েছিলেন কিন্তু যেখানে প্রকৃতির মনে ঝড় উঠেছে, সে ঝড় যখন মনেই থেমেছে, তখন কবিতার অভিনয়ের তীব্রতা ততটা ব্যাপ্তি পায়নি – যতটা প্রয়োজন ছিল। কিন্তু তাঁর পছন্দ ও নৃত্যভঙ্গিমা খুব পরিষ্কার। বিপরীত দিকে অনিতা মল্লিকের ‘মা’ প্রথম দিকে কিছুটা অভিব্যক্তিহীন হলেও মন্ত্রের দৃশ্যে সেই অপূর্ণতা তিনি ঢেকে দিয়েছেন।

প্রথম দিকটায় ‘মা’কে বয়স্ক বোঝানোর জন্য তাঁর একটু কুঁজো হয়ে নাচাটাও খুব ভাল লাগেনি। দু’ দিনের এই সমগ্র প্রযোজনাতে গানের অংশকে সারস্বত ‘লাইভ’ রাখেননি। কিন্তু এ কথা অনস্বীকার্য, রবীন্দ্রনৃত্যনাট্যে সঙ্গীত ও নৃত্য একে অপরের পরিপূরক। মনের আবেগ প্রকাশ পায় কথা ও সুরে। চণ্ডালিকায় যে সব সঙ্গীত শিল্পীদের কণ্ঠ বেজেছে তাঁরা ভীষণ ভাবে সফল। তাঁদের নাম ঘোষণা উচিত ছিল। মায়ের গানে ছিলেন প্রমিতা মল্লিক।

রোম্যান্টিক প্রেমের অপমৃত্যু

খোঁজ নাটকটি দেখে এসে লিখছেন মনসিজ মজুমদার

স্বপ্নালু নাট্যদলের ‘খোঁজ’-কে (নাটক ও নির্দেশনা : প্রেমাংশু রায়) নাটক না বলে ‘সিনেমাটক’ বলাই সঙ্গত। নাটকে চলচ্চিত্রের প্রয়োগ এই প্রথম নয়, তবু কলকাতার দর্শকের কাছে অভিনব বটেই। মঞ্চের দৃশ্য এবং ঘটনাবলির অনুক্রম মঞ্চ ছেড়ে সিনেমার পর্দায় ভেসে ওঠে আবার কখনও পর্দা থেকে মঞ্চে নেমে আসে। মঞ্চে পার্ক ও রাস্তার দৃশ্য ও কুশীলব সাকুল্যে তিনজন। পর্দায় আছে দৃশ্য-বৈচিত্র ও অনেক চরিত্রের সমাবেশ।

এক জোড়া তরুণ-তরুণীর প্রেমের ব্যর্থ পরিণতির দৃশ্য নাটকের শুরুতেই। মৃত্যুশয্যায় বিধবা মা আর দুর্জয় বেকারত্ব নিয়ে তিতিবিরক্ত যুবকের সঙ্গে তরুণীর সম্পর্ক টেকে না। তরুণী গভীর অনিচ্ছায় বাড়ির নির্বাচিত সুপাত্রকে বিয়ে করার আগে যুবকের কাছ থেকে বিষণ্ণ বিদায় নেয়। যুবকের মায়েরও মৃত্যু হয়। ইতিমধ্যে মঞ্চে আবির্ভাব হয় প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা এক সর্বরিক্ত বৃদ্ধের। সে এসেছে কলকাতায় তার ছেলের খোঁজে যে ছেলেকে একদা দারিদ্র্যের প্রকোপে বেচে দিয়েছিল।

যুবকও বৃদ্ধের মতোই সর্বহারা। সেও চায় কোনও আপনজনের আশ্রয়। এই গভীর মানবিক বক্তব্য প্রযোজনাকে ঋদ্ধ করেছে। কিন্তু কাহিনির যে পরিসর থাকলে অভিঘাত আরও জোরালো হত তা নাটকে নেই। তবু এই নাটক আকর্ষণীয় হয়েছে মঞ্চাভিনয়ের কুশলতায়। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়ের নিঃসঙ্গতা-পীড়িত বৃদ্ধ, যার আকস্মিক উপস্থিতি প্রায় আরব্যরজনীর গল্পের মতো। কিন্তু চরিত্রটিকে বাস্তব করে তুলেছেন প্রসূন। পায়েল সেনগুপ্তের তরুণী প্রেমিকা প্রেমের রোম্যান্টিক অনুভবের সঙ্গে বাস্তববোধকে মিলিয়ে দিয়ে নায়িকা সৃষ্টি করেছেন। ভঙ্গ দিতে প্রেমিকাকে সাহায্য করেছে প্রেমাংশু রায়ের বেকার যুবক। বেকার না হলেও তার খর ব্যক্তিত্ব আর রূঢ় বাক্যবাণে কবিতা-প্রেমী তরুণীর রোম্যান্টিক প্রেমের অপমৃত্যু হতই।

পাঁচের পাঁচালী

ভাল-মন্দের পাঁচটি নাটক একই প্রযোজনায়। লিখছেন পিয়ালী দাস

মিনার্ভা নাট্য সংস্কৃতি চর্চা কেন্দ্রের প্রযোজনায় সম্প্রতি মঞ্চস্থ হল ‘পাঁচের পাঁচালী’। তবে এটি একক নাটক নয়। মোট পাঁচটি নাটকের যোগফল বলা যায়। এ দিন পাঁচ পরিচালকের নির্দেশনায় পর পর মঞ্চস্থ হল ভিন্ন স্বাদের স্বল্প দৈর্ঘ্যের পাঁচটি নাটক। ‘জাতিস্বর’ (পার্থ সিংহ), ‘ফাটিচার’ (পরি: মৃন্ময় নাগ, গল্প: সমরেশ বসু, নাট্যরূপ: সুপ্রিয় সুর), ‘চুহা বিল্লি আউর হাম’ (অর্পণ গড়াই), ‘পোকা মাকড়ের কুটুম’ (পরি: সৈকত ঘোষ, নাটক: মোহিত চট্টোপাধ্যায়) এবং ‘মহাবিদ্যা’ (পরি: পৃথ্বীশ রাণা, নাটক: মনোজ মিত্র)। প্রত্যেক পরিচালকই তাঁদের নিজস্বতার ছাপ রেখেছেন।

অভিনয় এবং বিষয়বস্তুর পাশাপাশি মঞ্চভাবনা, আলোক বিন্যাস, দৃশ্যরূপ, রূপসজ্জা কিংবা কস্টিউমও যে এই সময়ে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে, এ নাটক তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। নাটকে ইতিহাস-বর্তমান-সমসময়-কমিকস-সাহিত্য হাত ধরাধরি করে চলতে থাকে। সময়ের ব্যাধি কিংবা ক্ষতকে স্যাটায়ারধর্মী ও কৌতুকের আদলে চাকচিক্যের মোড়কে উপস্থাপন করা হয়। ‘পাঁচের পাঁচালী’র সামগ্রিক উপস্থাপনায় পৃথ্বীশ রাণা। ‘জাতিস্বর’ নাটকে ধরা দেয় কিছু ধিকৃত ঐতিহাসিক, পৌরাণিক (মিরজাফর, রাবণ, দুর্যোধন, ওয়াজেদ আলি প্রমুখ) চরিত্ররা। যারা নিজেদের অপমানিত হওয়ার খেদও উগড়ে দেয়— কেউ কাপড় কাচতে কাচতে, রুটি বেলতে কিংবা জাঁতি চালাতে চালাতে। এই চরিত্ররা কিন্তু সকলেই নারী। এ সময়ের মানুষ। এই নির্মাণ পদ্ধতি অভিনব। অর্পণের ‘চুহা বিল্লি আউর হাম’ নাটকটি অতি আধুনিক যৌনতার গন্ধে ভরপুর হলেও বেশ উপভোগ্য। হারমোনিয়াম, ঢোল, ড্রামস সহ লাইভ মিউজিকের ব্যবহার অন্য মাত্রা এনে দেয়। ‘ফাটিচার’ প্রতিবাদী, রাজনৈতিক নাটক। যার পরতে পরতে উঠে আসে মালিক শ্রেণির শোষণ, অযথা বিপ্লবের বুলি আওড়ানো এবং মজদুরের দুরবস্থা। এ নাটকে মঞ্চে রিকশার ব্যবহার মনে রাখার মতো। পৃথ্বীশ রাণা নির্দেশিত ‘মহাবিদ্যা’ নাটকটির নির্মাণে মৌলিকতার পরিচয় মেলে। সব নাটকের আলাদাভাবে উল্লেখ করা না গেলেও প্রতিটিই উপভোগ্য। অভিনয় ছাড়াও সঙ্গীতভাবনা এবং সামগ্রিক প্রযোজনায় প্রসেনজিৎ বর্ধন নজর কাড়েন।

দু’বছরে পা

সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হল ‘কলকাতা রঙ্গিলা’র দ্বিতীয় নাট্যোৎসব। তিন দিনের এই অনুষ্ঠানের প্রথম দিন অ্যাকাডেমিতে উৎসবের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করলেন রুদ্রপ্রসাদ সেনগুপ্ত। এ দিন ‘রঙ্গিলা শ্রী’ সম্মান প্রদান করা হয় নাট্যব্যক্তিত্ব শ্যামল চক্রবর্তীকে। পরে পরিবেশিত হয় দেবাশিস বিশ্বাসের নির্দেশনায় ও হাওড়া ব্রাত্যজনের প্রযোজনায় ‘ইঁদুর ও মানুষ’ নাটকটি। এছাড়াও অনুষ্ঠানের পরবর্তী দু’দিনে ‘রঙ্গিলা শ্রী’ সম্মান প্রদান করা হয় সমর মিত্র এবং নাট্য ব্যক্তিত্ব ব্রাত্য বসুকে। উৎসবের দ্বিতীয় দিনে মঞ্চস্থ হল সঙ্গিতা পাল এর নির্দেশনায় ‘রস’ নাটকটি। শেষ দিন কলকাতা রঙ্গিলার’র প্রযোজনায় এবং কৌশিক করের নির্দেশনায় মঞ্চস্থ হল ‘মা এক নির্ভীক সৈনিক’ নাটকটি।

পিয়ালী দাস

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy