তারাশঙ্করের গল্প এখানে হুবহু নয়, তবুও ‘আদিম’-এর চরিত্রগুলো মঞ্চের ঘেরাটোপে নতুন করে যখন উঠে আসে তখন মন্দ লাগে না। মেঠো বাজিকর, যাযাবর বেদেনি, গ্রামের কথাকার। মুখে রাঢ়বঙ্গের বুলি। আর জীবন যাত্রা? তাঁবু থেকে তাঁবুতে। ‘ক্ষণকালের ঘর-দুয়ার-আঙিনায়’। এক মেলা থেকে অন্য মেলায়। এই নাটকের পাত্র-পাত্রী যারা, আমাদের মতো ‘ভাষা-কথা’ নয় তাদের। তারা অন্ত্যজ। তবুও ঘটনা চক্রে বিভিন্ন সময়ে পরিস্ফুট হয় সোচ্চার প্রেম, যৌনতা, ঘৃণা, উচ্চাকাঙ্ক্ষা, বিশ্বাসঘাতকতা, অন্যকে দলনের প্রবৃত্তি। বেদেনি রাধিকার চরিত্রে দীপা ব্রহ্ম মানানসই। এই চরিত্রে অভিনয় করতে তাকে অনেক অনুশীলন চালিয়ে যেতে হয়েছে। নপুংসকের চরিত্রে সাবলীল অভিনয় করেছেন প্রিয়েন্দুশেখর দাস।
নাটকের শুরু থেকে শেষ অবধি ছিল চরিত্রগুলির বোঝাপড়া, একটা কৌতূহলও। প্রশ্ন জেগেছে, এর পরে কী ঘটবে? নাটক গুটিয়ে আসে শেষ দৃশ্যের অগ্নিকাণ্ডে। তবুও বলতে হয়, তারাশঙ্করের মূল কাহিনির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঞ্চে যে সার্কাসের তাঁবু বানানো হয়েছিল তা দেখে দর্শকদের বারবার ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে হারিয়ে যাওয়া শৈশবের সেই সময়কার অনুভূতি। নির্দেশক ও পরিচালক আশিস চট্টোপাধ্যায় এ জন্য বাড়তি অভিনন্দন পেয়েছেন দর্শকদের কাছে। সবচেয়ে বড় কথা, তারাশঙ্করের মূল গল্পে নপুংসকের চরিত্রটি ছিল না। এখানে তা জুড়ে দিয়ে নাটকের গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছেন আশিসবাবু। নাটকে পায়ুসঙ্গম বা নগ্ন নাচের যে সব সাহসী দৃশ্যের এক প্রেক্ষাপট গড়ে তোলা হয়েছে, তা বাংলা থিয়েটারের স্বাবলম্বী হওয়ার বোধহয় চূড়ান্ত অধ্যায়। প্রশংসা করতে হয়, শম্ভু উস্তাদের চরিত্রে অভীক বন্দ্যোপাধ্যায় ও কেষ্টপদ চরিত্রে শৌভিক সরকারকে। নাটকটির প্রযোজনায় গোবরডাঙা শিল্পায়ন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy