Advertisement
০২ মে ২০২৪

মিস্টার ট্র্যাজেডি কিং

বিশ্বকাপের একটা খেলাও মিস করবেন না। আজও রোজ সূর্যাস্ত দেখেন। মুগ্ধ হন গালিব আর গজলে। দিলীপকুমার। জীবনী প্রকাশের দু’দিন আগে তাঁকে ঘিরে ঘরোয়া আলাপে বিবি সায়রা বানু। সামনে ইন্দ্রনীল রায়সেদিন তিনি চূড়ান্ত ব্যস্ত। বরের আত্মজীবনী বেরিয়েছে গত সোমবার। তার দু’দিন আগে টরেন্টো থেকে আত্মীয়রা ফোন করে জানতে চাইছিলেন কী কী হবে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে। এর মধ্যেই ইউসুফ সাবকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি করে ওষুধ খাইয়ে যখন সায়রা বানু কথা বলতে বসলেন, তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা...

শেষ আপডেট: ১৪ জুন ২০১৪ ০০:০৭
Share: Save:

সেদিন তিনি চূড়ান্ত ব্যস্ত। বরের আত্মজীবনী বেরিয়েছে গত সোমবার। তার দু’দিন আগে টরেন্টো থেকে আত্মীয়রা ফোন করে জানতে চাইছিলেন কী কী হবে বই প্রকাশ অনুষ্ঠানে।

এর মধ্যেই ইউসুফ সাবকে ওষুধ খাওয়ানোর সময় হয়ে গেছে। তড়িঘড়ি করে ওষুধ খাইয়ে যখন সায়রা বানু কথা বলতে বসলেন, তখন ঘড়িতে রাত সাড়ে দশটা...

সায়রা বানু: স্যরি, আপনাকে একটু ওয়েট করতে হল। আসলে ইন্টারন্যাশনাল কল-এ ভাল শোনা যায় না। সব আত্মীয় আসছে। তাদের নানা প্রশ্ন, এয়ারপোর্টে গাড়ি পাঠানো, সব কিছু আমাকেই করতে হচ্ছে...

পত্রিকা: না, না, বুঝতেই পারছি আপনার ব্যস্ততা। তা’হলে শুরু করি ইন্টারভিউ?

সায়রা বানু: হ্যাঁ, হ্যাঁ, প্লিজ।

পত্রিকা: জানেন, বহু লোকে আপনাকে হিংসে করে। ভারতবর্ষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ অভিনেতাকে নন স্ট্রাইকার এন্ড থেকে চব্বিশ ঘণ্টা দেখতে পান বলে।

সায়রা বানু: (পড়োশন-এর বিন্দু যে ভাবে হাসতেন, এখনও হাসিটা তেমনই রয়েছে তাঁর) সেটা আমার কপাল জানেন। হ্যাঁ, মানুষটাকে কাছ থেকে দেখি, আজও নতুন নতুন জিনিস শিখি। খালি মনে হয় আরও আগে বিয়ে করিনি কেন।

পত্রিকা: আপনি জংলি-র হিরোইন ছিলেন। মেহমুদ আর সুনীল দত্ত আপনাকে নিয়ে যা ঝগড়া করল তা আজও সুপারহিট। এরকম বাব্লি একজন অত সিরিয়াস দিলীপকুমারের প্রেমে পড়লেন কী করে?

সায়রা বানু: আরে দিলীপসাবের প্রেমে পড়েছি সেই বারো বছর বয়স থেকে। লোকে বলেছিল ২০ দিন টিকবে না বিয়ে। তারপর ছিল বয়েসের বিশাল তফাত। আজকে প্রায় ৪০ বছর হয়ে তো গেল বলুন, মিসেস দিলীপকুমার হিসেবে। কী করে আমাদের প্রেম হল, এই প্রথম মানুষ জানতে পারবেন এই বইতে।

পত্রিকা: এতটাই যখন চেনেন মানুষটাকে তখন বায়োগ্রাফিটা নিজে লিখলেন না কেন?

সায়রা বানু: দেখুন, ‘শ্যাডোজ্ অ্যান্ড সাবস্টেন্স’ আমি লিখলাম না কারণ আমার মনে হয়, আমি লিখলে ব্যাপারটা শুধুই ভাল ভাল কথা হত, অ্যানালিটিকাল হয়তো আমি চাইলেও হতে পারতাম না।

তাই উদয় তারা নায়ার, যিনি বহু দিন দিলীপসাবকে চেনেন, তিনি লিখলেন। আর এই বায়োগ্রাফিতে অভিনেতা দিলীপকুমারের চেয়ে মানুষ দিলীপকুমারকে আপনি বেশি পাবেন। জানতে পারবেন, কী করে ধনী ফল ব্যবসায়ী পরিবারের একটি ছেলে সিনেমার কিছু না জেনেও কিংবদন্তি অভিনেতা হয়ে উঠলেন, লিজেন্ড হয়ে উঠলেন। এখানেই এই বইটা ফ্যাসিনেটিং।

পত্রিকা: দিলীপসাব কি নিজে খুব অতীতের কথা বলেন?

সায়রা বানু: দিলীপসাব আর অতীত? অতীতে উনি থাকতেই চান না। হার্ডলি কথা বলেন। কিন্তু বলতে শুরু করলে অনেক কিছু বলেন। এমন কিছু বলেন, যা শুনে আমি আজও অনুপ্রাণিত হই।

বুঝতে পারি ছোটবেলাটা কী অসম্ভব পিওর, প্রিসটাইন ছিল দিলীপ সাবের। সেটা পরে তাঁর পার্সোন্যালিটি, তাঁর কেরিয়ারকেও শেপ দিয়েছে। দিলীপসাবের কেরিয়ার ম্যানেজমেন্ট নিয়ে বইতে একটা চ্যাপ্টারও আছে।

পত্রিকা: আচ্ছা, একটা আবদার আছে আপনার কাছে। আবদারটা করা কারণ দিলীপসাব এতটাই প্রাইভেট একজন মানুষ বলে।

সায়রা বানু: বলুন কী আবদার...

চল্লিশটা বছর পেরিয়েও...

পত্রিকা: ঘুম ভেঙে ওঠা থেকে রাতে শুতে যাওয়া অবধি দিলীপসাব কী ভাবে একটা দিন কাটান, সেটা যদি শেয়ার করেন।

সায়রা বানু: (হেসে) অবশ্যই। ঘুম থেকে উঠে দুজনে মিলে চা আর টোস্ট খাই। তারপর যদি দিলীপসাব আর একটু ঘুমোতে চান, তা হলে গিয়ে শুয়ে পড়েন। তারপর উঠে দুজনে মিলে আমাদের বাগানে হাঁটি কিছুক্ষণ।

তারপর স্নানটান সেরে দিলীপসাব টিভি চালাতে বলেন। আগে সকালে উঠে পেপার পড়তেন। এখন আমি পড়ে পড়ে শোনাই ওঁকে।

পত্রিকা: টিভিতে কী দেখেন? নিজের পুরনো ছবি, না অন্য কিছু?

সায়রা বানু: দিলীপসাব শুধু একটাই জিনিস দেখেন টিভিতে। সেটা খেলা। গতকালই আমাকে বলছিলেন ওয়ার্ল্ড কাপের খেলাগুলো রাত জেগে দেখতে পারবেন না বলে আমি যেন রিপিট টেলিকাস্টের সময়টা জেনে রাখি। একটা খেলাও যে মিস করবেন না ওয়ার্ল্ড কাপের, সেটা এখনই আপনাকে আমি বলে দিতে পারি। এ ছাড়াও উইম্বলডনটা বড্ড পছন্দ করেন।

পত্রিকা: তারপর টিভি দেখা শেষ হলে?

সায়রা বানু: টিভি দেখা শেষ হলে বিকেল বেলা বহু দিনের অভ্যাসমতো আমি আর দিলীপসাব সানসেট দেখতে বেরোই।

পত্রিকা: কোথায় যান সানসেট দেখতে? বান্দ্রা ব্যান্ড স্ট্যান্ড?

সায়রা বানু: বান্দ্রা ব্যান্ড স্ট্যান্ডে যাই, কখনও জুহু বিচে যাই। দুজনে মিলে গাড়িতে বসে চুপচাপ হাত ধরে সানসেট দেখি।

পত্রিকা: কী বলছেন? মুম্বইয়ের পাপারাজ্জি ফটোগ্রাফারদের তো লজ্জা হওয়া উচিত। আপনি আর দিলীপসাব হাত ধরে গাড়িতে বসে সানসেট দেখছেন, আজ অবধি কেউ সেই ছবিটা তুলতে পারল না।

সায়রা বানু: হা হা হা হা, রোজ বেরনো হয় না। আমাদের বাড়ির ছাদ থেকেও সানসেট দেখা যায়। যেদিন বেরোই না, সেদিন ছাদে বসে থাকি আমরা। তারপর সন্ধে হয়ে গেলে শুরু হয় কবিতা আর গান।

পত্রিকা: আপনি কবিতা পড়ে শোনান?

সায়রা বানু: হ্যাঁ, আমি কবিতা পড়ে শোনাই। ভাল লাগলে উনি দু’বার পড়তে বলেন কোনও কোনও কবিতা। ক্লাসিকাল মিউজিক ভীষণ পছন্দ করেন। খুব ভালবাসেন গজল। সেগুলো অল্প ভল্যুমে চালানো হয়।

পত্রিকা: কবিতা কি প্রধানত মির্জা গালিবের?

সায়রা বানু: গালিব আছে, মির তাকি মির আছে, নাজির আকবেরাবাদি আছে।

পত্রিকা: আপনার কথা শুনে বোঝা যায় ভীষণ রিফাইন্ড, কালচারড্ একটা জীবন।

সায়রা বানু: হ্যাঁ, ঠিক বলেছেন। উর্দুতে একটা কথা আছে না, ‘থেরাভ’, সেই ‘থেরাভ’টা ভালবাসি আমরা দুজনে। মানে, ধীর স্থির জীবনযাপন আর কী! এবং এই থেরাভটার সঙ্গে আমরা দুজনেই ভীষণ ফ্যামিলি ওরিয়েন্টেড। দুজনের কাছেই ফ্যামিলি কামস্ ফার্স্ট। এটা আমাদের বন্ডিং-এ সাহায্য করেছে প্রচণ্ড।

পত্রিকা: আপনি তো কমার্শিয়াল হিন্দি ফিল্মের নায়িকা ছিলেন। উনি ছিলেন ট্র্যাজেডি কিং। এই দুটো দিক কোনও দিন কনট্র্যাডিক্ট করছে বলে মনে হয়নি?

সায়রা বানু: একেবারেই যে হয়নি তা নয়। অবশ্যই হয়েছে। ‘ট্র্যাজেডি কিং’ তো উনি বটেই। এত অল্প বয়সে উনি এত ইনটেন্স ছবি করেছেন যে ক্যারেকটারের কথা ভাবতে ভাবতে পার্সোনাল লাইফে ওঁর পার্সোনালিটি ডিজঅর্ডার হয়ে যায়। সেটা থেকে বেরোতে বহু সময় লেগেছিল। তবে আমার ছবি উনি দেখতেন রেগুলারলি। আজও টিভিতে দেখালে দেখেন।

পত্রিকা: মানে ‘পড়োশন’ আজ টিভিতে হলে দেখেন?

সায়রা বানু: অবশ্যই দেখেন। হাসেন। ‘পড়োশন’-এর ওই গানটা আছে না, (নিজেই গাইলেন) ‘শরম আতি হ্যায় মগর...’

পত্রিকা: হ্যা।ঁ

সায়রা বানু: ওই গানটা ওঁর খুব পছন্দের। কিন্তু সত্যি, ওঁর ‘ট্র্যাজেডি কিং’ মোড-এর সঙ্গে অ্যাডজাস্ট করতে আমারও অনেক সময় প্রবলেম হয়েছে।

পত্রিকা: উনি যখন এত সিরিয়াস একটা মুডে বাড়িতে বসে আছেন, আর আপনি ‘শাগির্দ’ কি ‘পড়োশন’-এর শু্যটিং করে ফিরলেন, সেই অ্যাডজাস্টমেন্টটা করতেন কী ভাবে?

সায়রা বানু: শুধু কথা বলে। অনেক অনেকক্ষণ কথা বলে। এবং

বেশির ভাগ কথাই কাজের নয়, কাজের বাইরের কথা। এই জিনিসগুলো আছে বইতে।

পত্রিকা: আচ্ছা। ওঁর একটা হিউজ ফ্যান বেস আছে কলকাতায়, তাদের কাছে আজও কিন্তু উনি দেবদাস।

সায়রা বানু: হা হা হা, হ্যাঁ জানি। ইনফ্যাক্ট বছরের শুরুতে যেদিন সুচিত্রা সেন মারা গেলেন, সে দিন নিজেই অনেক কথা বলছিলেন সুচিত্রার, ‘দেবদাস’-এর শ্যুটিং-এর।

দেবদাস অবশ্যই একটা বড় চ্যাপ্টার এই বইতে। দেবদাস অবশ্যই সাঙ্ঘাতিক প্রিয় একটা চরিত্র, এবং সেটা আজও।

পত্রিকা: অনার্ড সায়রাজি। খুব ভাল লাগল আপনার সঙ্গে কথা বলে।

সায়রা বানু: থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

indranil roy dilip kumar
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE