Advertisement
E-Paper

মহাভারতের গণ্ডি পেরিয়ে

দ্রৌপদী যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়িকা। লিখছেন মনসিজ মজুমদারবাংলা থিয়েটার কলকাতার নাটক ‘বৃত্তান্তে’র (রচনা: দেবাশিস সেনগুপ্ত, পরিচালনায়: অভিজিৎ দাশগুপ্ত) একক চরিত্র দ্রৌপদী। নামেই দ্ব্যর্থ ব্যঞ্জনা, নাটক দ্রৌপদীর স্ব-কথিত বৃত্তান্ত। বৃত্তান্ত শেষে বা অন্তে যে বৃত্ত সম্পন্ন হয় তা তাঁর জীবনের শূন্যতার প্রতীক। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে নাটকের শুরু। অশত্থামা দ্রৌপদীর গর্ভজাত পাঁচ পাণ্ডবশিশুকে ছিন্নমস্তক করার পর। মৃত পুত্রদের সামনে পাণ্ডব-ভার্যা শোকস্তব্ধ না হয়ে, তাঁর জীবনের পুঞ্জীভুত ক্ষোভ বিবৃত করেন।

শেষ আপডেট: ১৫ অগস্ট ২০১৪ ০০:২৫

বাংলা থিয়েটার কলকাতার নাটক ‘বৃত্তান্তে’র (রচনা: দেবাশিস সেনগুপ্ত, পরিচালনায়: অভিজিৎ দাশগুপ্ত) একক চরিত্র দ্রৌপদী। নামেই দ্ব্যর্থ ব্যঞ্জনা, নাটক দ্রৌপদীর স্ব-কথিত বৃত্তান্ত। বৃত্তান্ত শেষে বা অন্তে যে বৃত্ত সম্পন্ন হয় তা তাঁর জীবনের শূন্যতার প্রতীক। কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ শেষে নাটকের শুরু। অশত্থামা দ্রৌপদীর গর্ভজাত পাঁচ পাণ্ডবশিশুকে ছিন্নমস্তক করার পর। মৃত পুত্রদের সামনে পাণ্ডব-ভার্যা শোকস্তব্ধ না হয়ে, তাঁর জীবনের পুঞ্জীভুত ক্ষোভ বিবৃত করেন। তাঁর সংলাপের লক্ষ্য কখনও মৃত সন্তানদের কেউ, কখনও সুভদ্রা, কখনও কৃষ্ণ, কিন্তু তাঁর বৃত্তান্তের শ্রোতা আজকের মানুষ। তিনি পাণ্ডবগৌরবের বিনির্মাণ করেন, তাঁর লাঞ্ছনা ও বঞ্চনার জন্যে দায়ী করেন পাণ্ডুপুত্রদের। দ্রৌপদীর সন্তান বিয়োগ পিতাদের শোকগ্রস্ত করেনি, যদিও যুদ্ধে নিহত সুভদ্রাপুত্রের জন্যে শোকাকুল হয়েছিলেন তাঁরা। দ্রৌপদীর ভূমিকা ছিল পাণ্ডবদের ঐক্যবদ্ধ রাখা, যাতে ক্ষমতা লোভে ভ্রাতৃবিরোধ না ঘটে। এমনটাই ছিল কুন্তীর অভিপ্রেত। তাই অর্জিত রমণীরত্নকে সন্তানদের ভাগ করে নিতে বলেছিলেন। প্রত্যেকেই একাধিক দারগ্রহণ করেন এবং বিভাজ্য পত্নী বলে দ্রৌপদীকে যথার্থ পত্নীমর্যাদা দেননি। গ্লানি দূর হয়েছিল সন্তানলাভে। আশা ছিল অভিমন্যুর মৃত্যুর পর দ্রৌপদী হবেন রাজজননী। কিন্তু অশত্থামার শিশুহননে সেই আশাও পূর্ণ হল না।

দ্রৌপদীর ভূমিকায় একক অভিনয়ে দেবযানী চট্টোপাধ্যায়ের ঋজু মঞ্চ-উপস্থিতি, দৃঢ় নাটকীয় ব্যঞ্জনার উচ্চারণ, অনতি-উচ্চ স্বরক্ষেপ প্রযোজনাকে এক ট্র্যাজিক আবহে সমৃদ্ধ করেছে। তির-ধনুক, তূণীর আর বর্শা দিয়ে সাজানো তোরণপথে অনুজ্জ্বল লাল পোশাকে প্রচ্ছন্ন আলোয় দ্রৌপদী যেন গ্রিক ট্র্যাজেডির নায়িকা। যখন মহাভারতের তোরণ পেরিয়ে মঞ্চে নেমে আসেন তখন তিনি সমকালের কোনও নারী। কারণ যে মূল্যবোধে তাঁর অভিযোগ প্রাণিত তা আধুনিক। কিন্তু বৃত্তান্তে যে শূন্যতা তাঁকে গ্রাস করে তা সর্বকালের।

সারাক্ষণ মঞ্চের প্রায়ান্ধকার অংশে থাকে কোরাসের প্যান্টোমাইম। অগ্নিসম্ভূতা দ্রৌপদীর এক প্রতীকী অগ্নিযন্ত্রণার দৃশ্য সমেত এক ঘটনাময় প্রেক্ষাপট রচনা করে। কিন্তু প্রত্যক্ষ নাটকীয় অভিঘাতে মূক কুশীলবদের ভূমিকা নগণ্য।

manasij majumder manasij
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy