Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪
সঙ্গীত সমালোচনা...

শতবর্ষ পেরিয়েও আলিবাবা

যখন চারিদিকে পালিত হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষ তখন অ্যাকাডেমি থিয়েটার উন্মোচন করল চলচ্চিত্রের পূর্বজ বিস্মৃত যাত্রাপথ। যার সূত্রপাত এই বাংলায়। সূত্রধর হীরালাল সেন।

হারানো ইতিহাস মঞ্চগানের সুরে। লিখছেন বারীন মজুমদার।
শেষ আপডেট: ১৫ মার্চ ২০১৪ ০০:৩০
Share: Save:

যখন চারিদিকে পালিত হচ্ছে ভারতীয় চলচ্চিত্রের শতবর্ষ তখন অ্যাকাডেমি থিয়েটার উন্মোচন করল চলচ্চিত্রের পূর্বজ বিস্মৃত যাত্রাপথ। যার সূত্রপাত এই বাংলায়। সূত্রধর হীরালাল সেন। খণ্ড-দৃশ্যের চিত্রায়নের শুরু হলেও হীরালালের ক্যামেরায় বন্ধু অমরেন্দ্রনাথ দত্তের নির্দেশে আলিবাবার সার্বিক মঞ্চরূপ পর্দায় প্রকাশ পেল ১৯০৪-এ। নির্বাক অভিধায়। সঙ্গে বাজত ‘ক্লাসিক রেকর্ডে’ মঞ্চগানের সুর। অ্যাকাডেমি থিয়েটার সেই ইতিহাসের আধারেই অ্যাকাডেমিতে নিবেদন করল ‘সিনেমার মঞ্চগান’। রচনা ও নির্মাণে দেবজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়।

পর্দা সরে শতবর্ষব্যাপী কালজয়ী সিনেমার গানের কনসার্টে। বিলু দত্তের মঞ্চ আর বাবলু রায়ের আলো-আঁধারিতে গীত হল দেবজিত্ ও ঋদ্ধি বন্দ্যোপাধ্যায়ের যুগল কণ্ঠ ‘আলিবাবা’র গান ‘আয় বাঁদি তুই বেগম হবি’। পরের গান ‘চণ্ডীদাস’ সিনেমার ‘ফিরে চলো আপন ঘরে’ গেয়ে একাই মাতিয়ে দিলেন দেবজিৎ। পঙ্কজ মল্লিকের স্মৃতিচারণায় জানা যায় এ গানের জন্ম সিনেমাটির বহু আগে সৌরীন্দ্রমোহন মুখোপাধ্যায়ের ‘স্বয়ম্বরা’ নাটকে। মঞ্চের ‘চন্দ্রগুপ্ত’ হল সিনেমার ‘চাণক্য’ শিশির ভাদুড়ির নির্মাণে। সে সিনেমার গান ‘আয়রে বসন্ত’ মূর্ত হয়ে উঠল ঋদ্ধির গায়কিতে। এর পর ‘তুফান মেল’, চিড়িয়াখানার ‘ভালোবাসার তুমি কী জানো’, ছুটির ‘আমার জীবন নদীর ওপারে’ মাত করল। পাশাপাশি দেবজিতের কণ্ঠে জীবন্ত হয়ে উঠল বালিকা বধূতে গীত সাজাহানের মঞ্চগান ‘আজি এসেছি আজি এসেছি’, অ্যান্টনি কবিয়ালের ‘জয়া যোগেন্দ্রজায়া মহামায়া’ এবং জননী নাট্যসূত্রে শচীনদেব বর্মনের গান ‘ভোগ করে নাও’ বিস্মিত করে দেবকণ্ঠ বাগচির ‘প্রেমের প্রেমারা’র দেবজিৎ গীত মঞ্চগান ‘এসো বঁধু এসো বঁধু’ আশ্রয় নিল ঋদ্ধি গীত ‘পলাতক’ ছবির গান ‘চিনিতে পারিনি বঁধুতে’। শেষ গানে চমক, তপন সিংহের বাল্যস্মৃতিতে প্রতিমা শিল্পী গোপালের মঞ্চগান কেমন করে হল ‘হারমোনিয়াম’ ছবির গান ‘মন বলে আমি মনের কথা জানি না’। দেবজিতের সঙ্গে এ গানে মাতালেন ঋদ্ধি। গানের ফাঁকে ফাঁকে উঠে এসেছে মঞ্চ আর সিনেমা ইতিহাসের বহু বিস্মৃত ছিন্নপত্র।

যা ধারাভাষ্যে ধরিয়ে আর ভরিয়ে দিয়েছেন বিশ্বজিৎ চক্রবর্তী ও শ্রীলা মজুমদার। অনুষ্ঠানে সহ-শিল্পীরা ছিলেন দেবাশিস সাহা, সনৎ অধিকারী, সৌম্যজ্যোতি ঘোষ, বিক্রম চক্রবর্তী, মানস চক্রবর্তী ও ঋদ্ধদেব বন্দ্যোপাধ্যায়।

কাহারবা নয়, দাদরা বাজাও
শতরূপা চক্রবর্তী

মান্না দে এবং তালবাদ্যের রাধাকান্ত নন্দীর স্মরণে অনুষ্ঠিত হল ‘কাহারবা নয়, দাদরা বাজাও’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শুরুতেই স্মারক সম্মানে ভূষিত হলেন প্রবীণ শিল্পী জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়। এ দিন গানে ছিলেন সুজাতা ঘোষ, সরোদে মণিত পাল এবং আবৃত্তিতে পৃথা দাশগুপ্ত। ‘আমি নিরালায় বসে’ গেয়ে শ্রোতাদের প্রশংসা পেলেন সুজাতা। পৃথা ছোটদের দু’টি কবিতা আবৃত্তি করে শোনাল। তার মধ্যে সুকুমার রায়ের ‘বুঝিয়ে বলা’ বেশ ভাল। শৈবাল মিত্র শোনালেন ‘চার দেওয়ালের মধ্যে’। পরিমল ভট্টাচার্যের গান সেদিন শ্রোতাদের বাড়তি পাওনা। জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষের সুরে ‘আমি সুরে সুরে’ গাইলেন জয়া ভাদুড়ি। নীতা বন্দ্যোপাধ্যায় গেয়েছেন ‘আমার না যদি’। পরে নৃত্য পরিবেশন করে ‘সাংস্কৃতিক ফোরাম’। মণীত সরোদে বাজিয়ে শোনান মিশ্র দেশ রাগের আধারে ‘শ্রাবণ মেঘের ছায়া’। সঙ্গতে আগাগোড়া নির্ভরতা দিয়ে গেছেন তবলাবাদক কালিদাস নন্দী। আয়োজক রাধাকান্ত নন্দী ইনস্টিটিউট।

ছিলে তুমি
বা ম

মান্না দে-র স্মরণে অনুষ্ঠান হল বেহালায়। অনুষ্ঠানের শুরুতেই অভিজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ছিল এই প্রজন্মের চার তরুণ শিল্পীকে নিয়ে একটি সঙ্গীতানুষ্ঠান ‘ছিলে তুমি ছিলাম আমি’। সঞ্চালক দেবাশীষ বসু। কিঞ্জল, সুদীপ্ত, চিরন্তন ও প্রিয়ংবদা সতেজ ও সপ্রতিভ ভঙ্গিতে শোনালেন মান্নার গানগুলি। দ্বিতীয় দিনেও ছিল ‘গানে স্মৃতিমন্থন’ শীর্ষক অনুষ্ঠান। শিল্পীরা ছিলেন হৈমন্তী শুক্ল, শ্রীকান্ত আচার্য, অগ্নিভ বন্দ্যোপাধ্যায়, শম্পা কুণ্ডু ও গৌতম ঘোষাল। যন্ত্রানুষঙ্গ পরিচালনায় ছিলেন শান্তনু বসু। আয়োজক ‘বেহালা ফ্রেন্ডস’।

প্রাণের চলা
শিখা বসু

শিশির মঞ্চে অনুষ্ঠিত ‘প্রাণের চলা’ অনুষ্ঠানের শুরুতেই ছিল কল্যাণী সিংহের ‘রাত্রি এসে যেথায় মেশে।’ চর্চিত কণ্ঠ। এর পর কাকলী ঘোষ শোনালেন ‘বাসন্তী হে।’ তাঁর নিষ্ঠা ও চেষ্টাকে স্বাগত জানাতেই হয়। এ দিনের শেষ শিল্পী ছিলেন শান্তিনিকেতনের এষা মিত্র। তিনি পর পর বেশ কয়েকটি গান শোনালেন। গায়কি, মিড় ও গমকে যেন মনে করিয়ে দেয় কণিকা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। শ্রোতাদের অভিনন্দন নিশ্চয়ই শিল্পীকে আরও পথ এগিয়ে দেবে।

মনে রাখার মতো

সম্প্রতি রবীন্দ্রসদনে ‘রূপমঞ্জরী’র অনুষ্ঠানে শুরুতেই ইন্দ্রাণী সেনের তিনটি নজরুলগীতি শ্রোতাদের বাড়তি পাওনা। তিথি দেববর্মনের ‘আজ যেমন করে গাইছে আকাশ’ শুনে বোঝা যায় শিল্পীর বেশ পরিণত গলা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া গানগুলির মধ্যে বাসবী বাগচির কণ্ঠে ‘পুরানো জানিয়া চেওনা’, শিশুশিল্পী রনিতার ‘এমন একটি ঝিনুক’, সুছন্দা ঘোষের ‘সব দিবি কে’ অনুষ্ঠানে অন্য মাত্রা এনে দেয়। অমিতাদিত্য সান্যালের ‘প্রতিদিন আমি যা দেখি’ বা সুবোধ সরকারের লেখা প্রসূন গুহের আবৃত্তি ‘ঘুষ’ মনে রাখার মতো। শেষে ছিল তানিয়া দাসের পরিচালনায় নৃত্যনাট্য ‘কচ ও দেবযানী’। গানে ছিলেন সৈকত মিত্র ও আইরিন সরকার, নৃত্যে সুবিকাশ মুখোপাধ্যায় ও মৌমিতা চট্টোপাধ্যায়। কচের ভূমিকায় রাজর্ষি রায়, দেবযানীর ভাষ্যে মধুমিতা বসু মানানসই।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE