Advertisement
E-Paper

সোনালির দ্বিতীয় ইনিংস

পঁয়ত্রিশ বছর পর সিনেমায় ফিরছেন সোনালি গুপ্ত বসু। ব্যোমকেশ বক্সীর স্ত্রী সত্যবতীর চরিত্রে। কী করছিলেন তিনি এত দিন? জানতে চাইলেন নিবেদিতা দে পঁয়ত্রিশ বছর পর সিনেমায় ফিরছেন সোনালি গুপ্ত বসু। ব্যোমকেশ বক্সীর স্ত্রী সত্যবতীর চরিত্রে। কী করছিলেন তিনি এত দিন? জানতে চাইলেন নিবেদিতা দে

শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৪ ০০:১৫
‘শজারুর কাঁটা’র দৃশ্যে সোনালি ও ধৃতিমান

‘শজারুর কাঁটা’র দৃশ্যে সোনালি ও ধৃতিমান

পত্রিকা: কী করছিলেন এত দিন?

সোনালি: (মিষ্টি হেসে) সংসার করছিলাম। ছেলে-মেয়ে মানুষ করা, একটা স্কুলে পড়ানো...

পত্রিকা: তা হলে হঠাৎ ধ্যানভঙ্গ?

সোনালি: (হেসে) ভেতরে ভেতরে মনের প্রস্তুতি নিশ্চয়ই চলছিল... ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে...ঝাড়া হাত-পা...আমার স্বামী তাঁর সলিসিটর ফার্ম নিয়ে ব্যস্ত, আমিও নানা সামাজিক কাজে রয়েছি, ... ছবির অফারটা এমন সময়ে এল যে মন বোধহয় ততক্ষণে প্রস্তুতি নিয়েই নিয়েছে।

পত্রিকা: ‘শজারুর কাঁটা’য় ব্যোমকেশ বক্সীর স্ত্রী সত্যবতী। আপনার প্রথম ছবি ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’তেও আপনার চরিত্রের নাম ছিল সত্যবতী।

সোনালি: ঠিক ধরেছেন তো! তবে ‘শজারুর কাঁটা’য় একটা ইম্পর্ট্যান্ট ব্যাপার আছে কিন্তু।

পত্রিকা: কী?

সোনালি: ধৃতিমান হচ্ছেন ব্যোমকেশ।

পত্রিকা: মানে? অন্য কেউ ব্যোমকেশ চরিত্রে অভিনয় করলে আপনি করতেন না?

সোনালি: তা বলিনি, বলছি ধৃতিমান আমার খুব প্রিয়।

সোনালির বাবা-মা দীনেন ও কাজল গুপ্তর বিয়েতে সাক্ষী সত্যজিৎ রায়।

পত্রিকা: তার মানে তো তাই দাঁড়াল। ধৃতিমানের জায়গায় অন্য কেউ থাকলে আপনি দু’বার ভাবতেন। আর হ্যাঁ, আপনার সম্পর্কে একটা বদনাম আছে কিন্তু—

সোনালি: কী?

পত্রিকা: আপনি খুব ক্লাস কনশাস।

সোনালি: এ মা, যাহ্!

পত্রিকা: একটা কিন্ডার গার্টেন স্কুলে তেত্রিশ বছর ধরে বাচ্চাদের পড়ালেও আপনি নিজেই নিজেকে গৃহবধূ বলেন, তাই তো! ... টিভি সিরিয়াল দেখেন?

সোনালি: স্কুলটা কিন্তু পঞ্চাশ বছরের পুরনো, কলকাতার সবচেয়ে বনেদি স্কুল। আর কী বলছিলেন, সিরিয়াল? খুব কম দেখি। এখন একটাই দেখছি, ‘যোধা আকবর’। আকবরকে আমার দারুণ লাগছে।

পত্রিকা: বাংলা সিরিয়াল?

সোনালি: না। শুধু সৌরভের ‘দাদাগিরি’টা দেখতাম।

পত্রিকা: বদনামটা সত্যি তা হলে?

সোনালি: (হেসে) কপাল আমার! টিভি সিরিয়াল দেখি না ঠিকই, তবে নিয়ম করে সাঁতার কাটতে যাই ক্লাবে, শরীরের যত্ন নিই...এ সব কি গৃহবধূ হওয়া নয়?

সোনালির বিয়েতে সত্যজিৎ-সন্দীপ-বিজয়া রায়, তপন সিংহ ও অরুন্ধতীদেবী এক পঙ্ক্তিতে।

পত্রিকা: আচ্ছা যাঁর বাবার নাম দীনেন গুপ্ত, সুচিত্রা সেনকে নিয়ে যিনি ‘দেবী চৌধুরাণী’ করেছেন। ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘প্রক্সি’, ‘মর্জিনা আবদুল্লা’ একের পর এক হিট ছবি। যাঁর মায়ের নাম কাজল গুপ্ত...যাঁর নিজের অভিনয়ের শুরুই হয়েছে দীনেন গুপ্ত, তপন সিংহের মতো পরিচালকের হাত ধরে। এত সুন্দরী...তিনি এত বছর কোনও অফার পাননি তা তো হতে পারে না!

সোনালি: মিথ্যে বলব কেন, অফার প্রচুর ছিল। প্র-চু-র। কুড়ি বছর বয়সে যখন আমি বিয়ে করছি... ঠিকই বলেছেন... আমি একেবারে ফিল্ম পরিবারের মেয়ে তো...আমার কাছে গ্ল্যামার ব্যাপারটা খুব সহজ ছিল, এত সহজ ছিল যে হাসতে হাসতে অফার ফিরিয়ে দিতে পারতাম।

আমার প্রথম শ্যুটিং-এ যাওয়া কী ভাবে জানেন? তখন হাসনাবাদে ‘গঙ্গা’র শ্যুটিঙে রাজেন তরফদারের ক্যামেরা করছেন বাবা। গঙ্গার মধ্যে দাঁড়িয়ে হঠাৎই পিছন ফিরে দেখেন, মা আমাকে কোলে নিয়ে বাবাকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য শ্যুটিঙে চলে এসেছেন। তখন আমার বয়স মাত্র দু’মাস। ওটাই প্রথম শ্যুটিঙে যাওয়া...

পত্রিকা: তার পর তো ব্যাপারটা নিত্যদিনের হয়ে গেল?

সোনালি: ...বাবা মাত্র সতেরো বছর বয়সে ফিল্মের জগতে আসেন বাবার মেসোমশাই ডি জি-র (ধীরেন গঙ্গোপাধ্যায়ের) হাত ধরে। সাধারণ কর্মী ছিলেন। আস্তে আস্তে ‘পথের পাঁচালী’, ‘অপরাজিত’, ‘জলসাঘর’-এ মানিককাকুকে অ্যাসিস্ট করেছেন। ঋত্বিক ঘটকের ‘অযান্ত্রিক’-এর ক্যামেরাম্যান বাবা, আবার তপন সিংহ-র ‘হাটে বাজারে’র ক্যামেরাও বাবার করা। ‘চৌরঙ্গী’, ‘শঙ্খবেলা’ বাবার ক্যামেরা। ও দিকে আবার বাবার প্রথম ছবি ‘নতুন পাতা’র স্ক্রিপ্ট লিখে দিয়েছিলেন অজিতেশ বন্দ্যোপাধ্যায়। ছবিটায় অভিনয় করেছিলেন শম্ভু মিত্র। ‘মেঘে ঢাকা তারা’র ক্যামেরার জন্য বাবা রাষ্ট্রপতি পুরস্কার পান।

পত্রিকা: ভাবা যায়!

সোনালি: বলছি না আমার ছোটবেলাটায় আমি হিরে-মণি-মুক্তোদের কোলে কোলে মানুষ হয়েছি। তাই গ্ল্যামার জগৎটাকে আলাদা ভাবে আকর্ষণীয় মনে হয়নি কখনও। ‘সিনেমা ছেড়ে দিচ্ছি’—এই বোধটা কখনও বড় মনে হয়নি। মনে হয়েছে, এই তো আমার সঙ্গে সবাই রয়েছেন। মানিককাকু, তপনজেঠু, রাজেনকাকু, সুচিত্রামাসি (সেন), অপর্ণামাসি, সৌমিত্রকাকু, উত্তমকাকুু...। আমি আর নতুন করে কী নায়িকা হব...! আর মানিককাকু তো আমার মা-বাবার বিয়ের উইটনেসও ছিলেন, আবার আমার বিয়েতেও এসেছিলেন। কী বলব বলুন, এই রকমই ছিল সম্পর্ক!

তা ছাড়া ক্যামেরার পিছনে বাবার জন্য কত কাজ করেছি। অবশ্য আজ পিছন ফিরে দেখলে কষ্ট হয়। সত্যি, বাবার কাজের সঠিক মূল্যায়ন হল না। সে সব কথা বলতে গেলে একটা সম্পূর্ণ বই হয়ে যাবে।

আর হ্যাঁ, বিয়ে করে সিনেমা ছেড়ে দেওয়ায় সবচেয়ে খুশি কে হয়েছিলেন জানেন? সুচিত্রামাসি (সেন)। বলেছিলেন, “এত অল্প বয়সে ও এত সুন্দর সিদ্ধান্ত নিয়েছে, খুব খুশি হয়েছি আমি।” সুচিত্রামাসির কথাটাও আমাকে দারুণ অনুপ্রাণিত করেছিল।

পত্রিকা: আপনার কি লাভ ম্যারেজ?

সোনালি: হ্যা।ঁ ‘সানাই’ ছবির শ্যুটিং করতে অমিতদের বাড়ি আসি। ওদের বাড়িতে সেট ফেলা হয়। তখনই প্রেম।

পত্রিকা: এবং বিয়ে?

সোনালি: হ্যা।ঁ ‘সানাই’ ছবিটার সময় আরেকটা ঘটনা ঘটে। ঠিক সেই সময়ই তরুণ মজুমদার হিন্দি ‘বালিকা বধূ’র জন্য আমাকে ভাবেন, কিন্তু ডেটের কারণে করতে পারিনি।

পত্রিকা: বিয়ের সময় আফসোস হয়নি, ইস্ নায়িকা হওয়াটা হাতছাড়া হয়ে গেল? ‘বসন্ত বিলাপ’, ‘প্রক্সি’ মানে অপর্ণা সেনকে নিয়ে সেই সময় যে সব কমার্শিয়াল ছবি তৈরি হচ্ছিল, ও রকম তো আপনিও করতে পারতেন। অপর্ণা নিজে যেমন এখন কঙ্কণাকে নিয়ে ছবি করছেন?

সোনালি: এক মুহূর্তের জন্যেও মনে হয়নি। অনেস্টলি বলছি, আমি জীবনটা হেসে খেলে সুখে কাটাতে চেয়েছিলাম। আর আমি তাতে সফল।

হয়তো আপনারা জানেন, আমার শ্বশুরবাড়ি অসম্ভব রক্ষণশীল পরিবার। বাগবাজারের ‘বসুবাটি’। আমার শ্বশুরবাড়ি থেকেই রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বঙ্গভঙ্গ আন্দোলনের সময় রাখি উৎসবের সূচনা করেন। বিবেকানন্দ, রামকৃষ্ণদেবের পায়ের ধুলো পড়েছে এই বাড়িতে। ‘কথামৃত’তেও উল্লেখ আছে।

পত্রিকা: কাজেই সাতপাঁচ দেখে আপনার নায়িকা হওয়ার স্বপ্ন চুরমার। বড়লোক বাড়ির আদুরে বৌমা হয়েই খুশি?

সোনালি: আপনি এই বলছেন? বাবা তখন অমল পালেকর, মমতাশঙ্কর, রাখিকে নিয়ে ‘কলঙ্কিনী’ করছেন, অমল আমাকে মুম্বই যেতে বললেন, আমি গেলাম না। ধ্যুৎ, দুপুরের ঘুমটা না হলে আমার চলে না বাপু।

পত্রিকা: বাহ্, বেশ অলস তো আপনি? আচ্ছা আপনার শ্বশুরবাড়ি যদি এত ধনী না হত, তা হলে কী করতেন?

সোনালি: কী না হলে কী করতাম তা তো বলতে পারব না। তবে হ্যাঁ, আমি খুব প্যাম্পার্ড। আদুরে। এই তো ক’দিন আগে দুবাইয়ে একটা বিশাল আলমারি পছন্দ হল, বর বলল ‘কী করছ’, আমি নাছোড়বান্দা হয়ে কিনেই নিলাম।

পত্রিকা: এই আদুরেপনা করতে গিয়েই কি কেরিয়ারকে এত অবহেলা?

সোনালি: আমি হয়তো বোঝাতে পারছি না, আমার বাড়িতে ফিল্মের সব মানুষের আনাগোনা...ভাবুন না, বাবার সিনেমার গানগুলো, ‘বসন্ত বিলাপ’-এর ‘ও শ্যাম যখন তখন’ কিংবা, ‘মর্জিনা আবদুল্লা’র ‘হায় হায় প্রাণ যায়’ কিংবা আরও আরও সব হিট গান যেগুলো হয়েছে, সব কিছুর রিহার্সাল আমাদের বাড়িতে হত। হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, মান্না দে, সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, সলিল চৌধুরীদের বৈঠকি আড্ডা বসত। আর হেমন্তকাকু মাঝে মাঝেই ভোরবেলা চলে আসতেন আমাদের বাড়ি। এক বার তো নতুন পুজোর রেকর্ড আমাকে গিফ্ট করতে এলেন, আমি ঘুমোচ্ছি...ঘুম থেকে তুলে বললেন আগে ব্রাশ কর, তার পর আয়। তো ব্রাশ-টাশ করে গেছি, আমাকে পুজোর উপহারটা দিলেন। লং প্লেয়িং-এর উপরে সইও করে দিলেন। সেই রেকর্ড আমি আজও রেখে দিয়েছি।

তো এই রকম ছিল পরিবেশ, ফলে সিনেমা যে জীবনের থেকে আলাদা, আমার কখনও মনেই হয়নি। আর আজও যখন সিদ্ধান্ত নিলাম, ছবি করব, তখন একটু ভয় ভয়ই করছিল। কিন্তু শৈবালদার (মিত্র) ফ্লোরে গিয়ে মনে হল, নাহ্ সবই তো এক আছে। ক’টা বছর একটু বিরতিতে ছিলাম শুধু।

পত্রিকা: এর পর হাতে আর কী ছবি?

সোনালি: কিছু নেই। এটা পছন্দ হল করলাম। তবে আমি খামখেয়ালি নই। যথেষ্ট অরগানাইজড। যদি বলি করব, তো করব। যেমন এখন ঠিক করেছি আবার ছবি করব।

পত্রিকা: ‘শজারুর কাঁটা’র কাজ তো শেষ। এ বার?

সোনালি: আমার ছেলের বৌ ফরাসি মেয়ে। ক’দিন বাদেই বৌমার সঙ্গে প্যারিস যাচ্ছি ওঁর নব্বই বছর বয়সি দিদিমার সঙ্গে দেখা করতে। খুব সাহসী মহিলা ওর দিদিমা। আমার মেয়ে আবার চেন্নাই থেকে চলে আসবে কলকাতায় বাবাকে সঙ্গ দিতে।

দিব্যি আছি।

পত্রিকা: ওরে বাবা, নায়িকা না হয়েও তো নায়িকাদের মতো জীবনযাপন।

সোনালি: তা বলতে পারেন। গরমের সময়ে শীতের দেশে, আর শীতের সময়ে ভারতে থাকি। আর হ্যাঁ, আমার একটা শখ আছে, আমি ওয়াইল্ড লাইফ ফটোগ্রাফি করি। ক’দিন আগে একটা লেপার্ডের এমন ছবি পেয়েছি না...

পত্রিকা: দেখুন আপনার বাবার প্রথম প্রেম ছিল ক্যামেরা, আর আপনারও সেই ধাত...

সোনালি: জিন ব্যাপারটা থাকেই বোধহয়। আর নায়িকাচিত জীবনযাপন বলছেন? জানেন বাবার কাছেই শুনেছি ‘হাটে বাজারে’র শ্যুটিঙের সময় বাবারা যখন ডুয়ার্সের ‘রেড ব্যাঙ্ক টি এস্টেটে’ থাকতেন তখন বৈজয়ন্তীমালা শ্যুটিং শেষে কী ভাবে বাংলোয় ফিরতেন? ফিরতেন হাতির পিঠে চেপে। পাশে পাশে জিপ থাকত, যদি ইচ্ছে হয় নেমে পড়বেন। উনি কিন্তু রিল্যাক্স করতেন ওই ভাবে। দুলে দুলে। মাহুত-টাহুত সব থাকত।

ওঁর সঙ্গে ক’দিন আগেই দেখা হল আমার। চেন্নাইতে। ওয়ার্ল্ড ক্র্যাফ্ট কাউন্সিলের একটা অনুষ্ঠানে আমিও গেছি কাজে। বৈজয়ন্তী মালাও এসেছেন। আমার তো দেখেই কথাটা মনে পড়ে গেল। আমি নিজে গিয়ে বাবার কথা বললাম। খুব খুশি হলেন। বললেন, ‘‘মাত্র একটা বাংলা ছবি করেছি ‘হাটে বাজারে’, আর সেই ডিভিডি-টাই নেই আমার কাছে, জানো... ।” আমি বললাম, আমি পাঠিয়ে দেব। কলকাতায় ফিরে পাঠিয়েও দিলাম।

পত্রিকা: আপনি আবার ক্রাফ্ট কাউন্সিলের সঙ্গেও যুক্ত নাকি?

সোনালি: হ্যাঁ, এনজিও-র সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনেক কাজ করি। ক্রাফ্টম্যানদের জন্য অর্থ সংগ্রহ থেকে তাদের জিনিস কী ভাবে ঠিক দামে বিক্রি হবে, সে সব দেখি।

পত্রিকা: মানে ঠিক গড্ডালিকা প্রবাহের বৌমাটি আপনি নন?

সোনালি: (হাসি) দিনে দিনে নিজেকে তৈরি করেছি।

পত্রিকা: সেকেন্ড ইনিংস শুরু করলেন, যদি টিভি সিরিয়ালের অফার আসে? আপনার মতো টলটলে মুখ তো পাওয়া মুশকিল।

সোনালি: মেগা সিরিয়ালের অফার আমার এসেছে। আমি করব না। অত সময়-টময় দিতে পারব না। এর মধ্যে বিবিসি-তে একটা রান্নার শো করেছি। হ্যাঁ, রান্নার শো করতে পারি, তবে ওই সেটের মধ্যে নয়, টিএলসি-র মতো যদি দেশ-বিদেশ ঘুরে ঘুরে হয়, তো করব।

পত্রিকা: আর সিনেমা?

সোনালি: ঋতুপর্ণ আমাকে অনেক বার বলেছিল। অপর্ণামাসি তো আমাকে দিয়ে ‘সানন্দা’র জন্য প্রচুর মডেলিং করিয়েছে এক সময়ে, কিন্তু জানত আমি ছবি করব না, তবে এখন আমি খুব বেছে ছবি করব। চরিত্র ও স্ক্রিপ্টটা খুব ভাল হতে হবে।

পত্রিকা: ইদানীং পরিচালকদের মধ্যে কাদের ছবি ভাল লেগেছে?

সোনালি: সৃজিতকে তো কলেজ জীবন থেকেই চিনি পারিবারিক সূত্রে। দারুণ ট্যালেন্টেড। ওর ছবি ভাল লাগে। ওকে বলব পুরুষকেন্দ্রিক ছবি থেকে বেরিয়ে একটু মহিলাদের নিয়েও ভাবো। ভাল লেগেছে ইদানীংকালে ‘শব্দ’ ছবিটা। কৌশিকও দারুণ। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ও ঠিকঠাক।

পত্রিকা: আর হালের ক্রেজ? রাজনীতি?

সোনালি: মুনমুন, দেব, তাপস, শতাব্দী, দেবশ্রী, চিরঞ্জিতকে আমার অভিনন্দন, তবে আমার দ্বারা ওটিও হবে না।

পত্রিকা: আচ্ছা আপনি জানেন, আবারও ‘দেবী চৌধুরাণী’ হচ্ছে?

সোনালি: শুনেছি। এ প্রসঙ্গে একটা কথা মনে পড়ে যাচ্ছে, আমার বাবা যখন ‘দেবী চৈধুরাণী’ করবেন ভাবেন, তখন সো-জা চলে যান সত্যজিৎ রায়ের কাছে। বলেন আমি করতে চলেছি, আপনার আপত্তি নেই তো? কেননা এক সময়ে মানিককাকু করতে চেয়েছিলেন ছবিটা সুচিত্রামাসিকে নিয়ে। তো মানিককাকু বাবাকে সস্নেহে বলেন, ‘সে কী! আমি আপত্তি করব কেন?’...তো এই রকম ছিল সম্পর্কগুলো। ছিল সৌজন্যবোধ।

শুনলাম ঋতুপর্ণা সেই চরিত্র করতে চলেছে। হয়তো ও আমার কথা ভুলে গেছে। কিন্তু যদি ওর আমার কথা মনে পড়ে এবং আমার কাছে পরামর্শের জন্য আসে, তা হলে ওঁকে সব রকম সাহায্য করার জন্য আমার হাত বাড়ানো রইল। এই সৌজন্যতাবোধ আমি পারিবারিক ভাবে পেয়েছি, আর সেটা আমি আজীবন রক্ষা করতে চাই।

nibedita dey sonali gupta basu
Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy