প্রশ্ন: বলা নেই, কওয়া নেই, দুম করে হার্ট অ্যাটাক। এমনটা আজকাল প্রায়ই শুনছি। সে মুহূর্তে তো দিশেহারা অবস্থা...
উ: আগে কোনও না কোনও সমস্যা ঠিকই ছিল। সেটাকে নিশ্চয়ই এড়িয়ে গেছেন। হয়তো বুকে ব্যথা হয়েছিল। গুরুত্ব দেননি।
প্রশ্ন: বুকে ব্যথা-জ্বালা অম্বল-গ্যাসের জন্য হরদমই তো লেগে থাকে। হার্টের জন্য হচ্ছে, বুঝব কী করে?
উ: ব্যথার ধরনটা বুঝতে হবে।
প্রশ্ন: কী রকম?
উ: হার্টের সমস্যা হলে এক দম বুকের মাঝখানে চাপ ধরা ব্যথা হবে। মনে হবে বুকে কেউ একটা বেল্ট শক্ত করে বেঁধে দিয়েছে। ব্যথাটা ঘাড় বা পিঠ বা বাঁ-হাতের দিকে যেতে পারে।
প্রশ্ন: বাড়িতে এত কিছু বুঝতে পারব?
উ: ঠিক পারবেন। সঙ্গে যদি প্রচণ্ড ঘাম বা শ্বাসকষ্ট হতে থাকে, তবে তো কথাই নেই। বুঝে নিতে হবে ব্যাপারটা হার্ট অ্যাটাকের দিকে গড়াচ্ছে। মুখ ফ্যাকাশে বা কালচে হয়ে যেতে পারে। হাত-পা ঠান্ডা হয়ে আসে। অনেক সময় বুকে ব্যথা না হয়ে ওপর পেটে ব্যথা হতে পারে। আবার অনেকের বুকে-পেটে-পিঠে কোনও ব্যথা নেই। ব্যাথা হয় দাঁতে।
প্র: মানে দাঁতে ব্যথা হলেও হার্টের ডাক্তারের কাছে ছুটতে হবে?
উ: না না, তা নয়। যদি দেখেন বার বার দাঁতে ব্যথা হচ্ছে, খেলে পরেই ব্যথা বাড়ছে, অথচ দাঁতের ডাক্তার কিছু খুঁজে পাচ্ছেন না, তবে সতর্ক হতে হবে। দাঁতে মনে হলেও ব্যথাটা হয়তো হচ্ছে চোয়ালে।
প্রশ্ন: বাব্বা, বুকে ব্যথা হলে না হয় বোঝা গেল, কিন্তু পেট ব্যথা হলে কী করে বুঝব সমস্যাটা হার্টের?
উ: আপনি কেন, বিশেষজ্ঞ ছাড়া অন্য ডাক্তাররাও এটা ধরতে পারেন না। এ সব ক্ষেত্রে অনেকেই স্থানীয় ডাক্তার ডাকেন। তাঁরাও অনেক সময় একে গ্যাসের ব্যথা ভেবে নিয়ে সেই ধরনের ওষুধ দিয়ে রেখে দেন। তাতে পরে বড় বিপদ হতে পারে।
প্রশ্ন: তবে?
উ: যদি দেখেন ওপর পেটে ব্যথা হচ্ছে, অস্বস্তি, হাঁসফাঁস অবস্থা, ভারী কিছু খাওয়ার পর অস্বস্তি বাড়ছে, গ্যাসের ওষুধ খেয়েও পেটের অস্বস্তি কমছে না, পাশাপাশি পালসটা খুব দ্রুত চলছে, শ্বাসকষ্ট হচ্ছে, তবে সেটা ফেলে রাখবেন না।
প্রশ্ন: তখন বাড়িতে কী করব?
উত্তর: তক্ষুণি রোগির একটা ইসিজি করা দরকার। তাতে গোলমাল কিছু পাওয়া গেলে সঙ্গে সঙ্গে কাছাকাছি কোনও হাসপাতালে যেতে হবে।
প্রশ্ন: ধরুন সমস্যাটা মাঝ রাতে হল। তখন বললেই তো আর চট করে হাসপাতালে পৌঁছে যাওয়া যায় না।
উ: সে জন্য একটা ইসিজি আর ট্রপ-টি নামের একটা ব্লাড টেস্ট করে নিতে হবে। সেটাই বলে দেবে আপনার সত্যি সত্যি হাসপাতালে পৌঁছনোর দরকার আছে কি না।
প্রশ্ন: বাড়িতে ব্লাডটেস্ট?
উ: তেমন কঠিন কিছু না। ওষুধের দোকানে কিট পাওয়া যায়। সেটা কিনে আনলেই হবে। ঠিক যেমন বাড়িতে অনেকে নিজে নিজেই সুগার পরীক্ষা করেন। সে রকমই। ট্রপ-টি’র ফলাফলই বলে দেবে আপনাকে সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালে ছুটতে হবে কি না। আর ইসিজির রিপোর্টটা আপনার কার্ডিয়োলজিস্টের কাছে মেল করে পাঠিয়ে দিন। সেটা দেখে তিনিও বলে দেবেন ব্যাপারটা কতখানি গুরুতর।
প্রশ্ন: কতক্ষণের মধ্যে পৌঁছতে হবে?
উত্তর: যত তাড়াতাড়ি সম্ভব। অন্তত ২-৩ ঘণ্টার মধ্যে হাসপাতালে ঢুকতেই হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে যদি পৌঁছতে না পারি?
উ: সে ক্ষেত্রে ১৫০ মিলিগ্রামের দুটো অ্যাসপিরিন ট্যাবলেট জলে গুলে খাইয়ে দিন। আর একটা সরবিট্রেট জিভের তলায় দিয়ে রাখুন।
প্রশ্ন: এতে সমস্যা হবে না তো?
উ: কিচ্ছু হবে না।
প্রশ্ন: কিন্তু হাসপাতালে গেলেই যে সঙ্গে সঙ্গে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার পাব, তারও তো কোনও গ্যারান্টি নেই।
উ: যে কোনও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে চলে যাবেন। তবে সমস্যা থাকুক আর না থাকুক, আগেভাগেই খোঁজ নিয়ে জেনে রাখুন, আপনার বাড়ির আশপাশে কোন হাসপাতালে গেলে সঙ্গে সঙ্গে পরিষেবার ব্যবস্থা আছে। জানা থাকলে দরকারের সময় হাতড়াতে হবে না।
প্রশ্ন: শুনেছি ডায়বেটিস থাকলে নাকি এ ধরনের ব্যথা-ট্যাথা বা তেমন টের পাওয়া যায় না?
উ: হ্যা।ঁ ডায়বেটিকরা অ্যানজাইনাল পেন বুঝতে পারেন না।
প্রশ্ন: তবে তাঁরা কী করবেন?
উ: ব্যথা বুঝতে পারেন না ঠিকই, কিন্তু ডায়বেটিস থাকলে শ্বাসকষ্ট, হাঁপিয়ে ওঠা এ ধরনের সমস্যা টের পাওয়া যায়। যদি দেখেন আগে বাড়ি থেকে বাসস্ট্যান্ড আরামসে চলে যেতেন, এখন সেই রাস্তাই যেতে দু-বার থামতে হচ্ছে, তবে ব্যাপারটা ফেলে রাখবেন না। একটা কথাই বলার, কবে বুকে চাপ ধরা ব্যথা দেখা যাবে, সে অপেক্ষায় থাকবেন না। স্বাভাবিক জীবনযাপনে অসুবিধে শুরু হলেই সতর্ক হবেন। ৪০ পেরোলেই বছরে একটা হেল্থ চেক-আপ করাবেন। বাড়িতে কারও হার্টের সমস্যা থাকলে বা কোলেস্টেরল, প্রেসার, সুগার ধরা পড়লে ৩৫ এর পর থেকেই এটা করতে হবে।
প্রশ্ন: হেলথ চেক-আপ’এ কী কী করতে হবে?
উ: ইসিজি, ইকোকার্ডিয়োগ্রাম আর ট্রেডমিল টেস্ট করতে হবে। আর আয়েসি শহুরে জীবনযাপনে অভ্যস্ত হলে একটা কার্ডিয়াক সিটি স্ক্যান করতে পারলে ভাল হয়।
প্রশ্ন: হার্টের অসুখ ধরা পড়লে কত দিন অন্তর অন্তর ডাক্তার দেখাব?
উ: সেটা রোগীর ওপর নির্ভর করে। সিঁড়ি দিয়ে ওঠানামা করতে কষ্ট হলে, একটুতেই হাঁপিয়ে পড়লে, প্রয়োজন বুঝে ডাক্তার দেখাবেন। নইলে বছরে এক বার॥
প্রশ্ন: হার্ট ভাল রাখতে কী কী করব?
উত্তর: রোজ কুড়ি মিনিট থেকে আধ ঘণ্টা এক্সারসাইজ করবেন। অনেকে নিয়মিত যোগব্যায়াম করেন। সেটা খুবই ভাল। কিন্তু হার্ট ভাল রাখতে চাই ঘাম ঝরানো এক্সারসাইজ।
প্রশ্ন: সাঁতার?
উ: সাঁতার সবচেয়ে ভাল। নইলে জগিং, ট্রেডমিল।
প্রশ্ন: আর কী করতে হবে?
উ: আপনার রান্নাঘরেও কিছু বদল আনতে হবে।
প্রশ্ন: মানে?
উ: মাসে তেলের খরচ কমাতে হবে। দুই জনের পরিবার হলে মাসে ১.২ লিটারের বেশি তেল যেন খরচ না হয়, সে দিকে নজর রাখতে হবে।
প্রশ্ন: তা কী তেল খাব?
উ: সব ধরনের তেল মিলিয়ে মিশিয়ে খাবেন। পরিমাণটাই আসল। হার্টকে ভাল রাখতে বাঙালির তেলেঝোলে মাছ খাওয়াটা ছাড়তে হবে।
প্রশ্ন: কিন্তু মাছ তো ভাজতেই হবে?
উ: সেটাই তো সমস্যা। মাছ ভাজলে তার খাদ্যগুণটাই তো চলে গেল। মাছের তেল হার্টের জন্য খুব ভাল। অথচ সেটাও তেল দিয়ে ভেজে তবে খাওয়া হয়। সেটা করবেন না। আর দুই বেলা ভাত খাওয়া ছাড়তে হবে। মোদ্দা কথা রোজকার খাবারে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দিতে হবে। গ্রোয়িং এজের পর থেকে আর খাঁটি দুধ খাওয়াটা বন্ধ করতে হবে। ডাবল টোনড দুধ খাবেন।
প্রশ্ন: আর কিছু?
উ: ধূমপান একেবারেই চলবে না। আর হার্টকে ভাল রাখতে নিজে নিজে ডাক্তারি করবেন না
প্রশ্ন: মানে?
উ: অনেকে ঠিক মতো ওষুধ খান না। প্রেসার আছে, পাড়ার ওষুধের দোকানে মাঝে মাঝে প্রেসার মাপান। কম থাকলে ওষুধ বন্ধ করে দেন। সেটা করবেন না।
প্রশ্ন: বাড়িতে কারও হার্টের সমস্যা থাকলে হাতের কাছে কী কী রাখব?
উত্তর: ১৫০ মিলিগ্রামের দুটো অ্যাসপিরিন, সরবিট্রেট আর প্রেসারের ওষুধ।
প্রশ্ন: আর ব্লাড প্রেসার মাপার যন্ত্র?
উত্তর: হাই প্রেসার থাকলে নিয়মিত প্রেসার মাপা দরকার। সে ক্ষেত্রে বাড়িতে একটা যন্ত্র থাকলে ভাল। তাতে পালস রেটও দেখা যাবে। হার্টের সমস্যা হলে পালস দ্রুত চলতে থাকে। পালস দেখেই আগেভাগে সতর্ক হতে পারবেন।
যোগাযোগ-৯৮৩৬৩১৬৫৫৮
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy