প্রতীকী ছবি।
মানুষ সারা জীবন অর্থ উপার্জন করেন। সেই অর্থ লাগে তাঁর সাংসারিক কাজে, শখ পূরণ ইত্যাদিতে। কিন্তু তার পরে? বয়স কালে, কাজ করতে অপারগ, এমন অবস্থাতে যখন অবসর নিতে হবে, তখন আর্থিক চাহিদা পূরণ হবে কী ভাবে? তাই উপার্জন করছেন এমন অবস্থাতেই সমস্ত ঘুঁটি সাজিয়ে রাখতে হয়। অবসরকালীন জীবন কী ভাবে কাটাবেন তা আগে থেকেই ভেবে রাখা প্রয়োজন।
সরকারি ক্ষেত্রে চাকরিজীবীরা অন্তত এক দিক থেকে চিন্তামুক্ত। কারণ তাঁরা তাঁদের কর্মজীবন শেষ হওয়ার পরে একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের পেনশন পাবেন। তাঁদের ক্ষেত্রে চিন্তা একটু কম হলেও, বেসরকারি বা অসংগঠিত ক্ষেত্রে যাঁরা কাজ করেন তাঁদের অবশ্যই উচিত কর্মজীবন চলাকালীন অবসর জীবনের পরিকল্পনা করে রাখা।
অবসরের সময় স্বচ্ছল ভাবে কাটানোর জন্য কয়েকটি বিষয় অবশ্যই মনে রাখা প্রয়োজন। কী সেগুলি?
১। অবসর জীবন বেশ দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থায়ী হয় বা হতে পারে। সেই কথা মাথায় রেখেই কর্মজীবনের আর্থিক পরিকল্পনাগুলিতে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে।
২। আয়, বিনিয়োগ, ব্যায় ও সর্বোপরি সঞ্চয়— এই বিষয়গুলিতে সঠিক সময়ে সঠিক ও গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
৩। যদি ব্যায় কোনও ভাবে আয়কে ছাড়িয়ে যায় তবে যতটা দ্রুত সম্ভব বিভিন্ন উপায়ে শূন্যস্থান পূরণ করতে হবে।
৪। বিনিয়োগই বদলে দিতে পারে ভবিষ্যতের রূপরেখা। তাই বিনিয়োগ করার সময় অত্যন্ত ধীর ও স্থির ভাবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
মনে রাখবেন, পরিকল্পনা ছাড়া বিনিয়োগ করা অনেকটা অচেনা প্রদেশে দিকভ্রান্ত পথিকের ঠিকানা খোঁজার মতো ব্যাপার। তাই সঠিক ও নির্দিষ্ট লক্ষ্য ঠিক করে নেওয়া অত্যন্ত প্রয়োজন। সেই লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য সঠিক পথে নির্ভুল পরিকল্পনা করুন। প্রয়োজনে কোনও বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নিন।
মনে রাখবেন, ভুল পথে বিনিয়োগ করলে তার ফল হতে পারে ভয়ঙ্কর। বিনিয়োগে একটি ভুল সিদ্ধান্তের ফলে বড় মাপের মাশুল গুনতে হতে পারে আমানতকারীদের। এই বিষয়ে কিছু অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ মনে রাখা প্রয়োজন।
বিনিয়োগের আগে থাকুক পরিকল্পনা: পরিকল্পনা ছাড়া অবসরকালীন সময়ের জন্য বিনিয়োগের পথে একেবারেই চলা উচিত নয়। বিনিয়োগের জন্য উপযুক্ত পরিকল্পনা থাকতেই হবে। প্রথমেই বিনিয়োগের আগে নিজের জীবনের নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে দিয়ে কিছু লক্ষ্য স্থির করে নিন। যেমন সন্তানের উচ্চশিক্ষা, নতুন বাড়ি, গাড়ি বা ভ্রমণ বাবদ খরচ ইত্যাদি। একটি নীল নকশা তৈরি করে রাখুন যে কোন সময়ে কতটা অর্থের প্রয়োজন। এবং সেই নির্দিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছনোর জন্য পরিকল্পনা করতে হবে। বিনিয়োগের আগে অবশ্যই ভাল করে বাজার যাচাই করে নিন।
সব টাকা একই জায়গায় নয়: একই জায়গায় জড়ো করছেন নিজের কষ্টার্জিত অর্থ? বিশেষজ্ঞদের মতে, তা না করাই সুবিবেচনার পরিচয়। সব সময় বিভিন্ন ফান্ডে টাকা ভাগ করে রাখা উচিত। এর ফলে ঝুঁকির হাত থেকে রেহাই পাওয়ার পথগুলি খোলা থাকে। এক জায়গায় টাকা না রেখে বিভিন্ন জায়গায় বিনিয়োগ করতে হবে। এর ফলে কোনও একটি ফান্ডে লোকসান হলেও অন্য কোনও ফান্ডে হওয়া লাভ আপনাকে এগিয়ে রাখবে।
সিদ্ধান্তে আবেগকে প্রশ্রয় নয়: আর্থিক বিনিয়োগের সময় অত্যন্ত বাস্তববাদী থাকুন। বিনিয়োগের পোর্টফোলিয়ো তৈরির সময় আবেগে ভেসে গিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত নয়। ক্ষতির সম্মুখীন হলে সেখানে টাকা আটকে রাখার প্রয়োজনও নেই। সত্ত্বর সেই জায়গা থেকে টাকা উঠিয়ে ফেলুন। সেই জায়গায় টাকা রেখে দিলে পরবর্তীকালে আরও বড়সড় ক্ষতি হতে পারে। তাই বুঝে শুনে, ঠান্ডা মাথায় সিদ্ধান্ত গ্রহণ করুন।
বিশ্বের আর্থিক অবস্থার বিষয়ে ধারণা: বিশ্ব অর্থনীতির প্রতি নজর রাখুন। বিনিয়োগের পোর্টফোলিয়ো তৈরির সময় পারিপার্শ্বিক অর্থনীতির প্রভাব, এমনকি বিশ্ব অর্থনীতির প্রভাব কী রূপ হতে পারে সেই বিষয়ে বিস্তর ধারণা রাখা দরকার। কারণ এটি আপনার পোর্টফোলিয়োটিকে ভীষণ ভাবে প্রভাবিত করতে পারে।
ধৈর্য রাখতেই হবে: বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ধৈর্যশীল থাকা অত্যন্ত প্রয়োজন। অর্থ বিনিয়োগ করার পর পরই যদি বিস্তর অঙ্কের লাভের স্বপ্ন দেখেন তা হলে কিন্তু সমস্যার বিষয়। কারণ যে কোনও বিনিয়োগই ধীরে ধীরে বাড়তে থাকে। কোনও একটি ভাল জায়গায় বিনিয়োগের পর লগ্নি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত বা উত্তেজিত হওয়ার প্রয়োজন নেই। ক্ষতির সম্মুখীন হলে খুব বেশি ঘাবড়ে গিয়ে কোনও ভুল পদক্ষেপ না করাই কাম্য। নিজেকে ধৈর্যশীল বিনিয়োগকারী হিসেবে গড়ে তোলা দরকার। আখেরে তাতে অবসরকালে যথেষ্টই বড় অঙ্কের টাকা আসবে।
বিনিয়োগের বিষয়টি অত্যন্ত সহজ। আবার কঠিনও। এ ক্ষেত্রে সঠিক তথ্য, তথ্য বিশ্লেষণ এবং সেগুলি যাচাই করে নিতে হবে। এক বার সে সব সম্পন্ন হলে অবসরের চিন্তা থেকে অনেকটাই মুক্ত হতে পারবেন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy