Advertisement
০৭ মে ২০২৪
Presents
আইন আদালত

আইন আদালত

আমার নিজের নামে একটি বাড়ি রয়েছে। গত ১০ বছর ধরে আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে (মেয়ের বয়স ২০ বছর) তাঁর বাবার বাড়িতে থাকছেন। যদিও ডিভোর্স হয়নি। এই অবস্থায় আমি চাই, ওই বাড়ি আমার ভাইকে দিয়ে দিতে। এখন আমার প্রশ্ন, কী ধরনের কাগজ (যেমন দানপত্র, রেজিস্ট্রি করে দেওয়া ইত্যাদি) তৈরি করতে হবে, যাতে আমার স্ত্রী ও কন্যা ভবিষ্যতে ওই বাড়িটি ভাইয়ের কাছে দাবি করতে না পারে?

শেষ আপডেট: ১০ এপ্রিল ২০১৪ ০১:৫০
Share: Save:

• আমার নিজের নামে একটি বাড়ি রয়েছে। গত ১০ বছর ধরে আমার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে (মেয়ের বয়স ২০ বছর) তাঁর বাবার বাড়িতে থাকছেন। যদিও ডিভোর্স হয়নি। এই অবস্থায় আমি চাই, ওই বাড়ি আমার ভাইকে দিয়ে দিতে। এখন আমার প্রশ্ন, কী ধরনের কাগজ (যেমন দানপত্র, রেজিস্ট্রি করে দেওয়া ইত্যাদি) তৈরি করতে হবে, যাতে আমার স্ত্রী ও কন্যা ভবিষ্যতে ওই বাড়িটি ভাইয়ের কাছে দাবি করতে না পারে?

শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা

একজন মানুষ যে কোনও অবস্থাতেই তাঁর নিজের সম্পত্তি পছন্দসই কোনও মানুষকে দিয়ে যেতে পারেন। আপনার নামে যে-বাড়ি রয়েছে, তা আপনার কোনও আত্মীয়কে দিয়ে যেতে পারেন। কোনও বন্ধুকে, অনাত্মীয়কে, এমনকী কোনও সংস্থাকেও দিয়ে যেতে পারেন। তবে এই ‘দিয়ে যাওয়া’টা হতে হবে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এবং নিখুঁত।

আপনি ওই সম্পত্তি (এ ক্ষেত্রে বাড়ি) ভাইকে ‘রেজিস্টার্ড দানপত্র’ করে দান করে দিতে পারেন। ‘দানপত্র’ রেজিস্ট্রি করার মাধ্যমে বাড়িটি ভাইকে দান করে দিলে ব্যাপারটা শক্তিশালী হবে এবং ভবিষ্যতে আপনার স্ত্রী ও কন্যা ভাইয়ের কাছে বাড়িটি দাবি করতেও পারবেন না।

তবে যখন দানপত্র স্বাক্ষর করবেন, তখন কিন্তু সম্পত্তিও হস্তান্তরিত হয়ে গেল। অর্থাৎ আপনার জীবদ্দশাতেই সম্পত্তি হস্তান্তরিত হয়ে যাবে। যে কারণে তা করার আগে খুব ভাবনা-চিন্তা করে তবেই করবেন।

• স্বামীর কাছ থেকে স্ত্রীদের খোরপোষ পাওয়ার ক্ষেত্রে বর্তমান আইনি পরিস্থিতি নিয়ে জানতে চাই। যদি এমন দেখা যায় যে, কোনও স্ত্রীর আলাদা রোজগার রয়েছে এবং তিনি দৈনিক ৫০ হাজার টাকা খরচ করার মতো ক্রেডিট লিমিট সম্পন্ন ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করছেন, সে ক্ষেত্রে এটি কি বিশ্বাসযোগ্য যে, মাসে আড়াই হাজার টাকা রোজগারের একজন মহিলাকে ব্যাঙ্ক ওই ক্রেডিট লিমিট সম্পন্ন ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে?

স্বপনকুমার চক্রবর্তী

প্রথমেই বলি, প্রতিটি ঘটনার বা মামলার প্রেক্ষিত আলাদা হয়। আইন-প্রণেতারা যখন খোরপোষ সংক্রান্ত ধারাগুলি প্রণয়ন করতে চলেছিলেন, তখন তাঁরা কিন্তু মহিলা, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধাদের সামাজিক সুরক্ষারই বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন।

মনে রাখতে হবে, মেনটেন্যান্স বা খোরপোষ সংক্রান্ত ধারাগুলি প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য হল সেই মহিলাদের সুরক্ষা দেওয়াযাঁদের নিজেদের ও সঙ্গের সন্তানদের ভরণপোষণের জন্য কোনও নিজস্ব রোজগার নেই। অর্থাৎ, স্বামীর রোজগারের দিকেই তাকিয়ে থাকতে হয়। এই আইন প্রণয়নের মূল উদ্দেশ্য ছিল একজন স্ত্রীকে সন্তানদের নিয়ে অভুক্ত থাকতে না হয় বা ভবঘুরে জীবনযাপন করতে না হয়। স্ত্রী ও সন্তানদের প্রতি এবং বাবা-মা’র প্রতিও একজন মানুষকে তাঁর নৈতিক দায়িত্ব পালনে বাধ্য করার জন্যই এই আইন।

সাধারণ ভাবে ফৌজদারি কার্যবিধিতে ১২৫ নং ধারা এবং হিন্দু বিবাহ আইনে ২৪ নং ধারাতে একজন মহিলা ওই খোরপোষ/অ্যালিমনি পাওয়ার জন্য নির্ধারিত আদালতের শরণাপন্ন হতে পারেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নং ধারার ৪ নং উপধারায় পরিষ্কার বলা আছে যেযদি কোনও মহিলা বিবাহ বহির্ভূত জড়িয়ে না-পড়েন বা কোনও যুক্তিগ্রাহ্য কারণ ছাড়াই স্বামীর সঙ্গে থাকতে অস্বীকার না করেন, তা হলে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ নং ধারা অনুযায়ী খোরপোষ অবশ্যই পাবেন। আবার যাঁর কাছে খোরপোষ চাওয়া হচ্ছে, তাঁর ক্ষেত্রে তিনটি উল্লেখযোগ্য বৈশিষ্ট্য হল

১) যিনি খোরপোষ দেবেন তাঁর রোজগার কতটা।

২) তিনি তাঁর স্ত্রী বা সন্তানদের প্রতি অবহেলা করছেন বা সঠিক প্রতিপালন করছেন না।

৩) স্ত্রী-সন্তানেরা তাঁদের নিজেদের প্রতিপালনে অক্ষম।

হিন্দু বিবাহ আইনের ২৪নং ধারায় শুধু খোরপোষই নয়, একজন স্ত্রী মামলা চালানোর খরচও পেতে পারেন। আবার বিশেষ বিবাহ আইনের ৩৬ নং ধারায় অ্যালিমনি পেনডেন্টিলিটে-র কথা বলা আছে। প্রতিটি মামলার বৈশিষ্ট্য আলাদা আলাদা। এই ধরনের প্রতিটি খোরপোষের মামলারও বৈশিষ্ট্য, বক্তব্য, যন্ত্রণা, অনুভূতিও আলাদা আলাদা হয়। যিনি বিচারক বা বিচারপতি হন, তিনিও প্রতিটি মামলার পুঙ্খানুপুঙ্খ বিচার করে তবে রায় দেন।

প্রথম কথা, আপনি বলেননি আপনার স্ত্রী কি মামলা দায়ের করেছেন? বা তিনি যে মামলা দায়ের করেছেন, তা ফৌজদারি কার্যবিধির ১২৫ ধারার অধীন অথবা হিন্দু বিবাহ আইন বা বিশেষ বিবাহ আইনের অধীন কি না, বা মামলাটি কোন স্টেজে বা স্তরে আছে। যাই হোক, খোরপোষ হবে স্বামীর রোজগারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। স্বামীর সামাজিক অবস্থান ইত্যাদির উপর নির্ভর করবে স্ত্রী কত পরিমাণ খোরপোষ পাবেন। আপনার মাসিক রোজগার কত, সেটা অবশ্যই আদালত বিবেচনা করবে।

পশ্চিমবঙ্গে মাসে লক্ষ লক্ষ টাকা রোজগার করেন এমন স্বামীও যেমন রয়েছেন, তেমনই মাসে সামান্য রোজগার করেন এমন স্বামীও রয়েছেন। আপনার প্রচুর রোজগার। সেই তুুলনায় আপনার স্ত্রী সামান্যই রোজগার করেন, এমন হলেও কিন্তু আপনার স্ত্রী খোরপোষ পেতে পারেন। তবে ব্যাঙ্ক কাকে কী ভাবে ক্রেডিট কার্ড দিয়েছে বা কী রোজগার দেখে দিয়েছে সেই অনধিকার চর্চায় যাব না।

কিন্তু এটা অবশ্যই বলব, আপনার স্ত্রীর যদি আড়াই হাজার টাকা মাসিক রোজগার হয় (অন্তত আদালতে এটাই যদি দেখানো হয়), আর আপনার রোজগার যদি বহু গুণ বেশি হয়, তা হলে কিন্তু আপনার স্ত্রী আপনার কাছ থেকে খোরপোষ পেতেই পারেন। আবার আপনার স্ত্রী দৈনিক ৫০,০০০ টাকা ক্রেডিট লিমিটের ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করেন, এটা আবার আপনার স্ত্রীকে খোরপোষ না-দেওয়ার পক্ষেই যাবে। আপনার প্রশ্ন পড়ে যতটুকু বুঝলাম, ততটুকুরই উত্তর দিলাম। মাননীয় বিচারকের সামনে কী প্রমাণ করতে পারছেন, সেটাই আসল।

আইনি পরামর্শ: জয়ন্ত নারায়ণ চট্টোপাধ্যায়

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

ain adalat
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE